আইসক্রিমের লোভে নাচের ক্লাস করেছি : শাবনূর

‘আমি যখন খুব ছোট, আমার মা আর খালারা প্রায়ই এফডিসিতে আসতেন। কারণ, তাঁদের পরিচিত অনেকে ছিলেন এখানে। একদিন আমার মা আর খালারা এফডিসিতে আসার পরিকল্পনা করছিলেন। আমি তখন বললাম, মা, আমিও তোমার সঙ্গে যাব। তখন মা আমাকে বলেছিল, ওইখানে মোঁচওয়ালা দারোয়ান থাকে। তোমাকে দেখলে তারা জেলখানায় ভরে রাখবে। তখন কী করবে? এ কথা শুনে অনেক ভয় পেয়েছিলাম। আর এফডিসিতে আসিনি।’ পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রিয় মুখ শাবনূর।
গতকাল রোববার এফডিসির ৭ নম্বর ফ্লোরে বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘পাগল মানুষ’ ছবির শুটিং করছিলেন শাবনূর। এম এম সরকারের পরিচালনায় ‘পাগল মানুষ’ ছবিটির কাজ শুরু হয়েছিল। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে ছবির কাজ থেমে যায়। এখন শুধু দুটি গানের কাজ বাকি। কাজগুলো এখন করছেন এম এম সরকারের শিষ্য জনপ্রিয় পরিচালক বদিউল আলম খোকন।
ক্যামেরার সামনে বহুদিন পর এলেও ছবিটি নিয়ে দারুণ আশাবাদী ঢাকাই চলচ্চিত্রের দাপুটে নায়িকা শাবনূর। যে শাবনূরকে তাঁর মা এফডিসিতে নিয়ে আসতে চাননি, সেই শাবনূরকে নিয়ে তাঁর মা এখন কী ভাবেন—প্রশ্ন করতে শাবনূর হেসে বলেন, ‘এখানে আসা নিয়ে আর কী বলবেন, বরং আমাকে নিয়ে গর্ব করেন তিনি।’
প্রায় দুই যুগ আপনি চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। চলচ্চিত্র শিল্প সম্পর্কে মূল্যায়ন কী—জানতে চাইলে বিনয়ের সঙ্গে শাবনূর বলেন, ‘চলচ্চিত্রে কাজের শুরুর দিকে এহতেশাম দাদু আমাকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টানা কিছুদিন ডাবিংয়ের জন্য অপেক্ষা করিয়ে রেখেছিলেন। প্রথম কয়েক দিন আমি কিছু বলিনি। পরে একদিন বিরক্ত হয়ে দাদুকে বলেছিলাম, আমি আর এখানে কাজ করতে পারব না। দিনের পর দিন শুধু ডাবিংয়ের জন্য বসা থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাকে দিয়ে এসব হবে না। তখন দাদু আমাকে বলেছিলেন, এখন থেকে চলচ্চিত্র তোমার ঘরবাড়ি। তার পর আমার ছবি মুক্তির পর দাদু সবাইকে ডেকে নিয়ে বলছিলেন, এই দেখো, আমার প্রথম ছবির নায়িকা। এটা শোনার পর আমি অনেক অনুপ্রাণিত হই এবং নিজের মধ্যে লালন করি, চলচ্চিত্র আমার জীবনের সবকিছু।’
এত জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, নিজের অভিনয় আপনার কেমন লাগে—প্রশ্ন শুনে একটু ভাবলেন শাবনূর, তার পর বললেন, ‘আমার নিজের অভিনয় সবচেয়ে খারাপ লাগে। কারণ আমি মনে করি, এখনো আমি অভিনয় শিখিনি। বারবার মনে হয়, এটা করা ঠিক হয়নি, ওটা করা ঠিক হয়নি। সবাই আমার অভিনয় পছন্দ করলেও আমি এখনো সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমার নিজের প্রতি চাওয়াটা অনেক বেশি। এ জন্য হয়তো এ রকম মনে হয়।’
কোন কাজটি করতে আপনার ভালো লাগে? জবাবে শাবনূর বলেন, ‘আমি মায়ের সেবা করতে পছন্দ করি। মায়ের জন্য কিছু করার পর, মা যখন খুশি হয়, তখন আমার অনেক ভালো লাগে। নিজের এই গুণে মুগ্ধ আমি,’ বেশ তৃপ্তি নিয়ে কথাগুলো বললেন শাবনূর।
মায়ের বকা খেয়েছেন কখনো? চটপট উত্তর দিলেন শাবনূর, ‘খেয়েছি তো! কারণ, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিতে আমি পছন্দ করি। এ জন্য বাসায় ফিরতে আমার রাত হতো। ফেরার পর মা আমাকে বকতেন। আমি চুপচাপ বকা শুনতাম। এই আড্ডা দেওয়ার অভ্যাস কিন্তু এখনো আমার আছে।’
আপনি গান শুনতে অনেক পছন্দ করেন। গান কি গাইতে পারেন? শাবনূর বললেন, ‘আমি কিন্তু খুব মজা করে গান গাই। আমার বোন ঝুমুর তো গান করে। বাসায় সব ধরনের যন্ত্র আছে। প্রায় আমরা সবাই মিলে গানের পার্টি করি। আমি গিটার-কিবোর্ড খুব পছন্দ করি। আমার বোন এসব বাজাতে পারে।’
গানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও নাচের তালিম নিয়েছেন শিক্ষকের কাছ থেকে। ছোটবেলায় নজরুল একাডেমিতে নাচের ক্লাস করতেন শাবনূর। তখনো ভাবেননি, নায়িকা বা নৃত্যশিল্পী হবেন। শাবনূরের যুক্তি, ‘মা বলত নূপুর (শাবনূরের ডাকনাম) বোকা। ওকে দিয়ে কিছু হবে না। মা এ ধরনের কথা বলত কারণ, আমি নাচের ক্লাসে শুধু যেতাম আইসক্রিম খাওয়ার জন্য। বলতে পারেন, আইসক্রিমের লোভে আমি নাচের ক্লাস করেছি। কারণ, মা ক্লাসে নিয়ে যাওয়ার আগে আইসক্রিম কিনে দিত। কিন্তু নাচে আমি সিরিয়াস ছিলাম না। আমার বোন সবকিছুতেই সিরিয়াস ছিল। আমি ছিলাম চঞ্চল।’
সেরা নায়িকা হয়েছেন, কখনো পরিচালনায় আসার ইচ্ছা আছে কি? শাবনূরের জবাব, ‘অবশ্যই আছে। ভালো চিত্রনাট্য পেলে আমি নিয়মিত প্রযোজনাও করতে চাই।’ তাই বলে অভিনয়টা ছেড়ে দেবেন না তিনি। শাবনূর বলেন, ‘সেটাও করব। কিছুদিন পর আমি দুই মাসের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যাব। সেখান থেকে ফিরে আবার অভিনয় করব। এ সময়ের মধ্যে নিজেকে আগের মতো স্লিম করতে চাই। আমি নিয়মিত জিম আর খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হলেই এটা পারব বলে আমার বিশ্বাস। আমি একটু খেতে পছন্দ করি।’
আবারো ফিরছেন শাবনূর রুপালি পর্দায়, বিষয়টি ভক্তদের জন্য সুখবর। শাবনূরও খুশি। দেখা যাক, শাবনূর নতুন কী আকর্ষণ নিয়ে আবারো হাজির হচ্ছেন রুপালি পর্দায়।