সালমানকে আমার অস্তিত্বে অনুভব করি : শাবনূর

আজ ৬ সেপ্টেম্বর। ১৯৯৬ সালের এই দিনে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। মাত্র তিন বছরের চলচ্চিত্র জীবনে তিনি অভিনয় করেছেন ২৭টি ছবিতে। তাঁর প্রথম ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। তাঁর বেশির ভাগ ছবিই দারুণ ব্যবসাসফল হয়েছিল। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের কাছে স্টাইল আইকন হয়ে উঠেছিলেন সালমান।
তাই ১৯ বছর পরও সালমান এখনো বাংলা ছবির দর্শকের কাছে জনপ্রিয়। সালমান শাহর স্মরণে আজকের দিনে চলচ্চিত্রমহল এবং তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে থাকে নানা আয়োজন। সালমানের ১৪টি ছবিতে তাঁর নায়িকা ছিলেন শাবনূর। তিনি মনে করেন, সালমান শাহ তাঁর অস্তিত্বের সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন।
এনটিভি অনলাইনকে নায়িকা শাবনূর বলেন, ‘আসলেই আমি অনেক ভালো একজন বন্ধু পেয়েছিলাম। একজন সহকর্মী পেয়েছিলাম। প্রতিবছর এই দিনটা এলে মনটা ভারী হয়ে যায়, তাঁকে তো আমি আমার অস্তিত্বে অনুভব করি। আজ বাংলাদেশের মানুষ আমাকে এক নামে চেনে। অনেকেই নায়িকা শাবনূর হতে চায়। কিন্তু শাবনূর হতে গেলে সালমানের মতো একজন সহশিল্পীও লাগে। সহশিল্পী যেমন অভিনয় করবে, তার প্রভাব নিজের কাজেও পড়বে। আমি খুব লাকি ছিলাম যে সালমানের মতো একজন শিল্পী পেয়েছিলাম। আর আমি অনেক দুঃখী একটা মেয়ে যে এমন একজন বন্ধুকে হারিয়েছি।’
১৯৯৩ সালের ঈদুল ফিতরের সময় মুক্তি পেয়েছিল সোহানুর রহমান সোহানের ব্যবসাসফল ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এটি বাংলা ছবির ইতিহাসের রেকর্ড গড়া একটি ব্যবসাসফল ছবি। পরিচালক ও প্রযোজক ভারত থেকে মূল ছবির প্রযোজক ও পরিচালকের অনুমতি নিয়েই ছবিটি তৈরি করেন।
প্রথম সাক্ষাতেই দর্শক নড়েচড়ে বসল নতুন সুদর্শন তরুণ নায়ক সালমানকে দেখে। এর পর যতই ছবির গল্প এগোতে থাকে, ততই যেন সালমানকে দর্শকের ভালো লাগতে থাকে। সে সঙ্গে ভালো লাগতে থাকে সালমান-মৌসুমী জুটিকে। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির সুপারহিট সালমান-মৌসুমী জুটির দ্বিতীয় সুপারহিট ছবি শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘অন্তরে অন্তরে’।
এ দুটি ছবি সুপারহিট হওয়ার সুবাদে সালমান-মৌসুমী জুটির চাহিদা তখন আকাশচুম্বী। ঠিক তখনই কী এক অজানা কারণে সালমান-মৌসুমী আর জুটি বাঁধতে রাজি হননি। তাঁরা দুজনেই নিজেদের অভিনয় প্রতিভা চেনাতে সিদ্ধান্ত নিলেন যে আর একসঙ্গে কোনো ছবিতে অভিনয় করবেন না।
ফলে পরিচালকরা বেশ বিপাকে পড়ে যান, কারণ ওই সময় মৌসুমী ছাড়া প্রতিষ্ঠিত সব অভিনেত্রীই ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে সালমানের সিনিয়র, যাঁরা তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। বিশেষ করে চম্পা ও দিতি। এঁদের সঙ্গে জুটি করেও লাভ হবে না। মৌসুমীবিহীন সালমান হয়ে পড়েন একা।
প্রয়াত অভিনেতা ও পরিচালক জহিরুল হক তখন সিদ্ধান্ত নেন, ইন্ডাস্ট্রির আরেক নতুন মুখ ‘শাবনূর’কে দিয়ে সালমানের সঙ্গে ছবি বানাবেন। ‘তুমি আমার’ ছবিটি সালমান শাহ ও শাবনূর জুটির প্রথম কাজ। এই ছবির সাফল্যের পরপরই পরিচালক জহিরুল হক সালমান-শাবনূর জুটিকে নিয়ে সত্তরের দশকের খান আতাউর রহমানের সুপারহিট ছবি ‘সুজন সখী’র (ফারুক-কবরী) রিমেক বানানোর ঘোষণা দেন, যা পরবর্তীকালে তিনি শেষ করে যেতে পারেননি।
ছবিটির শুটিং শুরু করার পরপরই পরিচালক জহিরুল হক মৃত্যুবরণ করেন, যার ফলে ছবিটির কাজ থেমে যায়। পরে পরিচালক তমিজ উদ্দিন রিজভী ছবিটির কাজ শেষ করে পরিচালক জহিরুল হকের নাম দিয়েই ছবিটি মুক্তি দেন।
মাত্র তিন বছরের ক্যারিয়ারে প্রয়াত সালমান যেসব খ্যাতিমান ও গুণী পরিচালকের ছবিতে কাজ করেছিলেন তাঁদের নাম ও ছবির তালিকা—সোহানুর রহমান সোহান (কেয়ামত থেকে কেয়ামত), শিবলী সাদিক (অন্তরে অন্তরে, আনন্দ অশ্রু, মায়ের অধিকার), জহিরুল হক (তুমি আমার, সুজন সখী), গাজী মাজহারুল আনোয়ার (স্নেহ), শফি বিক্রমপুরী (দেনমোহর), দিলীপ সোম (মহামিলন), এম এম সরকার (চাওয়া থেকে পাওয়া, প্রেমপিয়াসী), বাদল খন্দকার (স্বপ্নের পৃথিবী), হাফিজউদ্দিন (আঞ্জুমান), দেলোয়ার জাহান ঝন্টু (কন্যাদান), মালেক আফসারী (এই ঘর এই সংসার), এম এ খালেক ( স্বপ্নের পৃথিবী), জীবন রহমান (প্রেমযুদ্ধ), মোহাম্মদ হাননান (বিক্ষোভ), মোহাম্মদ হোসেন (প্রিয়জন), মতিন রহমান (তোমাকে চাই), শাহ আলম কিরণ (বিচার হবে), জাকির হোসেন রাজু (জীবন সংসার), তমিজ উদ্দিন রিজভী (আশা ভালোবাসা) ।