সুরকার আলতাফ মাহমুদের ৮৩তম জন্মদিন
মুক্তিযোদ্ধা, সুরকার, সংস্কৃতিকর্মী আলতাফ মাহমুদ ১৯৩৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার পাতারচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাকনাম ছিল ঝিলু। বাবার নাম এ এম নেজাম আলী হাওলাদার। মায়ের নাম কদ বানু।
১৯৫৩ সালে ভাষা আন্দোলনের প্রথম প্রভাতফেরিতে আলতাফ মাহমুদের সুরারোপিত ‘মৃত্যুকে যারা তুচ্ছ করিল ভাষা বাঁচাবার তরে’ গানটি গাওয়া হয়। এ সময়ে আবদুল গাফফার চৌধুরী 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো' গানটিতে তিনি নতুন করে সুরারোপ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটির সুরে কিছু পরিবর্তন করেন। এই সুরটি জহির রায়হানের চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া'য় ব্যবহৃত হয়।
পরবর্তী সময়ে ভাষা আন্দোলনের সূত্রে গাজীউল হক রচিত 'ভুলব না ভুলব না একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না' ও আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ রচিত 'মেয়েটার বর মরেছে আর বছর' গানের সুরারোপ করেন তিনি।
১৯৭১ সালে শহীদ মিনারের নানা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে সংগ্রামী অংশগ্রহণ। ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলে তিনি ঢাকায় থেকে যান। এর পর ঢাকায় থেকেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করা শুরু করেন। ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশারফ ও মেজর হায়দারের নেতৃত্বে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ হলে তিনি এই প্লাটুনের সদস্য হন। এপ্রিলের শেষে প্রচুর গণসংগীত রচনা, সুরারোপ ও কণ্ঠ রেকর্ড করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পাঠান।
এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ আর অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন নিজের বাসভবনে। রাজারবাগের সেই বাড়ি একাত্তরেই পরিচিতি পেয়ে যায় 'একাত্তরের দুর্গবাড়ি' হিসেবে। আর এ বাড়ি থেকেই ৩০ আগস্ট পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় দোসরদের (আলবদর) সহায়তায় তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। ৩ সেপ্টেম্বর চোখ বেঁধে তাঁকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
১৯৭৭ সালে আলতাফ মাহমুদকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য ২০০৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) দেওয়া হয় তাঁকে।

শিপন আলী