কম সংক্রমণের একটি কারণ যক্ষ্মার টিকা
করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করছে যক্ষ্মার টিকা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এনওয়াইআইটি) গবেষণা বলছে, বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করা আবার অনেক দেশে কম সংক্রমণের পেছনে বহু কারণের একটি বিসিজি বা যক্ষ্মার টিকার ভূমিকা।
তাঁদের দাবি, যেসব দেশে করোনাতাণ্ডব চালাচ্ছে সেসব দেশে সার্বজনীন বিসিজি টিকা কর্মসূচি নেই। অন্যদিকে, সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কম দেশগুলোতে দীর্ঘকাল থেকেই রয়েছে এই বিসিজি টিকা কর্মসূচি। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও।
এনওয়াইআইটির বায়োমেডিকেল সায়েন্স বিভাগের গবেষকদের তথ্য বলছে, করোনায় সবচেয়ে বেশি তাণ্ডবের শিকার ইতালি, যুক্তরাষ্ট্রে কখনই ছিলো না বিসিজি টিকার কর্মসূচি। আর স্পেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ডও ১৯৬৩ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত বন্ধ রাখে এই টিকা। এই পাঁচটি দেশে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার, বিসিজি টিকা রয়েছে এমন দেশের তুলনায় অন্তত ২০ গুণ বেশি। আসলেই কী ভূমিকা রাখছে এই বিসিজি টিকা?
এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসে আক্রমণের যে হার বেশি দেখছি তার মধ্যে রয়েছে তিনটি প্রধান দেশ যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও ইতালি। এর সঙ্গে বেলজিয়ামও যুক্ত রয়েছে। এসব দেশে বিসিজি টিকা দেওয়া হয় না। সার্বজনীন টিকাদান কর্মসূচির মধ্যে যারা এই টিকাটি দিয়েছে, সেখানে আক্রান্তের হার আমরা কম দেখছি। এই পর্যবেক্ষণটি আমাদের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের নজর এড়ায়নি।’
ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আলীমুল ইসলাম বলেন, ‘টিবারকিউলেসিস ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে যে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে যে জিনিসটি হয়, প্রো-ইনফ্লামেটরি সাইটোকাইস যেটা ওয়ান-বি উৎপন্ন হয়। দেখা যায়, এটা ভাইরাসবিরোধী ইমিউন রেসপন্সের জন্য এটা ভালো কাজ করে।’
এই ভাইরাস বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে চার হাজার চিকিৎসাকর্মীকে এই টিকা নতুন করে দেওয়া হয়েছে কী হয় তা দেখার জন্য। এটা একশ বছর আগের ভ্যাকসিন। এফডিএর লাইসেন্সপ্রাপ্ত হওয়ায় যেকোনো সময় এটি ব্যবহার করা যাবে।’
তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বলছেন, ‘এটা বাড়তি সুবিধা দিলে দিতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে করোনাভাইরাস ঠেকাতে আমাদের যেসব নীতি-নির্দেশনা বা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমরা সেটাই গ্রহণ করব। বিসিজি টিকা থেকে কোনো লাভ আসলে সেটা বাড়তি লাভ।’
যে দেশ যত আগে এই টিকা চালু করেছে তাদের করোনার বিস্তার কম। এমনটা সমর্থন করছে গবেষণার তথ্য। যাতে দেখা যায়, ১৯২০ সালে এই টিকা শুরু করা ব্রাজিলে প্রতি মিলিয়নে মৃত্যু দশমিক শূন্য ৫, তার ২৭ বছর আগে শুরু করা জাপানে যা তার চেয়ে ছয় গুণ বেশি। আর ৮৪ সালে শুরু করা ইরানে প্রতি মিলিয়নে মারা যাচ্ছে প্রায় ৩০ জন। তবে পরিসংখ্যান এখন ল্যাবরেটরির গবেষণায় প্রমাণ হলেই মিলতে পারে কিছুটা স্বস্তি।
করোনার উৎপত্তির দেশ চীনেও বিসিজি টিকা কর্মসূচি রয়েছে। তবে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ এই দশ বছর বন্ধ ছিল এই টিকা। বাংলাদেশে সার্বজনীন এই টিকা কর্মসূচি চালু হয় ১৯৭৯ সালে। আক্রান্তের পরিসংখ্যান স্বস্তিদায়ক হলেও এখানেও প্রবীণদের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।