কীভাবে বুঝবেন আপনার শিশু অটিজমে আক্রান্ত

Looks like you've blocked notifications!

শিশুদের স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যাকে অটিজম বলা হয়। শিশুদের এই ব্রেনের বিকাশ মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় শুরু হয়। এই বিকাশজনিত সময়ে একটি শিশু যখন আরেকটি শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে না পারে, যদি তার কথা বলতে অসুবিধা হয় এবং সে একটি কাজ বারবার করে তখন ওই শিশুর মধ্যে অটিজম থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে অটিজম নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শিশু বহির্বিভাগ) শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. তোশিবা রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ডা. মুনা তাহসিন।

অটিজম শব্দটি দিয়ে আসলে কি বুঝায়, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. তোশিবা রহমান বলেন, অটিজম এমনভাবে বিস্তৃত হচ্ছে, বলা হচ্ছে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এর অনুপাত ১:১ হয়ে যাবে। সেইদিক থেকে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। আসলে এই বিষয়টা সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অটিজম শব্দটি হচ্ছে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার (এনডিডি)। আমাদের ব্রেইন বিভিন্ন কোষ দিয়ে তৈরি। আর এই কোষটির নাম হচ্ছে নিউরন। যখন একটি শিশু স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয় তখন আমরা তাদেরকে বলি ‘নিউরো ট্রিপিক্যাল’ অর্থাৎ সে একজন স্বাভাবিক মানুষ। আর নিউরো ডাইভারসিটি হচ্ছে- যখন ট্রিপিক্যাল থেকে সে একটু ডাইভারটেড হয়ে যাচ্ছে। তখন সেই অবস্থাকে আমরা বলছি অটিজম।

অটিজমের তিনটি বিষয় আমরা লক্ষ্য করে থাকি। সামাজিক যোগাযোগে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা থাকে। যোগাযোগে সমস্যা ও আচরণে সমস্যা থাকে।

যেহেতু আমরা বুঝতে পারি না শিশু আসলে অটিজমে আক্রান্ত কিনা, সেটি বুঝবার জন্য কী কী বিষয় থাকে, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. তোশিবা রহমান বলেন, আটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সামাজিক যোগাযোগ স্থাপনে সমস্যা থাকে। চোখে চোখ রেখে যোগাযোগ রাখা বা কথা বলা তাদের জন্য খুবই দুরূহ ব্যাপার। যদি কথা বলেও কিন্তু চোখে চোখ রাখবে না। এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় একটি চিহ্ন। এরপর তাকে ডাকলে সে শোনে না। তখন বাবা-মা মনে করেন শিশুটির হয়তো কানে সমস্যা, এজন্য কানের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। কানের পরীক্ষা করিয়ে নেয়।

আবার টেলিভিশনে বা মোবাইল ফোনে কোনো আওয়াজ হলে কিংবা তার পছন্দের কোনো মানুষ তাকে ডাকলে সঙ্গে সঙ্গে সে সাড়া দেয়। অন্যথায়, তাকে সারাদিন ডাকলেও সে শুনছে না। তার বন্ধুত্ব স্থাপন হয়না। সে বুঝেও না কিভাবে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে হবে। এই হচ্ছে তার সামাজিকতার প্রতিবন্ধকতা। 

যোগাযোগ এমন একটি বিষয়, যেটা আমরা করতে পারি কথা বলার মাধ্যমে, ইশরার মাধ্যমে ও লেখার মাধ্যমে। এ ছাড়া আমরা পয়েন্টিংয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারি। তাদের কথা বলার সমস্যা থাকতে পারে। অনেক অটিস্টিক শিশু রয়েছে, যাদের কথা বলা অনেক উন্নতি থাকলেও কিন্তু কথাগুলো এলোমেলো থাকে। যখন যেটা যেখানে বলা প্রয়োজন সেটা সে বলছে না। তাদের আচরণে সমস্যা থাকে অর্থাৎ একই কাজ তারা পুনরাবৃত্তিমূলকভাবে করতে থাকে।

এটা কি জন্মগতভাবে হতে পারে কিংবা ডেভেলপমেন্টালি কেউ অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে কিনা অনেকের প্রশ্ন থাকে। আসলে মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায়, মাত্র জন্ম নিয়েছে এমন শিশু, তখন আসলে বুঝার উপার নেই। এটা কখন আমরা বুঝতে পারি কিংবা কখন এটি ডেভেলপ করে, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. তোশিবা রহমান বলেন, একটি শিশু গর্ভে থাকা অবস্থায় এই সমস্যা নিয়ে জন্ম নিচ্ছে, কিন্তু তারপরও বলা হচ্ছে জেনিটিক ফ্যাক্টর বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে জেনেটিক ফ্যাক্টরকে বলে থাকি। এ ছাড়া এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাক্টর। কারও হয়তো ছোটবেলায় মৃদু আকারে অটিজম সমস্যা ছিল। পরিবেশগত কারণে হয়তো এটা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করছে। যেমন, আমরা ডিভাইসে বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। আবার অনেকে মনে করেন ডিভাইস ব্যবহার করলে বা মোবাইল ফোন, টিভি বেশি ব্যবহার করলে অটিস্টিক হয়ে যাচ্ছে কিনা।

আপনার শিশু অটিজমে আক্রান্ত কিনা এটা সম্পর্কে আরও জানতে উপরের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এনটিভি হেলথ ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং জানুন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ।