বয়সভেদে শিশুর কথা বলার ধরণ
শিশু বয়স অনুযায়ী কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা জানি, সাধারণত চার মাস বয়স থেকে শিশুরা একটু একটু শব্দ বলা শুরু করে। একটু বড় হলে অর্থপূর্ণ শব্দ বলে। তবে অনেক সময় এই বিষয়টি একটু দেরিতে হতে পারে। তবে বেশি দেরিতে কথা হলে, তখন সেটাকে রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে শিশুর বয়সভেদে কথা বলা ও শিশুর দেরিতে কথা বলা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শিশু বর্হিবিভাগ) শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. তোশিবা রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ডা. মুনা তাহসিন।
শিশুর আদর্শ বয়স কি বা কখন সে কথা বলবে, কখন আমরা বলবো না শিশু দেরিতে কথা বলছে, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. তোশিবা রহমান বলেন, শিশুর দেরি করে কথা বলাটা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ও কথা বলার সমস্যাগুলো অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আমর কমিউনিকেশন ডিজিজগুলোর প্রতি অনেক বেশি নজর দিচ্ছি বা উপস্থাপন করছি। আবার নন কমিউনিকেশন ডিজিজগুলো শিশুদের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে। এটির প্রতি নজর দিচ্ছি না। এটা আসলে আমাদের সচেতনতার অভাব।
ডা. তোশিবা রহমান বলেন, শিশুর বিকাশের অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। এই অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে শিশু একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছায়। এই ধাপগুলো যখন আমরা জানতে পারব, তখন আমরা সহজে বুঝতে সক্ষম হবো আমার শিশু ঠিক আছে কিনা? অথবা কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি শিশু জন্মের পর যখন প্রথম কান্না করে, তখন এটি শিশুর প্রথম স্পিচ। তারপর আমরা বলি, ৪০-৪৫ দিন বয়স পর্যন্ত শিশুরা একটু ‘ও’ ‘আ’ এই ধরনের শব্দ করে। এটা হচ্ছে ওই বয়সে তার জন্য স্পিচ। শিশুটি যখন ৬ মাস বা ৭ মাস বয়সের দিকে যায়, তখন শিশুদের দা..দা..বা..বা..এ রকম শব্দ অনেকক্ষণ বলতে শোনা যায়। এভাবে শব্দ করতে করতে মুখে একদম ফ্যানা তুলে ফেলে। এটা হচ্ছে শিশুর বয়সভেদে স্বাভাবিক বিকাশ। এ ছাড়া শিশুর যখন এক বছর বয়স হবে, তখন সে একটি করে শব্দ বলা শিখবে। যেমন: মা, বাবা, দাদু এ রকম শব্দ তার মুখে উচ্চারিত হবে। এ ছাড়া হাতে একটু গরম লাগলে ওহ শব্দ বলবে। আর এটাই হচ্ছে স্পিচ। এ ছাড়া শিশুর মা তার সামনে দিয়ে গেলে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে আ.. আ..অর্থাৎ এই শব্দ দিয়ে বুঝাচ্ছে কোলে নিতে। এটাই তার স্বাভাবিক স্পিচ। এক বছরের একটি শিশু অবশ্যই ২০-২৫টি শব্দ বলবে। এই শব্দের মধ্যে বিশেষ্য, ক্রিয়া ও বিশেষণ আছে কিনা লক্ষ্য রাখতে হবে।
এরপর ১৮ মাসে ২০-২৫টি শব্দের সাথে আরও কিছু শব্দ যোগ হয়েছে কিনা কেয়াল রাখতে হবে। ৩০ থেকে ৪০টি অর্থপূর্ণ শব্দ বলতে পারে কিনা। যেমন গ্লাসকে দেখলে গ্লাস, জুতা দেখলে জুতা, কলম দেখলে বলবে কলম এ ধরনের অর্থপূর্ণ শব্দ হতে হবে। যদি এরকম হয় যে, কথা বলছে কিন্তু এলোমেলো, যা অর্থহীন। সেটাকে বলা হয় রিস্ক ফ্যাক্টর।
এ ছাড়া দুই বছরের একটি শিশু ৫০ থেকে ১০০টি একক শব্দ বলতে পারবে। এটার সাথে আবার জোড়া লাগিয়ে কথা বা শব্দ বলতে পারবে। যেমন: গ্লাস দাও, পানি খাব ইত্যাদি। দুই বছর বয়স থেকে দুই শব্দ জোড়া লাগিয়ে বাক্য তৈরি করতে পারে। এরপর তিন বছর বয়সে তিনটি শব্দ জোড়া লাগিয়ে বাক্য তৈরি করা। অথবা চার থেকে পাঁচটি শব্দ জোড়া লাগিয়ে বাক্য তৈরি করতে পারবে। স্বাভাবিক শিশুরা একটু বেশিই কথা বলে। এ ছাড়া চার থেকে পাঁচ বছরের একটি শিশু গল্প বলতে পারে। কোনো একটি ঘটনা সে একটু বিস্তারিত বলতে পারছে। অথবা মিছি মিছি একটি গল্প সে বলতে পারছে। এগুলো হচ্ছে স্পিচের স্বাভাবিক উন্নতি।
শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উপরের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এনটিভি হেলথ ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং জানুন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ।