উচ্চ রক্তচাপ হলে করণীয় কী?
উচ্চ রক্তচাপ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই সতর্ক থাকা জরুরি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৬৫০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. আবুল বাশার। বর্তমানে তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের হৃদরোগ বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : যদি কারো মনে হয় উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে, তার করণীয় কী?
উত্তর : এটা খুবই মজার একটি বিষয়। উচ্চ রক্তচাপ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না। অনেক সময় রোগীরা জানেও না যে তার উচ্চ রক্তচাপ আছে। সেটা অনেক সময় নির্ণয় হয় যখন একটি লোক বিদেশে যাচ্ছে। অথবা নতুন একটি অ্যাপয়েনমেন্ট হচ্ছে, মেডিকেল চেকআপ হচ্ছে, অথবা বাৎসরিক যে চেকআপগুলো হয়, সেখানে এটি ধরা পড়ে। সেখানে সাধারণত কোনো উপসর্গ তৈরি করে না। উপসর্গ তৈরি হয় তখনই যখন উচ্চ রক্তচাপ একটি জটিলতা তৈরি করে।
একে বলা হয় নীরব ঘাতক। এই জন্য প্রতিটি লোকের প্রতি বছর বা ছয় মাস অন্তর অন্তর চেকআপ করা দরকার যে অবস্থাটা কী রকম আছে। তাহলে আমরা বুঝতে পারি প্রাথমিকভাবে নির্ণয় খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : উচ্চ রক্তচাপ যখন নির্ণয় করে ফেলেন এর পরে পরামর্শ বা ব্যবস্থাপনা কী থাকে?
উত্তর : আমরা যদি কোনো রোগীকে প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করতে পারি, সেখানে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করা। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আমরা বলি যে নিয়মিত তাকে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা জগিং করতে হবে। তার খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তাকে মেডিটেশন করতে হবে। শিথিল থাকতে হবে। তার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া যাবে না। আর এমন কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না যেটি প্রেশার তৈরি করে। সে ধূমপান করবে না। উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে আরো কিছু ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে। ডায়েট এমনভাবে করতে হবে যার মধ্যে চর্বি জাতীয় জিনিস কম থাকবে। কার্বোহাইড্রেট অনেক সময় বদলে গিয়ে চর্বিতে পরিণত হয়। সেটিও কম নেবে। সে যদি এসব নিয়ম মেনে চলে, তাহলে প্রাথমিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
প্রশ্ন : শুরুতে কী শুধু জীবনযাপনের পরিবর্তনের পরামর্শ দেন, না কি সঙ্গে কোনো ওষুধও থাকে?
উত্তর : এটা নির্ভর করে কী ধরনের রক্তচাপ এর ওপর। আমরা সাধারণত দেখি যাদের পরিবারে উচ্চ রক্তচাপ আছে, ওই পরিবারের বেলায় আমরা খুব সতর্ক থাকি। একটি শব্দ প্রয়োগ করা হয় প্রি হাইপারটেনশন। হাইপারটেনশন হওয়ার আগে যেই পর্যায়টা ওই পর্যায়ে যদি তাকে নির্ণয় করা যায়, তাহলে শুধু জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করি, তাতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। আর যদি পর্যায় এক – এ নির্ণয় করি, তাহলে জীবনযাপনের ধরনের কিছু পরিবর্তনের সঙ্গে ওষুধ হয়তো প্রয়োজন হয়। আর পর্যায় দুই বা তিনে যদি আসে, তাহলে জীবনযাপনের পরিবর্তনের পাশাপাশি দুটো সমন্বয়কারী ওষুধ আমাদের দিতে হতে পারে।
প্রশ্ন : এই পর্যায়টি আপনারা কীসের ভিত্তিতে করেন?
উত্তর : এগুলো আসলে রক্তচাপের মাত্রার ওপর নির্ভর করে। আমরা পর্যায়ের ওপরে নির্ভর করে চিকিৎসা করি। তবে সবার জন্য জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করতে হয়। আর ওষুধের জন্য পর্যায় এক- এ আমরা একটি ওষুধ দিয়ে চেষ্টা করি। এতে নিয়ন্ত্রণ না হলে আমরা আরেকটি ওষুধ দেই। আর পর্যায় দুইয়ে সাধারণত একটি ওষুধ নিয়ন্ত্রণ হওয়ার বিষয়টি কম। এজন্য প্রথম থেকেই দুটো ওষুধ দেই। আবার নির্ভর করে কোনো জটিলতা আছে কি না।