বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা কী?
বন্ধ্যত্বের উন্নত চিকিৎসা এখন আমাদের দেশেই রয়েছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৬৫১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. শামিমা নার্গিস নীলা। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের গাইনি ও অবস বিভাগে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা আপনারা কীভাবে দিয়ে থাকেন?
উত্তর : পুরুষদের থেকে শুরু করি চিকিৎসা। আমরা পুরুষদের সিমেন এনালাইসিস করি। ওখানে আমরা দেখতে চাই শুক্রাণু সঠিক পরিমাণে আছে কি না। সাধারণত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খুবই আনন্দের বিষয় যে অল্প কিছু ওষুধে এটি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে যায়। সেক্ষেত্রে গর্ভধারণের মাত্রা অনেক উচ্চ হয়ে যায়। সামান্য কিছু ওষুধ যেমন হরমোনের ওষুধ, কিছু ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বলে, এই ওষুধগুলো যদি তারা একটু নিয়মিত খায়, তাহলে দেখা যায় খুব সহজেই তারা এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। যদি কারণ সেটাই থাকে। আর অনেক সময় দেখা যায় যে শুক্রাণুটা নেই, তখন আমরা বের করতে চেষ্টা করি যে শুক্রাণুটা কি তার একেবারে তৈরিই হচ্ছে না, না কি কোনো কারণে পথে কোথাও বাধা আছে। যদি দেখি পথে কোনো বাধা আছে, তাহলে ইউরোলজিস্টের সাহায্য নেই আমরা। তাদের কাছে পাঠাই। সেখানে একটি নির্দিষ্ট সার্জারি আছে, সেটি করে দিলে, দেখা যায় যে স্বাভাবিক হয়ে যায়। সেখানেও গর্ভধারণের হার বেড়ে যায়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে একেবারেই আসে না, একেবারেই তৈরি হয় না। এমনও কিছু হরমোন জনিত কারণ হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আমরা হয়তো একটু আশাহত থাকি। তবে এর সংখ্যা খুবই কম।
আর নারীদের ক্ষেত্রে আসলে অনেক জায়গা চিকিৎসার মধ্যে পড়ে। ডিম্বাশয় থেকে যদি শুরু করি আমরা, দেখা যায় অনেকের ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়ের ডিম্বাণু পরিমিত নেই। ওই পরিমাণ ডিম্বাণু আর তৈরি হয় না। এরপর আমরা বলি ওভুলেশন। তাদের ওভুলেশনও হয় না, বাচ্চাও আসে না। এদের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু ওষুধ আছে। আমরা যদি হরমোনের ওষুধ দেই, সেই ক্ষেত্রে ডিম্বাণুটা বড় হয়, ওভুলেশন হয় এবং এদের গর্ভধারণের হারও ভালো। আমরা খুব প্রচলিত একটি রোগ পেয়ে থাকি, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ। এই রোগীগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ওভুলেশন হয় না। ডিম্বাণুটা তাদের পরিমিত আকারে হয় না। আমরা কখনো মুখে ওষুধ দিয়ে কিছুদিন দেখি।
এরপর যদি মুখে ওষুধে কাজ না হয়, আমরা কিছু ইনজেকশন ব্যবহার করি। তখন দেখা যায় যে এদের ডিম্বাণুগুলো আমাদের চাহিদামতো আসে। এদের যে পরামর্শ দেই, সেই নিয়মে চললে দেখা যায় যে সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।
প্রশ্ন : আরো চিকিৎসা পদ্ধতির কিছু কথা বলছিলেন?
উত্তর : বললাম যে ডিম্বাশয়ের যদি কোনো সমস্যা থাকে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটি ডিম্বনালি, টিউবটার ক্ষেত্রে দেখা যায়, সংক্রমণের কারণে, কিছু রোগ আছে যেমন এন্ড্রোমেট্রিওসিস- এই ধরনের রোগে হয় কি, টিউবের যে স্বাভাবিক এনাটমি সেটি থাকে না। টিউবটা হয় বন্ধ হয়ে যায়, না হয় বেঁকে যায়। নয়তো ডিম্বাশয়ের থেকে সরে যায়। এদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের আর বাচ্চা আসতে চায় না। এই ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকি। এতে অনেক সময় রেসপন্স করে। তবে দুভার্গ্যজনকভাবে যদি আমাদের কাছে আসার আগেই দুটি টিউব তাদের ব্লক হয়ে যায়, তাদের ক্ষেত্রে আমরা আর কোনো আশা করতে পারি না। সেই ক্ষেত্রে আমাদের আইবিএ পদ্ধতি যেটি, টেস্ট টিউব বেবি যাকে বলে সেটাতে যেতে হয়। আর যদি জরায়ুর কোনো সমস্যার কারণে অসুবিধা হয়, যাকে ফাইব্রয়েড বলি, সেই ক্ষেত্রে আমরা যদি ফাইব্রয়েডকে ফেলে দেই, তাহলে দেখা যায় আবার স্বাভাবিক ওষুধ দিয়ে সমাধান করা যায়। আবার জরায়ুর ভেতরে অনেক সময় পর্দা হয়ে যায়। জরায়ু লেগে যায়, তখন আমরা আরো কিছু চিকিৎসা করি। ওই পর্দা কেটে দেই। পরে দেখা যায় তাদের বাচ্চা আসতে কোনো অসুবিধা হয় না। আমরা এটি আমাদের দেশেই সফলভাবে করছি।