চোয়ালের জয়েন্টের যেসব সমস্যা হয়
চোয়ালের জয়েন্টে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৬৪৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মতিউর রহমান মোল্লা। বর্তমানে তিনি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের ওরাল অ্যান্ড মেক্সিলোফেশিয়াল সার্জারি বিভাগে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : চোয়ালের ওপরে একটি জয়েন্ট আছে। যাকে টেম্পেরোমেন্ডিবুলার জয়েন্ট বলে। এতে সাধারণত কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : এটা আমাদের দেশের নতুন ধরনের একটি সমস্যা। আমাদের দেশে হচ্ছে আজকাল। অনেকে বলে যে আমার চোয়ালে মুখ খুলতে গেলে ব্যথা লাগে। অথবা মুখ খুলতে গেলে শব্দ হয়। অথবা বলে আমার কানের এখান থেকে ব্যথা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। মাথায় যাচ্ছে, ঘাড়ের দিকে যাচ্ছে। অনেক সময় তারা ভুল করে ভাবে কানের বোধ হয় সমস্যা। ইএনটি চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘তেমন কিছু নেই’। শেষ পর্যন্ত রোগী যখন আমাদের কাছে আসে, আমি বলব মেক্সিলোফেশিয়াল সার্জনরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ। তারা এসব জিনিসকে এক্স-রে করে দেখবে। তারা দেখবে জয়েন্টের অংশটা কেমন আছে। যতটুকু জায়গায় থাকার কথা ছিলে সেটি ঠিক আছে কি না বা এটা ক্ষয় হয়ে গেছে কি না। এগুলো দেখবে। এ ছাড়া আরো রোগ যেগুলো আছে, যেমন কিছু কিছু রোগ যেমন রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস। রিউমেটিক ফিবার, অস্টিওআরথ্রাইটিস। বয়সের সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে যায়। এক একটা সমস্যার কারণ ভিন্ন ভিন্ন হবে। তাই ইতিহাস জানাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আমার কাছে অনেক তরুণ নারী-পুরুষ আসে। প্রথম ইতিহাসে আমি দেখি কি তারা তাদের জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করে ফেলেছে। তারা মাঝরাত জেগে কম্পিউটার টিপছে বা চ্যাটিং করছে। কথা বলছে। মানসিক চাপযুক্ত জীবন। কম ঘুমাচ্ছে। সকালে ওঠে স্কুলে দৌঁড়াচ্ছে। সারা দিনে কোনো ব্যায়াম নেই, খাওয়াদাওয়ার ঠিক নেই। এসব ক্ষেত্রে চোয়ালের যে পেশি সেগুলোর মধ্যে প্রদাহ হয়। তখন সে মুখটা খুলতে চায় না। ব্যথা পায়। আবার দেখা যায় ভেতরে যে ক্যাপসুল থাকে, কার্টিলেজ থাকে, ডিস্ক থাকে সেগুলো যদি ছিঁড়ে যায় বা প্রদাহ হয় সেই ক্ষেত্রে রোগী ব্যথা পায়। আর ডিস্ক যদি একদম সরে যায়, তাহলে হা করলে সামনে গিয়ে সেখানে ঘর্ষণ হয়, এতে একটি শব্দ তৈরি হয়। ব্যথাও হয়।
আরেকটি রোগী আমরা পাই যেমন অনেক বয়স্ক রোগী। অনেকে বলে না দাঁতে লাগাব না। দেখা যায়, সাধারণত একটি উচ্চতা মেনে চলা হয়। উপরের চোয়ালের দাঁত ও নিচের চোয়ালের দাঁত দিয়ে মেনে চলা হয়। এখন যদি কারো দাঁত একদম না থাকে, চোয়ালটা বেশি ওপরে ওঠে যাবে। এতে চাপ পড়ে পেছনে। সেক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত হাড় ক্ষয় হতে থাকে। ডিস্কটা নষ্ট হয়ে যায়। সেই সমস্ত রোগী বলে আমি কিছুই কথা বলতে পারি না। খেতে পারি না।
রোগীদের প্রথম বলি জীবনযাপনের ধরন সুন্দর কর। সবসময় চ্যাটিং করবে না। এটা প্রথম বক্তব্য। আবার অনেক সময় ডিপ্রেশিভ ইলনেস থেকে এই সমস্যা হচ্ছে। অতএব এই যে বিভিন্ন কারণে ব্যথা এগুলো নিয়ে আমাদের কাছে আসছে, এতে ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ।
এরপর সিটিস্ক্যান করে দেখব কী পরিবর্তন হয়েছে? অথবা দাঁত না থাকলে প্রথমে বলব দাঁত ঠিক করে নেন। এই জিনিসগুলো খুব ছোটো জিনিস। তবে আমরা যদি বিষয়টি না বুঝি, তাহলে আমরা ইএনটি চিকিৎসকের কাছে যেতে পারি। অর্থোপেডিকের কাছে যেতে পারি। নিউরোলজির কাছে যাচ্ছি।
আমি বলব, যখন কানের পাশে চোয়ালের অঞ্চলে ব্যথা হবে, নিজে হা করার সময় দুই কানে হাত দিয়ে যদি দেখতে পারি, কানের সামনে যদি ব্যথা হয়, তাহলে ধারণা করতে পারি যে চোয়ালের জয়েন্টে সমস্যা।