বিশ্ব অটিজম দিবস : চাই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
আজ বিশ্ব অটিজম দিবস। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্বকীয়তা ও আত্মপ্রত্যয়ের পথে’। অটিজম একটি বিশেষ ধরনের স্নায়বিক রোগ বা বিকাশজনিত সমস্যা। এটি একটি শিশুর বা ব্যক্তির অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতা, সামাজিক দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তাকে বাধাগ্রস্ত করে। এর লক্ষণ সাধারণত শিশুর জন্মের দেড় বছর থেকে তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়।
কোনো তিন বা চার বছর বয়সী শিশু যদি নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেয়, মা-বাবা বা অন্য কারো চোখে চোখ রেখে না তাকায়, সমবয়সীদের সঙ্গে না মেশে, তবে বুঝতে হবে তার কোনো সমস্যা হচ্ছে।
অটিজম থাকলে শিশু তার পরিবেশের সঙ্গে যথাযথভাবে যোগাযোগ করতে পারে না। এ কারণে অনেক সময় অতিরিক্ত অস্থিরতা, চঞ্চলতা প্রকাশ করে এবং কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। ভাষার ব্যবহার রপ্ত করতে পারে না, নিজের ভেতর গুটিয়ে থাকে, সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না এবং একই কাজ বা আচরণ বারবার করতে থাকে বা হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কিছু শব্দ, নকশা, স্বাদ বা গন্ধ তারা খুব বেশি পেতে চায়, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অসহনীয় হতে পারে।
অটিজমের সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। বিশ্বে প্রতি ১০০ জনে একটি শিশু বা তারও বেশি এ সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশের ২০১৩ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে শহরাঞ্চলে ৩০ জন ও গ্রামাঞ্চলে একটি শিশু অটিজমে আক্রান্ত।
অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়, মা-বাবার শিক্ষাগত যোগ্যতা বা শিশুর প্রতি মা-বাবার ব্যবহার—এসবের সঙ্গে শিশুর অটিজম হওয়ার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। তাই শিশুর অটিজম থাকলে কোনোভাবেই মা-বাবা যেন নিজেদের দায়ী না করেন বা নিজেদের অপরাধী মনে না করেন।
শিশুর অটিজম থাকলে কেবল চিকিৎসকের পক্ষে শিশুর পরিচর্যা করা সম্ভব নয়; বরং প্রশিক্ষপ্রাপ্ত প্রশিক্ষক, সমাজকর্মী, মনোবিজ্ঞানী ও বিভিন্ন দক্ষ পেশাজীবীর সমন্বয় প্রয়োজন। অটিজম নির্ণয়ের জন্য সুস্পষ্ট কোনো পরীক্ষা আবিষ্কৃত হয়নি। এটি নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাই যথেষ্ট।
শিশু বিকাশ কেন্দ্রে বিভিন্ন ধরনের মনোবৈজ্ঞানিক পরিমাপকের সাহায্যে অটিজম শনাক্তকরণ, শিশুদের দক্ষতা ও সীমাবদ্ধতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে তাদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা কার্যক্রমের দিকনির্দেশনা তৈরির জন্য ব্যাপকভাবে কাজ করা হয়।
অটিজম রয়েছে এমন শিশুর জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরের সচেতনতা আর অটিজম নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
লেখক : বিশেষজ্ঞ ও প্রধান, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, অ্যাপোলো হাসপাতাল, ঢাকা।