কিডনি রোগের চিকিৎসা কী?
কিডনি রোগের চিকিৎসা বিভিন্নভাবে করা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৭০৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের কিডনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ।
প্রশ্ন : কিডনি রোগীদের কী কী চিকিৎসা দিতে হবে, সেটি নির্ভর করছে কিসের ওপর?
উত্তর : কিডনি রোগ হয়ে গেলে শুধু যে নেফ্রোলজিস্টকে কিডনি রোগের চিকিৎসা করতে হবে, এটি ঠিক নয়। কারণ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা সাধারণ ডাক্তাররাও করতে পারে। আমাদের বুঝতে হবে যে কিডনি রোগের কিডনির কার্যক্রমটা কী পর্যায়ে আছে। তার প্রস্রাব দিয়ে অ্যালবুমিন বা মাইক্রোঅ্যালবুমিন যাচ্ছে কি না সেটি দেখতে হবে। তখন তাকে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে অ্যালবুমিন কীভাবে না যায়, সেই ধরনের ওষুধ দিতে হবে। আমাদের দেশে ১২০ থেকে ১৩০ জন নেফ্রোলজিস্ট আছে। আর আমাদের কিডনি রোগীর সংখ্যা দুই কোটি। এখন সবই যদি নেফ্রোলজিস্ট দেখে, তাহলে প্রতিদিন প্রায় ৯০০ রোগী নেফ্রোলজিস্টকে দেখতে হয়। সেটা তো সম্ভব নয়। আমাদের দেশে কেন, কোনো দেশেই সম্ভব নয়। সেজন্য আমরা মনে করি যে একেবারে প্রাথমিক যত্নের ক্ষেত্রে এই রোগগুলোকে শনাক্ত করতে হবে।
প্রশ্ন : এর দায়িত্বটা কার?
উত্তর : এটি চিকিৎসকদেরই দায়িত্ব। তবে বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি, এটা কিন্তু খুব উন্নত পরিস্থিতি। বাংলাদেশে প্রাইমারি কেয়ার লেভেলে প্রায় গ্রাম পর্যায়ে, ১৩ থেকে ১৪ হাজার প্রাইমারি ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকে যারা আছে তারা বেশির ভাগই চিকিৎসক নয়। তবে তারা যেটি করতে পারে, একজন মানুষ এলে তার রক্তচাপটা দেখতে পারে। রক্তচাপ যদি ১৪০/৯০ এর ওপর থাকে এবং কয়দিন পরীক্ষা করার পর যদি একই পায়, তাহলে তাকে বলতে হবে সে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। ঠিক তেমনি তার রক্তের চাপট পরীক্ষা করে দেখবে। রক্তের সুগার যদি ১১.১ হয়, সেও কিন্তু ডায়াবেটিস রোগে ভুগছে। এই প্রাথমিক ধারণাটুকু তাদের মধ্যে আছে এবং তারা পরীক্ষা করে দেখতে পারে। পাশাপাশি যদি একটি সিরাম ক্রিয়েটিনিন করতে পারে, তাহলে তো সবই হয়ে গেল। তাহলে কিডনির কার্যক্রম স্বাভাবিক কী অস্বাভাবিক সেটি বুঝতে পারবে। আমরা জানি ১.২ মিলিগ্রাম ক্রিয়েটিনিন যদি নারীদের থাকে, এবং ১.৩ মিলিগ্রাম যদি পুরুষের থাকে, তাহলে কিডনির কার্যক্রম স্বাভাবিক। আর প্রস্রাব পরীক্ষা করা তো খুবই সহজ। কিন্তু মাইক্রোঅ্যালবুমিন পরীক্ষা করা একটু ব্যয়বহুল। এটা সব জায়গায় সম্ভব নয়। এই তিনটি পরীক্ষা করার পর তারা যদি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও প্রস্রাবে অ্যালবুমিন যাচ্ছে সেটি টের পায়, সে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিভাগীয় পর্যায়ে পাঠাবে। অথবা মেডিকেল কলেজে পাঠাবে। সেখানে যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, তখন তাঁরা আরো যত্নের সঙ্গে চিকিৎসা করবেন। এই চিকিৎসার মধ্যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উৎসটা বের করতে হবে যে কী জন্য তার এমন হয়েছে। এরপর যখন তারা দেখবে যে কিডনির কার্যক্রম বেড়ে গেছে, সিরাম ক্রিয়েটিনিন দুই মিলিগ্রামের ওপরে চলে গেছে, কিডনির কার্যক্রম প্রায় ৪৫ হয়ে এসেছে। মানে ৬০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এসেছে তখন তারা নেফ্রোলজিস্টের কাছে যাবে। তবে এখন সব রোগী সরাসরি আমাদের কাছে চলে আসে। এখন আমাদের হিমশিম খেতে হয় কী চিকিৎসা দেব, মানে কত রোগীকে দেখব! তখন দেখা যায় অনেক প্রয়োজনে রোগীরা আপনাদের পাচ্ছে না। নেফ্রোলজিস্টের দায়িত্ব যখন কিডনিটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শুরু করেছে, তখন থেকেই। এখন মানুষের মধ্যে একটি ভীতি আছে কিডনি রোগ মানেই ভয়ঙ্কর। আসলে তো সেটি নয়।
কিডনি রোগ প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ নিরাময়যোগ্য। আর দুই কোটি মানুষের মধ্যে কিডনি ফেইলিউর হলো মাত্র পয়েন্ট দুই ভাগ। অর্থাৎ বছরে তাদের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার। এই রোগগুলোকে আমরা সাধারণত ওষুধ ছাড়াও ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজনের জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়ে থাকি।