হাড় ফ্র্যাকচার : কী করবেন?
পেরিওস্টিয়াম (হাড়ের বাইরের স্তর) আংশিক বা সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়াকে ফ্র্যাকচার বলে। খুব সাধারণ ভাষায় হাড় ফেটে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়াই ফ্র্যাকচার হিসেবে পরিচিত।
ফ্রাকচারের কারণ
১. সরাসরি আঘাত
কোনো স্থানে আঘাতের কারণে হাড় ভেঙে যায়। যেমন : হাড়ের ওপর সরাসরি আঘাত, বুলেট ইনজুরি ইত্যাদি।
২. পরোক্ষ আঘাত
আঘাতের স্থান থেকে দূরে হাড় ভেঙে যায়। যেমন : বাইরের দিকে হাড় ছড়িয়ে পড়ে গেলে কলার বোন ভেঙে যেতে পারে।
৩. শক্তিশালী মাংসপেশির ক্রিয়ার আঘাত
একদল মাংসপেশির মারাত্মক সংকোচনে হাড় ভেঙে যায়। যেমন : প্রচণ্ড কাশির কারণে পাঁজরের হাড় ভেঙে যেতে পারে।
ফ্র্যাকচার ওপেন বা ক্লোজড হতে পারে। ওপেন ফ্র্যাকচারের ক্ষেত্রে শুধু হাড়ই নয়, ত্বকের ক্ষতিটাও অনেক বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। কারণ, যেহেতু ওপেন ফ্র্যাকচারে হাড় ত্বক ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসে, তাই ব্যাকটেরিয়া ক্ষতে প্রবেশ করতে পারে এবং পুঁজ তৈরি করতে পারে। এটির কারণে টিটেনাস ও গ্যাস গ্যাংগ্রিনও হতে পারে।
ক্লোজড ফ্র্যাকচারের ক্ষেত্রে ত্বক অক্ষত থাকে। যেহেতু হাড় ভাঙে ত্বকের অভ্যন্তরে, তাই সেখানে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে না।
বিভিন্ন ধরনের ফ্র্যাকচার
১. গ্রিনস্টিক ফ্র্যাকচার
যখন কেবল একদিকের পেরিওস্টিয়াম ভেঙে যায়, তাকে গ্রিনস্টিক ফ্র্যাকচার বলে। এটি সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে হয়।
২. কমপাউন্ড ফ্র্যাকচার
যখন ভাঙা হাড় বাইরের বাতাসের সংস্পর্শে আসে এবং বেরিয়ে থাকা হাড় ও ক্ষতে ময়লা, ধুলো ও ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে, সেটিকে কমপাউন্ড ফ্র্যাকচার বলে।
৩. সিম্পল ফ্র্যাকচার (ক্লোজড)
ভেঙে যাওয়া হাড়ের প্রান্ত ত্বক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে না। তবে উভয় পেরিওস্টিয়াম অন্তর্ভুক্ত হয়।
৪. কমপ্লিকেটেড ফ্র্যাকচার
হাড় ভাঙার সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ অঙ্গে ইনজুরি হয়। যেমন : মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড, ফুসফুস ইত্যাদি।
সাধারণ উপসর্গ
* ফ্যাকচারের স্থান কিংবা আশপাশের এলাকায় ব্যথা হওয়া।
* আক্রান্ত স্থানে চাপ দিলে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা।
* ফ্যাকচারের স্থান ফুটে ওঠা।
* অঙ্গবিকৃতি হওয়া এবং হাড়ের নিচের অংশ বা কোনো অংশ স্বাভাবিকভাবে নাড়াচাড়া করতে না পারা।
* হাড়ের ঘর্ষণে খরখরে শব্দ হওয়া।
হাত বা পায়ের যে অংশে ফ্যাকচার হয়েছে, সেটি সুস্থ পাশের সঙ্গে তুলনা করে পরীক্ষা করতে হবে। তাহলে এটি রোগ নির্ণয়ে সহায়ক হবে।
কী করবেন
* শরীরের আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটি স্থির রাখতে হবে, সেখানে সাপোর্ট দিয়ে রাখতে হবে, যাতে নাড়াচাড়া করতে না পারে। এতে স্থানটি আবার আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা পাবে। শুধু তাই নয়, এতে হাড়ের ভাঙা প্রান্ত রক্তনালি, নার্ভ বা মাংসপেশিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না।
ফ্র্যাকচার স্থির করুন
* ব্যান্ডেজের মাধ্যমে
*স্প্রিন্টের মাধ্যমে
— স্বাভাবিক ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যান্ডেজই যথেষ্ট। কিন্তু অঙ্গ বিকৃতি ঘটলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে রোগীকে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য, বিশেষ করে রোগীর হাতে ও পায়ে স্প্রিন্ট বেঁধে দিতে হবে, যাতে স্থানটি নড়াচড়া থেকে বিরত থাকে।
— কখনোই ফ্র্যাকচারের ঠিক ওপরের স্থানে ব্যান্ডেজ বাঁধবেন না।
— ব্যান্ডেজ এমনভাবে বাঁধবেন, যাতে রোগী স্থানটি নাড়াতে না পারেন এবং সেখানে আবার আঘাত না লাগে। এটি টাইটও করবেন না। এতে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়।
— স্প্রিন্ট এমন লম্বা হতে হবে, যাতে জয়েন্টের ওপরের ও ফ্র্যাকচারের নিচের অংশকে নিশ্চল রাখতে পারে।
— স্প্রিন্ট ভালো প্যাডযুক্ত হতে হবে, যাতে হাত বা পায়ের সঙ্গে ঠিকমতো ফিট হয়। এটি পর্যাপ্ত চওড়া হবে। জরুরি ক্ষেত্রে স্প্রিন্ট হিসেবে হাঁটার জন্য ব্যবহৃত লাঠি, কাঠের টুকরো কিংবা হার্ডবোর্ডের টুকরো ব্যবহার করা যেতে পারে।
— বেশি ব্যথা হলে ব্যথানাশক ইনজেকশন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইমার্জেন্সি এবং সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।