কিডনির পাথরের চিকিৎসা যেভাবে করা হয়
কিডনির পাথর নিরাময়ে বিভিন্ন পদ্ধতির চিকিৎসা এখন আমাদের দেশেই রয়েছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৭৫১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মোহাম্মদ ফারুক হোসেন শেখ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সচিবালয় ক্লিনিকে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কিডনি পাথরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কী কী সুযোগ রয়েছে?
উত্তর : চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে অন্যান্য দেশের মতো যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিডনির পাথরের চিকিৎসা করতে গেলে তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথমত. জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করা, দ্বিতীয়ত. কিছু মেডিকেশন, তৃতীয়ত. আমরা সার্জারির দিকে যাই। কিডনির রোগ বা কিডনির পাথরের ক্ষেত্রে পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রোগী পরিমিত পরিমাণে পানি পান করছে কি না, সেটা আমরা চিন্তা করি, তাদের পরামর্শ দিই। কারণ, পরিমিত পরিমাণে পানি পান করলে যেসব ক্রিস্টাল রয়েছে, সেগুলো বের হয়ে যায়। তখন পাথর হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। আর কিছু খাবারদাবারের বেলায় আমরা সীমা দিয়ে দিই। যেসব খাবারের মধ্যে ইউরিক এসিড আছে বা যেসব খাবারে অক্সালেট আছে, যেসব খাবারে ফসফেট আছে, সেই খাবারগুলোকে আমরা কিছুটা সীমার মধ্যে ফেলে দিই। এতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। দ্বিতীয়ত. আমি যেটা বলছি, ওষুধের মাধ্যমে সমস্যা হয়। যেমন : কিছু কিছু ওষুধ আছে, যেগুলো প্রস্রাবের যে এসিডিটি সেটি কমিয়ে দেয়। যেমন : এসিডিক ইউরিনে বা প্রস্রাবের মধ্যে এসিডের পরিমাণ বেশি হলে, ক্রিস্টালগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি জমে বড় ধরনের ক্রিস্টাল তৈরি করতে সাহায্য করে। সেই ক্ষেত্রে আমরা প্রস্রাবে এসিডের পরিমাণ যদি কমিয়ে দিতে পারি, তাহলে দেখা যায় ক্রিস্টালগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি জমতে পারে না। তখন আর পাথর তৈরি হয় না। আর তৃতীয়ত. আমাদের দেশে কিডনির পাথরের সার্জারির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
আজ থেকে ২০ বছর আগের কথা যদি আপনি চিন্তা করেন, তাহলে দেখবেন যে কিডনির নালি বা প্রস্রাবের থলির পাথরের জন্য, হাসপাতালে এসে ভর্তি হলে সরাসরি অস্ত্রোপচারে যেতে হতো। পেট কেটে অস্ত্রোপচারে যেতে হতো। আস্তে আস্তে সেটি এখন অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। টেকনোলজির অনেক পরিবর্তন হয়েছে আমাদের দেশে। সেই ক্ষেত্রে এখন আর আমাদের ইনভেসিভ কোনো অবস্থায় যেতে হয় না। আমাদের এখন অনেক টেকনোলজি এসেছে যেমন ইএসডাব্লিউ আপনারা শুনে থাকবেন। যেটা দিয়ে স্টোন ক্রাশ করা হয়। স্টোন ক্রাশ করলে পাথর গুঁড়ো হয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এর পরবর্তী ধাপে এসেছে, পিসিএনএল। খুব চমৎকার একটি পদ্ধতি। পেটের মধ্যে ছোট একটি গর্ত করে, ওই ছিদ্র দিয়ে কিডনির পাথরগুলো নিয়ে আসা যায়। এটি ভালো একটি পদ্ধতি। সম্প্রতি আরআইআরএস নামে আরেকটি পদ্ধতি এসেছে। প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বা ইউরেথ্রা দিয়ে আমরা একটি যন্ত্র ঢুকিয়ে কিডনির পাথরকে ক্রাস করে নিয়ে আসতে পারি।
প্রশ্ন : এই যে আপনি বিভিন্ন পদ্ধতির কথা বললেন এই সব পদ্ধতিই কি বাংলাদেশে সম্ভব?
উত্তর : এরই মধ্যে আমাদের দেশে এই ধরনের সব পদ্ধতিই চলে এসেছে। আজকে নয়, আজ থেকে পাঁচ-দশ বছর আগে থেকে এই পদ্ধতিগুলো চলে এসেছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একইভাবে আমরা কিডনি সার্জারি করে থাকি।