ঈদ সুস্থভাবে পালনে আট পরামর্শ
রমজানের এক মাস রোজাব্রত পালনের পর ঈদ খুশির বার্তা নিয়ে আসে। কিন্তু বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকেই খুশির আয়োজন থেকে বাদ পড়েন। এ অসুস্থতা অনেকটাই নিজের হাতে তৈরি করা। একটু সচেতন হলে ঈদের সময়টা সুস্থ থেকে আনন্দে কাটানো যায়।
১. ঈদে শারীরিক সমস্যাগুলোর মধ্যে বুক জ্বলা অন্যতম। এ থেকে মুক্তি পেতে ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করুন।
বন্ধুর অনুরোধে পায়েশ, সেমাই, ফিরনি খেলে বুক জ্বলা থেকে মুক্তি পেতে পারেন, সঙ্গে রক্ষা হলো বন্ধুর মনও। তবে বন্ধুর মন রক্ষা করতে গিয়ে এগুলো আবার অতিরিক্ত খাবেন না। যদি আলসারের সমস্যা থাকে, তবে আগে থেকেই ওমিপ্রাজল খেতে পারেন।
বুক জ্বলা থেকে রক্ষা পেতে বেশি করে পানি পান করুন। খাবার পর পরই পানি পান করবেন না। দেড়-দুই ঘণ্টা পর পানি পান করুন।
অন্যের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হোন। রেস্টুরেন্টের খাবার তো একেবারেই নয়। দুধ খেলে যাঁদের সমস্যা দেখা দেয়, তাঁরা দুধ দিয়ে রান্না করা সেমাই, পায়েশ, ফিরনি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। খেতে পারেন দুধ ছাড়া সেমাই, ফিরনি।
২. ডায়াবেটিস আক্রান্তরা তো সারা জীবন সংযম পালনেই নিয়োজিত। এটিও বজায় থাকুক এবারের ঈদে। ঈদের বেশিরভাগ খাবার মিষ্টি দিয়ে রান্না করা হয়। তাই এসব খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। তবে স্যাকারিন বা অ্যাকারবোজ দিয়ে রান্না হলে খেতে পারেন অনায়াসেই। এসব উপাদান খাবারকে মিষ্টি করলেও আপনার রক্তে গ্লুকোজ বাড়াবে না। যাঁরা ইনসুলিন নেন, তাঁদের রক্তে গ্লুকোজ খুব দ্রুত ওঠানামা করে। তাই খাবারে কোনোভাবেই অনিয়ম করা যাবে না।
ঈদের পর বেশি বেশি করে গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন। কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যান। শুধু মিষ্টিজাতীয় খাবার নয়, চর্বিজাতীয় খাবারও এড়িয়ে চলুন।
৩. হার্টের রোগীদের জন্য ঈদে তেমন বাধানিষেধ নেই। তবে একসঙ্গে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। একবারে বেশি পরিমাণ খেলে আপনার বুকে ব্যথা হতে পারে। অল্প অল্প করে বারবার খেতে পারেন। চর্বিজাতীয় খাবার, ভাজা-পোড়া, ভারী খাবার খাবেন না। বেশি ভিড়ের মধ্যে না যাওয়াই ভালো। হার্টের সমস্যার পাশাপাশি ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার করুন।
কিডনি রোগীদের ঈদের ঐতিহ্যবাহী খাবারে তেমন সমস্যা নেই। তবে ভাজাপোড়া খাবার থেকে বিরত থাকুন। মাংস ও আমিষ জাতীয় খাবারে হোন সতর্ক। ডায়াবেটিসের কারণে কিডনির সমস্যা হলে মিষ্টিজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন।
৫. গর্ভবতী মায়েরা বেশি পরিমাণে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাবেন না; গুরুপাক খাবেন না। একবারে বেশি পরিমাণে খাবেন না। যে খাবারগুলো সহজেই হজম হয়, সেগুলো অল্প পরিমাণে বারবার খান। সময়মতো খাবেন।
ঈদে আপনার হাতের রান্না ছাড়া হয়তো অনেকের মন ভরবে না। সমস্যা নেই। আপনিও রান্না করুন। তবে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না। বসে বসে রান্না করতে পারেন। কিন্তু বেশিক্ষণ রান্নাঘরে থাকবেন না।
৬. শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এমন রোগী খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হোন। গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, হাঁসের ডিম, ইলিশ মাছ, বেগুন, নারিকেল, আনারস, পাকা কলায় হতে পারে অ্যালার্জি। এ থেকে বাড়তে পারে আপনার শ্বাসকষ্ট। এ ছাড়া একবারে বেশি খেয়ে ফেললে বাড়তে পারে শ্বাসকষ্ট।
৭. ঈদের দিন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চলে জাম্পেশ আড্ডা। সারা দিন ছোটাছুটি। গরমে ঘেমে গিয়ে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন নিউমোনিয়া, হাঁচি-কাশিতে। ঘেমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ঘাম মুছে ফেলুন। আঁটসাঁট, মোটা কাপড় না পরে সুতির ঢিলেঢালা জামা-কাপড় পরুন। ঈদের দিন বৃষ্টি হলে মনের আনন্দে না ভেজাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৮. যাঁরা ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন, যাত্রাপথে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে ভ্রমণ করবেন না। ছোট শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন। বাড়ির আশপাশে পুকুর-ডোবা থাকলে শিশুদের কিছুতেই একা ছাড়বেন না। আপনি নিয়মিত যে ওষুধ সেবন করেন, তা পর্যাপ্ত পরিমাণে সঙ্গে নিন। সঙ্গে রাখুন নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধপত্র; সঙ্গে আপনার পরিচিত চিকিৎসকের মোবাইল নম্বর।
ঈদে হতে পারে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ। তাই বলে অসুখের ভয়ে তো আর ঈদের আনন্দ মাটি করা যায় না। সেটি ঠিকও নয়। আমাদের গরিব দেশে আনন্দের দিন আসেই বা কয়টি? একটু সচেতনভাবে চলুন। ঈদ কাটুক আনন্দে, হাসি-গানে।