হঠাৎ কিডনি বিকলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে ঝুঁকি
হঠাৎ কিডনি বিকল হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে আসা জরুরি। কারণ, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে ঝুঁকি বাড়ে। মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে এ ক্ষেত্রে। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮২৮তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. হারুন অর রশিদ। বর্তমানে তিনি কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটে কিডনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : যদি সঠিক সময় চিকিৎসাটা না করা হয়, সে ক্ষেত্রে তার কী হতে পারে?
উত্তর : কিডনি ফেইলিউর যদি তিন মাসের বেশি সময় থাকে, সে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে চলে গেল। তখন সেটি ঠিক হবে না। হঠাৎ কিডনি রোগের ব্যাখ্যায় বলা আছে, কিডনি ফেইলিউর হওয়ার বিষয়টি তিন মাস পর্যন্ত চলতে পারে। এই তিন মাসের ভেতর হয় সে সম্পূর্ণ সুস্থ হবে, নয়তো সে মারা যাবে, না হলে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ হয়ে যাবে।
হঠাৎ কিডনি বিকলের চিকিৎসা যদি সময়মতো না করা হয়, দেখা যায়, এই রোগী গুলোর দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ হয়ে শেষ অবধি কিডনি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।
প্রশ্ন : হঠাৎ কিডনি বিকল রোগীদের সঠিক চিকিৎসা হলে ভালো হওয়ার হার কতখানি?
উত্তর : রোগী যদি ঠিকমতো আসে, তার কিডনি ফেইলিউর যদি ডায়রিয়ার কারণে বা বমির কারণে হয়ে থাকে অথবা ওষুধ খাওয়ার কারণে হয়ে থাকে, সেটা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ সম্পূর্ণ সেরে যায়। তবে হঠাৎ কিডনি বিকল যদি কিডনি রোগের কারণে হয়, যাকে আমি নেফ্রাইটিস বললাম, সেটি যদি টনসিলাইটিসের কারণে বা খোস-পাঁচড়ার কারণে শিশুদের হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ। কিন্তু রেপিডলি প্রগ্রেসিভ নেফ্রাইটিস বা জটিল নেফ্রাইটিস, সেটি আমরা ভালো করতে পারি না। সেটা খুব দ্রুতগতিতে যদি কিডনি বায়োপসি করে ওষুধ দেওয়া হয়, তাহলে ছয় মাসের ভেতর ভালো হয়। অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মারা যায়। এদের বেঁচে থাকার হার ৫০/৫০ হতে পারে।
প্রশ্ন : যখন মানুষের প্রস্রাবে এ ধরনের সমস্যা হয়, তখন অনেকে মনে করেন আমার বোধ হয় পানিশূন্যতা হতে পারে। তখন যদি কেউ বেশি বেশি পানি পান করে, তার প্রভাব কী রকম হতে পারে?
উত্তর : ৫০ বছরের ওপরে বা ৬০ বছরের ওপরে যদি কোনো রোগী আসে, আমরা কিন্তু চিন্তা করি তার প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে প্রস্রাব পেটের ভেতর থেকে গেছে। প্রস্রাব আর হচ্ছে না। তাকে কিডনি ফেইলিউর বলব না। সেই রোগ নির্ণয়টা সঠিক হতে হবে।
তরুণ বয়সে যদি প্রস্রাব পেটের ভেতর জমা না থাকে, প্রস্রাব যদি কমে যায়, রক্তচাপ যদি নিম্নমুখী হয় ( ৯০/৬০), পালস যদি বেড়ে যায়, একশর ওপরে, আমাকে তাহলে পানিশূন্যতা বলতে হবে। এই পানিশূন্যতা যদি থাকে, সে ক্ষেত্রে আপনাকে স্বাভাবিক স্যালাইন, ডেক্সটোজ একোয়া খুব তাড়াতাড়ি দিতে হবে। আমরা তো চলমান স্বাভাবিক স্যালাইন দিয়ে থাকি। এক ঘণ্টার ভেতর ৫০০ বা ৭০০ পর্যন্ত দিয়ে থাকি। দিয়ে তার পানিশূন্যতা একটু কমিয়ে ফেলি। তার পর তার স্যালাইন, ডেক্সটোজ কমিয়ে দিয়ে সাময়িক রক্তচাপকে একটু ওপরে তুলি এবং দ্রুত রক্তের ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন দেখে নিই। সোডিয়াম কম আছে কি না, পটাশিয়াম কম কি না সেগুলো দেখি। এগুলো যদি কম থাকে বা বেশি থাকে, সেগুলো ঠিক করি।
ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যটা অতি আবশ্যক দরকার হঠাৎ কিডনি বিকলের ক্ষেত্রে। তার একটি চার্ট করতে হয়। ২৪ ঘণ্টায় কী পরিমাণ প্রস্রাব করল, এই চার্টটা দেখে হিসাব করে খাবার, পানি, স্যালাইন দিয়ে থাকি। তার কিডনি খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।