স্বপ্ন এখন বাস্তব
মাত্র পাঁচজন রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল যে কার্যক্রম, নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও তা এখন ৫০০ জন রোগীর চিকিৎসা করার মতো জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে একদিন যা স্বপ্ন ছিল, আজকে তাই বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
বলছি, ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের কথা। যার কার্যক্রম নতুন করে আর পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, নিমতলীর আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা, বিরল রোগে আক্রান্ত বৃক্ষমানব আবুল বাজনদার, সাতক্ষীরার মুক্তামনি চিকিৎসায় যুগান্তকারী সাফল্য এসেছে এই বার্ন ইউনিটের হাত ধরেই। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছেন এখানকার চিকিৎসকরা। প্রতিনিয়তই এখানে নতুন নতুন রোগী আসছে। সবার স্থান সংকুলানও হচ্ছে না। কিন্তু ফিরে যাচ্ছে না কেউ। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সবাইকে চিকিৎসা দিচ্ছেন এখানকার চিকিৎসকরা।
১৯৮৬ সালে পোড়া রোগীদের জন্য সরকারের কাছে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বার্ন ইউনিট তৈরির কাজ চলে। ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হয়। আস্তে আস্তে পরিণত হয় ১০০ শয্যায়। এখন রাজধানীর চানখারপুলে বার্ন ইউনিটের কাছাকাছি নির্মিত হচ্ছে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট ‘শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম, ডা. সামন্তলাল সেন ও অন্যান্য চিকিৎসক। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম
অথচ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ডা. সামন্তলাল সেনের হাত ধরে মাত্র পাঁচ শয্যা নিয়ে শুরু হয়েছিল এই বিভাগের। এখন তিনিই এর প্রধান সমন্বয়ক। এ ছাড়া দেশের ১৪টি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বার্ন ইউনিট। কিন্তু এর চেয়ে বড় কথা হচ্ছে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট নির্মিত হচ্ছে।
চিকিৎসকরা আশা করছেন, দেশে যে বিপুল পরিমাণ পোড়া রোগীর চাপ সেটি অনেকটাই লাঘব করা যাবে এই ইনস্টিটিউটটি হলে।
এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, ‘মাত্র পাঁচটি বেড (শয্যা) নিয়ে যাত্রা শুরু করি। অস্ত্রোপচার কক্ষও ছিল না। এখন আমরা করতে যাচ্ছি ৫০০ বেডের হাসপাতাল।’
সেই স্বপ্নের শুরু কথা তুলে ধরে ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ শুরু করতে গিয়ে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। পাঁচ বেড থেকে যখন ৫০ বেডের বরাদ্ধ দেওয়া হয়, তখন অনেকে বলেছেন, টাকা নিয়ে কোলকাতায় চলে যাব। অনেকে ফাইল ছুড়ে দিত। তবে আমি দেশেই আছি। আর দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। এখন একে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করছি। ভাবতে এখন ভালো লাগে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সহযোগিতা করছেন।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম
এখন দেশে নানা জটিল অপারেশন হচ্ছে। বিদেশ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া রোগীদের সাহসের সঙ্গে চিকিৎসা করছেন দেশের চিকিৎসকরা। তাঁরা সফলও হচ্ছে। এতে তাঁদের সাহস আরো বাড়ছে। তাঁরা এ ধরনের রোগ ও রোগীর প্রতি আরো আগ্রহী হচ্ছে। এই যে প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে এবং ভালো ব্যবস্থা পেলে দেশের তরুণ চিকিৎসকরাও বেশ ভালো করবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সামন্তলাল সেন। তিনি মনে করেন নতুন ইনস্টিটিউট এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গত বছর এপ্রিল মাসে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগের বছর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ওই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
২০১৮ সালের শেষ দিকে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন চিকিৎসকরা। তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ২০১৮ সালে ওই ভবনে কাজ শুরু হবে।
বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক আমিনুর রশিদ জানালেন, আগামী বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকেই ওই ভবনে কাজ শুরু করা যাবে। ওই ইনস্টিটিউটে নতুন আরো আটটি বিভাগ করা হবে।
বার্ন ইউনিটে কেবল আগুনে পোড়া রোগী নয়, জন্মগত ত্রুটি যেমন, ঠোঁট কাটা, তালু কাটা- এ ধরনের চিকিৎসাও হয় জানিয়ে আমিনুর রশিদ বলেন, ইনস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠিত হলে এ সংক্রান্ত চিকিৎসা সেবার পরিসরও বাড়বে।