ছয় মাস পর পর কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষা করান
কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে সচেতন থাকার বিকল্প নেই। যাঁরা সুস্থ রয়েছেন, তাঁরা অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর পর পর কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আর যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁরা অবশ্যই ছয় মাস পর পর কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষা করুন।
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮৪৬তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. হারুন অর রশিদ। বর্তমানে তিনি কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটে কিডনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কী সাবধানতা দরকার?
উত্তর : আমার যদি ডায়াবেটিস থাকে, আমার যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে অথবা যদি কিডনিতে নেফ্রাইটিস থাকে, তখন দেখতে হবে কিডনির কার্যক্রমটা প্রাথমিক অবস্থায় কী রকম হয়েছে। এখন আমরা হয়তো ডায়াবেটিস হলো, কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই, তাও আমাকে একবার কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষা করে নিতে হবে। যদি আমার উচ্চ রক্তচাপ থাকে, ওষুধ খাই, তাহলে উপসর্গ না থাকলেও সিরাম ক্রিয়েটেনিনটা করে নিতে হবে। ঠিক তেমনি নেফ্রাইটিসের ক্ষেত্রেও। এখনো যদি জানি আমার কিডনির কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে, আমার ডায়াবেটিস রয়েছে, আমি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করব এবং ছয় মাস পর পর আমার কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষা করে যাব।
আমার যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে, সে ক্ষেত্রে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখব। যে ধরনের অসুখই হোক, তিন থেকে ছয় মাস পর পর কিডনির কার্যক্রম একবার করে হলেও সিরাম ক্রিয়েটিনিনটা করে নেব। ইউরিন টেস্ট করে দেখব আমার প্রস্রাবে অ্যালবুমিন যাচ্ছে কি না। অথবা তারও সূক্ষ্ম মাইক্রোঅ্যালবুমিন যাচ্ছে কি না। আমার যদি প্রস্রাবে অ্যালবুমিন বা মাইক্রোঅ্যালবুমিন কোনোটিই না যায়, আর কিডনির কার্যক্রম যদি স্বাভাবিক থাকে, ডায়াবেটিস যদি স্বাভাবিক মাত্রায় আনতে পারি, তাহলে সুস্থ জীবন ২০ থেকে ২৫ বছর এমনি চালিয়ে নিতে পারব।
এদের তো আর কিডনি ফেইলিউর হবে না। আমাকে শুধু জানতে হবে আমি প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটব। আমি সিগারেট খাব না। খাবারে পরিবর্তন নিয়ে আসব। কার্বোহাইড্রেট, ভাত, রুটি, পাউরুটি এগুলো খুব কম খাব। মাছ, মাংস, শাকসবজি, টক ফল এগুলো খাব। তাহলে আমার তো কিডনি রোগের প্রশ্নই ওঠে না।
কিডনি রোগের সমস্যাটা হয় কখন? হয়তো একজন উচ্চ রক্তচাপের রোগী রয়েছেন, তাঁরা কখনোই কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষা করেননি। ১০ বছর ধরে ডায়াবেটিস হয়েছে বা ১৫ বছর রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, সে হয়তো কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষা করেননি। সে বলে যে আমাকে তো আর কেউ বলেনি। এ ক্ষেত্রে জটিলতা হয়, যখন তার প্রথম কিডনি ফাংশন টেস্ট করানো হয়, দেখা যায় তার সিরাম ক্রিয়েটিনিন পাঁচ মিলিগ্রামের ওপরে চলে গেছে। ছয় মিলিগ্রামের ওপরে চলে গেছে। কারো কারো ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ মিলিগ্রামের ওপরে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সেই রোগীকে কিডনি ফেইলিউর বলে ধরতে হয়। তাকে আধুনিক পদ্ধতির চিকিৎসা দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমি যতই তার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করি না কেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করি না কেন, আমার ওই যে কিডনি পাঁচ থেকে ছয় উঠে গিয়েছে সে ক্ষেত্রে আর নিরাময়যোগ্য কিছু নেই। তখন ভিন্ন ধারার চিকিৎসা করতে হবে।