গলায় খাবার আটকানো সমস্যার চিকিৎসা করুন কারণ বুঝে
খাওয়ার সময় গলায় খাবার আটকে যাওয়াকে বলা হয় ডিসফেজিয়া। অনেকেরই এই সমস্যা হয়। বিভিন্ন কারণে এটি হতে পারে। কারণ নির্ণয় করে এর সমাধান করতে হয়। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮৬২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মো. জাহিদুর রহমান। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : ডিসফেজিয়ার সমস্যা কী কারণে হয়েছে বোঝেন কী করে।
উত্তর : এখন সে প্রাপ্তবয়স্ক রোগীই হোক বা তরুণ রোগীই হোক, দুজনকেই তো আমাকে কারণ বের করতে হবে। যেটা দিয়ে আমরা কারণ বের করি সেটি হলো, এন্ডোস্কোপিক আপার জিআইটি। অর্থাৎ আমরা গলার মধ্যে একটি নল দিয়ে পরীক্ষা করে দেখি। যদি সে প্রাপ্তবয়স্ক রোগী হয়, তাহলে আমাদের অ্যান্ডোস্কোপি করে দেখতে হবে যে তার টিউমার বা ক্যানসার হলো কি না। যদি টিউমার বা ক্যানসার পেয়ে থাকি, তাহলে আমরা অ্যান্ডোস্কোপির মাধ্যমে সেখান থেকে বায়োপসি নিয়ে দেখব। অর্থাৎ একটু মাংস কেটে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখব যে কী ধরনের টিউমার বা কী ধরনের ক্যানসার।
আর যদি তরুণ বয়সে আলসার হয়, তাহলে আমাদের সেটি দেখতে হবে। কারণ বের করতে হবে, সেই মোতাবেক পরবর্তী চিকিৎসা দিতে হবে। প্রয়োজন হলে সেই কারণ দূর করতে হবে। যদি ওষুধের কারণে হয়, ওষুধ তাকে বন্ধ করতে হবে। যদি আলসার জানা যায় যে আলসার হয়েছে, সেটি নিরাময়ের জন্য আমাকে নতুন ওষুধ খেতে হবে।
প্রশ্ন : যারা গ্যাসট্রিকের সমস্যায় আক্রান্ত বা যাদের ঢেঁকুরের সমস্যা হয়, তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় মনে হয় গলার দিকে কী একটা চেপে রয়েছে, বের হচ্ছে না। চাপ চাপ ব্যথা ব্যথা। আবার অনেক সময় গ্যাসট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্ল্যাকাক্স ডিজিজেও একটি ঢেঁকুর আসে। গলার মধ্যে চাপ আলসার হওয়ায় এই সমস্যা হয়। এই বিষয়কে কীভাবে আলাদা করবেন বা চিকিৎসা করবেন?
উত্তর : জিইআরডি মানে গ্যাসট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্ল্যাক্স রোগ। আপনি বললেন ঢেঁকুর আসে। আমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলি রিফ্ল্যাক্স। অর্থাৎ পেটে যে এসিড সেকশন হচ্ছে, সেটি ওপরের দিকে গলা পর্যন্ত উঠে আসছে। এর সঙ্গে সঙ্গে তার গলা-বুক জ্বলে। মনে হয় গলা চেপে চেপে আসছে। বুক চেপে চেপে আসছে। সে গ্যাসট্রিকের সমস্যায় ভুগছে। একে আমরা বলি গ্যাসট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্ল্যাক্স রোগ। আরেকটি হলো গ্যাসট্রিক। এটি কিন্তু আসলে পাকস্থলীর। এটি পাকস্থলীর মধ্যে এসিডজনিত কোনো কারণ। আর আমরা যেটি আলাপ করছি সেটি হলো জিআরডি, খাদ্যনালির অংশের যে রোগটি সেটি। এসিডটাই রিফ্ল্যাক্স হয়ে গলা পর্যন্ত উঠে আসছে। এই জাতীয় রোগীর গলা-বুক জ্বলা, বুক চেপে আসা এসব সমস্যা হয়। তার মনে হয় হার্ট অ্যাটাক করে গিয়েছে।
প্রশ্ন : যদি কারো ডিসফেজিয়া হয় বা এই যে গলায় খাবার আটকে যায়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা কী এবং কারো যদি জিইআরডি হয়, ওই ক্ষেত্রে এর চিকিৎসা কী।
উত্তর : যদি কারো দীর্ঘমেয়াদি জিআরডি থাকে, তাহলে দেখা যায় এসিডজনিত কারণে কোনো একসময় ইসোফিজিয়াল স্ট্র্যাকচার অর্থাৎ খাদ্যনালির মাঝখানে জায়গাটা সরু হয়ে আসে। এতে খাবার আটকে যেতে পারে। আরেকটি হলো খাদ্যনালির নিচের অংশে, যাকে আমরা বলি বেরেট ইসোফেগাস। দীর্ঘদিন জিআরডির কারণে ব্যারেটস হবে, সেখান থেকেও তার ক্যানসার হতে পারে। সেখান থেকেও আমাদের ডিসফোজিয়া হতে পারে।
এরও চিকিৎসা হলো কারণটা বের করা। প্রথমে কারণের জন্য আমাদের অ্যান্ডোস্কোপি করতে হবে। করে আমাদের দেখতে হবে যে কারণটা কী? তার কি ব্যারেটস হয়েছে, না কি ক্যানসার হয়েছে, নাকি স্ট্র্যাকচার হয়েছে। পরবর্তীকালে আমাদের অবস্থা এরকম হবে। কারণ বুঝে এর চিকিৎসা করতে হবে।