স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসনে অকুপেশনাল থেরাপির ভূমিকা কী?
স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসনে অকুপেশনাল থেরাপির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৯৮৮ তম পর্বে কথা বলেছেন এস এম ফারহান বিন হোসেন। বর্তমানে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিস্ট হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : স্ট্রোক পরবর্তী সাধারণত কী কী সমস্যা হয়, যাতে আপনাদের ভূমিকা রয়েছে?
উত্তর : একজন স্ট্রোকের রোগী যখন আমাদের কাছে আসে তার মধ্যে যে সমস্যাগুলো পাই, সেগুলো হলো, শারীরিকভাবে তার একপাশ বা দুইপাশ দুর্বল হয়ে থাকে। কথা বলার সমস্যা থাকে। কগনেটিভ বা বোধগত বা পারসেপচুয়াল বা উপলব্ধিগত সমস্যা থাকে। সে কোনো কিছু মনে করতে পারে না, চিনতে পারে না। কোনো কিছু হিসাব করতে পারে না। কোনো একটি জিনিস অনুকরণ করে, সেটি হুবুহু করবে- সেটি করতে পারে না। তার হাতের সক্ষমতা থাকে না। তার শরীরে, পায়ে, হাতে অনুভূতি জনিত সমস্যা থাকে। দৈনন্দিন যে কাজগুলো রয়েছে, খাওয়া দাওয়া, ব্রাশ করা, গোসল করা সবকিছুর জন্য সে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। এই অবস্থায় আমাদের কাছে রোগীগুলো আসে। আমরা অকুপেশনাল থেরাপির মধ্যে পাঁচটি পর্যায় অনুসরণ করি। সাধারণত নিউরোলজিস্ট বা অন্য চিকিৎসক দিয়ে রেফার হয়ে রোগী আমাদের কাছে আসে। আমরা তার এই সমস্যাগুলো বের করি। তার কেয়ার গিভার ও রোগীর চাওয়া অনুযায়ী আমরা স্বল্প মেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করি। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তার চিকিৎসাটা চলে। মিরপুর সিআরপিতে স্ট্রোকের রোগীদের জন্য তিন থেকে চার মাসের মিশ্র পরিকল্পনা তৈরি করি।
প্রশ্ন : কী থাকে এই পরিকল্পনায়?
উত্তর : অনুভূতিজনিত সমস্যাগুলো কতটুকু আমি অর্জন করব, তার শারীরিক সক্ষমতা কতটুকু আসবে, তার মানসিক দক্ষতাটা কতটুকু আসবে, এই জিনিসগুলো থাকে। তার দৈনিক কাজে সে কতটুকু সক্ষম, এই জনিসগুলো পরিকল্পনাতে চলে আসবে।
প্রশ্ন : কী ধরনের রোগীদের বেলায় সফলতার হারটা বেশি আসবে?
উত্তর : সাধারণত স্ট্রোক যেদিন করেছে, তারপর তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সে যদি আমাদের কাছে আসে, সে ওষুধের পাশাপাশি থেরাপিউটিক চিকিৎসা যদি ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে, তাহলে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ উন্নতি চলে আসে। কারণ, এখানে মাল্টিডিসিপ্লিনারি দল কাজ করে। এখানে চিকিৎসক, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্ট, নার্স সবাই একসঙ্গে যার যার ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন : ব্যায়াম শেখানোর বাইরে কি আপনারা কোনো ডিভাইস ব্যবহার করেন?
উত্তর : অকুপেশনাল থেরাপিস্টরা মূলত রোগীকে দৈনিক কাজে সক্ষম করে তোলার জন্য কাজ করি। দেখা যায় স্ট্রোকের রোগীরা যখন আমাদের কাছে আসে, হাতে অতিরিক্ত মাংসপেশির টান থাকে। হাতের স্বাভাবিক অবস্থাটা ঠিক থাকে না। সেই ক্ষেত্রে আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডিভাইস দিয়ে থাকি, যার নাম ইসপ্লিন্ট। এটি দেওয়া হয়, যেন সে হাতের অবস্থা ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা করতে পারে। এ ছাড়া অনেক সময় দেখা যায় স্ট্রোক রোগীদের কাঁধে সাবলেক্সেশন থাকে। কাঁধের জয়েন্টটা নেমে যায়।
সেক্ষেত্রে আমরা বোবাথ স্লিং নামে একটি ডিভাইস দিয়ে থাকি। এটি তার কাঁধের জয়েন্টের পজিশনের ব্যবস্থাপনা করতে সহায়তা করে।
প্রশ্ন : এই ডিভাইসগুলো কি আপনাদের সেন্টারে পাওয়া যায়?
উত্তর : এগুলো আমাদের সেন্টারে পাওয়া যায়। পরিমাপগুলো আমরা দিয়ে দেই।
প্রশ্ন : এগুলোর খরচ কেমন?
উত্তর : এগুলো রোগীদের সামর্থ্য সীমার মধ্যে।
প্রশ্ন : স্ট্রোকের একজন রোগীর পূর্ণ সক্ষম হতে কত সময় লাগে?
উত্তর : মোটামুটি তিন থেকে সাড়ে তিন মাস সময় লাগে। এর মধ্যে তার হাঁটা -চলা কথা বলা মোটামুটি চলে আসে।
প্রশ্ন : আপনারা রোগীকে হোম সার্ভিস দেন কি?
উত্তর : কারণ, এই ভর্তি থাকার সময়টায় সেনসরি স্টিমুলেশন বা হাতের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য হচ্ছে তাকে হ্যান্ড ফাংশন ট্রেনিং দেই। ফিডিং অবজারবেশন দল তৈরি হয়। স্ট্রোক পরবর্তী অবস্থায় রোগীদের মধ্যে বিষণ্ণতা কাজ করে। সে নতুন অবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে পারে না। সে জন্য গ্রুপ থেরাপি নামে আমাদের একটি থেরাপি রয়েছে। সেখানে আমরা রোগীকে বিভিন্ন একটিভিটিতে পারটিসিপেট করি। অনেক রোগী সেখানে একসঙ্গে অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে অংশগ্রহণ করার কারণে ইন্টারেকশন হয়, একটি প্রতিযোগী মনোভাব আসে। একটি আত্মবিশ্বাস চলে আসে।
প্রশ্ন : রোগী যখন হাঁটতে পারে না তখন যন্ত্রপাতি দিয়ে হাঁটানো হয়। এগুলো কি আপনারা সেন্টার থেকে দেন?
উত্তর : কিছু কিছু ডিভাইস আমরা কেনার পরামর্শ দেই। কারণ, রোগী তো আর হাসপাতালে সবসময় থাকবে না। বাড়িতে গিয়ে সে ডিভাইসটা কীভাবে ব্যবহার করবে, কীভাবে সে চলাফেরা করবে সে বিষয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দেই। তবে শুরুর দিকে যখন রোগী আসে, দেখা গেছে যে অনেক রোগী বিছানায় থাকে। বিছানায় কিছু কাজকর্ম রয়েছে এপাশ ওপাশ করা, হাতে পায়ের বিভিন্ন অবস্থানের ব্যবস্থাপনা করা। সেই জিনিসগুলো আমরা প্রাথমিক অবস্থায় শুরু করি। এরপর যখন রোগীকে আস্তে আস্তে বসানো শেখানো হয়, বসার সক্রিয়তা বা সক্ষমতা চলে আসে। তখন আমরা হাতের দক্ষতার ওপর নজর দেই। সে বসে যেই কাজগুলো করার কথা সেগুলো করতে পারছে কি না, সেই বিষয়ে তাকে প্রশিক্ষণ দেই। এরপর তাকে বসা থেকে দাঁড়ানো শেখানো হয়। দাঁড়ানো অবস্থায় তার অনেক হাতের কাজ রয়েছে সেগুলো আমরা শিখাই। এরপর দাঁড়ানোর পর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় হাঁটা শেখে। এভাবে আমরা স্ট্রোকের রোগীদের জন্য পর্যায়ক্রমে চিকিৎসা দেই।
প্রশ্ন : আপনাদের সব সেন্টারে কি স্ট্রোক ব্যবস্থাপনার চিকিৎসক রয়েছে?
উত্তর : আমাদের এখানে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি দল একসঙ্গে কাজ করি। যার যার কাজ আলাদাভাবে ভাগ করা থাকে। আমাদের প্রতিদিন সকালে ওয়ার্ড রাউন্ড হয়। ভর্তিকৃত রোগীদের আমরা একসঙ্গে পর্যবেক্ষণ করি। সেখানে চিকিৎসক ও অন্যান্য অকুপেশনাল প্রশিক্ষক থাকে।