বাংলাদেশে প্লাস্টিক সার্জারির অবস্থা কী?
চিকিৎসা শাস্ত্রে প্লাস্টিক সার্জারি একটি বড় অংশ। বাংলাদেশে এটি বিভাগটি বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছে। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৯৯৭তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. তানভীর আহমেদ।
বর্তমানে ডা. তানভীর আহমেদ ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : প্লাস্টিক সার্জারি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : শুধু এই দেশেই নয়, সারা বিশ্বে প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে মানুষের একটি ধারণা হলো, প্লাস্টিক সার্জারি মানে হলো সৌন্দর্য। এর মানে আমরা সৌন্দর্য নিয়েই হয়তো কাজ করি।
তবে আসলে প্লাস্টিক সার্জারি শব্দটি যদি আমরা ব্যাখ্যা করি, এটি এসেছে প্লাস্টিকোস শব্দ থেকে। এটি একটি গ্রিক শব্দ। এর মানে হলো ‘টু মোল্ড’। যেরকম ভাবে আমরা ভেঙ্গে চুড়ে মূর্তি গড়তে পারি, তাকে বিভিন্ন আকৃতি দিতে পারি সেরকম। এই শব্দটি থেকে কিন্তু প্লাস্টিক সার্জারি আসছে। প্লাস্টিক বা এ রকম কোনো জিনিস দিয়ে আমরা কাজ করি, বিষয়টি কিন্তু সেই রকম নয়। তবে প্লাস্টিক সার্জারির কিন্তু অনেকগুলো ব্রাঞ্চ রয়েছে।
আমাদের দেশের মানুষের ধারণা দুটো। একটি হলো পুড়ে যাওয়া রোগীর ক্ষত সারানো। আরেকটি হলো এসথেটিক সার্জারি। সৌন্দর্য নিয়ে কাজ করে। তবে আমাদের স্ট্রেচিংটা অনেক বড়। যেমন ট্রমা রিকনসট্রাকশন, জন্মগত ত্রুটি, ত্বকের ক্যানসার, ক্ল্যাফলিক প্যালেট, মাইক্রো সার্জারি, এসথেসিটিক সার্জারি, সঙ্গে বার্ন পরবর্তী পুনর্গঠন।
এখন আমরা যদি ট্রমা রিকনসট্রাকশন বলি, এটি কীরকম। আমাদের উন্নতির জন্য মোটর ভেহিক্যাল মুভমেন্ট বেড়ে গেছে। তাই এখানে সড়ক দুর্ঘটনা প্রচুর হচ্ছে। বিশেষত যারা তরুণ, তারাই কিন্তু বেশি আক্রান্ত। বিশেষ করে হাই ভেহিক্যাল ফেলোসিটি দুর্ঘটনার জন্য যেটি হচ্ছে, সাধারণত হাত বা পায়ে আঘাত লাগছে। আমরা বলি হাড়টা বের হয়ে গেছে। সাধারণত আগে প্রচলন ছিল যে পা বা হাতটা কেটে ফেলত। তবে আমরা কিন্তু সেটি করছি না। প্লাস্টিক সার্জনের কাছে যখন আসা হয়, মা্ংসপেশি যেটি আমার শরীরে একটু কম কাজ করছে, তার সেই কাজটিকে সেক্রিফাইজ করে আমি হয়তো রোগীর একটি পা বাঁচিয়ে ফেলছি।
প্রশ্ন : এর জন্য কি কোনো নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন?
উত্তর : ঢাকা মেডিকেল ছাড়াও কিন্তু প্রতিটি জায়গায় প্লাস্টিক সার্জারি হয়। চার থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে যদি দেওয়া যায়, যদি সেই মুহূর্তে আমার সব সুবিধা থাকে, আমরা কিন্তু এই লিম্বটা বাঁচাতে সক্ষম। এটি হলো একটি দিক। দুই নম্বর দিক হলো মাইক্রো সার্জারি। হয়তো মানুষ জানে না। তবে এটি এত মজার এবং এত উন্নত প্রযুক্তির যে এখানে শরীরের একটি অঙ্গ শরীরের আরেকটি অঙ্গে প্রতিস্থাপন করি।
আমাদের প্রচুর শ্রমিক রয়েছে, হাত কেটে যাচ্ছে, আঙুল কেটে যাচ্ছে। সেই অঙ্গ কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর সেখানে কিন্তু আমরা সারাতে পারি। যদি চার থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে আমাদের কাছে আসে, আমরা সফলভাবে একে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হই। একে বলা হয় মাইক্রোসার্জারি।
এ ছাড়া শরীরের অনেক সমস্যা রয়েছে, যেমন ক্যানসার। আমরা এখন শরীরের একটি অংশকে কেটে ফেলে দিয়ে শরীরের আরেকটি মাংসপেশি এনে মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে করি। এই জন্যই এটি প্লাস্টিক সার্জারি। এই সার্জারি অনেক চাপযুক্ত। ছয় থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে, একটি বিশাল দল লাগে। অনেক জিনিসপত্র লাগে, সেই জিনিসগুলো এখন বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
এরপর আসে কনজেনিটাল এনোমালি। এর মধ্যে একটি হলো জন্মগত ত্রুটি। ক্লেপলিপ পেলেট। প্লাস্টিক সার্জনরা প্রধানত এটি করেন। সঙ্গে অনেক মেক্সোলোফেসিয়াল সার্জন বা ডেন্টাল সার্জনরা করেন। আমরা সেই ক্লেপলিপ পেলেটের সার্জারিগুলো করি। এরপর যেমন রয়েছে ভাসকুলার টিউমার বা রক্তনালির টিউমার। আপনারা হয়তো মুক্তামণির অস্ত্রোপচারের কথা শুনে থাকবেন। তোফাতহুরা- জোড়া লেগেছিল। সেখানে পেডিয়াট্রিক সার্জনের সঙ্গে আমাদের ভূমিকাটাও ছিল অনেক বড়। আর মুক্তামণির ক্ষেত্রে বলা হলো এটি এই মুহূর্তে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়। সেই ক্ষেত্রে এই ভাসকুলার টিউমার আমরা সফলভাবে অস্ত্রোপচার করতে সক্ষম হয়েছি। এটা মিডিয়াতে এসেছে বলে সবাই জানতে পেরেছে মুক্তামণির এমন অস্ত্রোপচার আমরা করেছি। এ রকম অনেক সার্জারি আমরা করছি। এরপর জন্মগত ত্রুটির ভেতর আঙুল জোড়া থাকে, এরপর মুখের বিভিন্ন সমস্যা থাকে, কারো বাড়তি আঙুল চলে আসে। এই অঙ্গগুলোর অস্ত্রোপচার আমরা করি। এর পর আসে ব্রেস্ট সার্জারি। এটি হলো আরেকটি অংশ। ব্রেস্ট ক্যানসার পরবর্তী যে পুনর্গঠন করার সার্জারি করা হয়।
বটক্স, পিলার, পিআরপি, লেজার থেকে শুরু করে বড় বড় সার্জারি। যেমন পেডিয়াট্রিক সার্জারি, এবডোমিনো প্লাস্টি, পেটের যে চামড়া যে ঝুলে পড়ছে, একে সার্জারি করা হয়, লাইপোসেকশন হয়। এ রকম অনেক কিছু আসলে প্লাস্টিক সার্জারির অংশ।
প্রশ্ন : যারা দারিদ্র্য সীমার নিচে রয়েছে, তারা কি পারবে এই সুবিধাটা নিতে?
উত্তর : প্লাস্টিক সার্জারি রিকনসট্রাকটিভ অংশ। এসথেটিক অংশ রয়েছে। রিকনট্রাকটিভ অংশ তো একটি চাহিদা। আমরা করছি। আপনি আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যা বিপরীতে সাড়ে ৬০০ রোগী ভর্তি রয়েছে। সবাই আসছে গ্রামাঞ্চল থেকে। কেউ পুড়ে, কেউ ক্যানসার নিয়ে, কেউ ট্রমাতে আক্রান্ত হয়। এরা তো সবাই আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অংশ।
বিশ্ব মানের এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি বাংলাদেশে অনেক কম খরচ সফলভাবে করা হচ্ছে। আর এসথেটিক সার্জারির ক্ষেত্রে আমি যদি চাই যে আমার সৌন্দর্যকে আমি বাড়াব এর জন্য একটি খরচ আসছে।