কিডনি বিকল : আধুনিক চিকিৎসা কী?
কিডনি বিকল হওয়া একটি জটিল সমস্যা। কিডনি বিকলের সমস্যা সমাধানে আধুনিক চিকিৎসা হলো ডায়ালাইসিস, ট্রান্সপ্লান্ট (প্রতিস্থাপন)।
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০০৯তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মো. কামরুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কিডনি আমাদের শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি অঙ্গ। শরীরের যে কয়েকটি অঙ্গ বিকল হয়ে গেলে আমরা আর সুস্থ থাকতে পারি না, সেই রকম অঙ্গের মধ্যে একটি হলো কিডনি। আমাদের দুটো কিডনি থাকে। এগুলো আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এই কিডনি কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেললে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার আশা কতখানি?
উত্তর : আসলে কিডনি আমাদের শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে এটি। আমাদের শরীরে অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়া, কিংবা বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া, এগুলোর কাজ করে কিডনি। যদি কিডনি এই কাজটা বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমাদের শরীরে পানি জমে যেতে থাকে। বর্জ্য পদার্থ জমে যেতে থাকে। তার মৃত্যু ছাড়া কোনো গতি থাকে না। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি তিনটি।
একটি হলো হিমোডায়ালাইসিস। এতে রক্ত বের করে মেশিন দিয়ে ধোয়া হয়। এটি করতে প্রায় চার ঘণ্টা লাগে। প্রতি সপ্তাহে দুটো বা তিনটি সেশন লাগে। এটি একটু ব্যয়বহুল। কিডনির চিকিৎসা আসলেই ব্যয়বহুল। নিয়মিত একাধিক দিন যদি চিকিৎসা নিতে হয়, এটা কষ্টকরও ।
আমাদের দেশের জন্য একটি অসুবিধা যে এতে একটি হাসপাতালের সেটআপ দরকার হয়। অনেক মেশিন দরকার হয়। মেশিনগুলো চালানোর জন্য লোক দরকার হয়। সিস্টার দরকার হয়। ডাক্তার দরকার হয়। এমনকি যেই লোকটির ডায়ালাইসিস হচ্ছে সে যদি মনে করে আমি বেড়াতে যাব, তাহলে প্রথমে চিন্তা করতে হয়, সেখানে ডায়ালাইসিস সেন্টার রয়েছে কি না।
তবে সুবিধা কী? একজন রোগীর যদি হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে যায়, তাহলে এটা দ্রুত কাজ করানো যায়। দ্রুত তার ক্রিয়েটিনিনকে নামিয়ে দেওয়া যায়। এতে মরণাপন্ন রোগীকেও সুস্থ করে তোলা যায়। আমাদের ওখানে যেমন আইসিইউ রয়েছে, একদম মরণাপন্ন রোগী, তাকেও ডায়ালাইসিস দিয়ে ভালো করে তোলা সম্ভব।
আরেকটি রয়েছে। একে সিএপিডি বলে। এটি বাসায় করা যায়। পেটের ভেতর একটি টিউব সেট করা থাকে। এটি অনেক দেশেই করা হয়। এতে স্বাস্থ্যসেবার ওপর চাপ কমে যায়। তবে সমস্যা হলো, এর ফ্লুইডটার দাম অনেক। সিএপিডি প্রোগ্রামে মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়।
এর বাইরে আমরা ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারি। বিশ্বে প্রথম ট্রান্সপ্লান্ট হয় কিডনি। এটা হয় ১৯৫৪ সালে। আজ থেকে প্রায় ৬৫ বছর আগে। আমাদের দেশে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হয় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে। প্রতিস্থাপনের জন্য দাতা প্রয়োজন হয়। তবে দাতা তো নেই। ৯৯ সাল থেকেই কিন্তু মৃত ব্যক্তির কিডনি নেওয়া যাবে- এই আইন রয়েছে। সরকার কিন্তু আইন করে রেখেছে। তবে আমরা করতে পারিনি।
আমাদের দেশের মানুষের মানসিকতা এমন হতে হবে যে একটি রোগী যখন আইসিইউতে মারা যাচ্ছে, ব্রেইন যদি ডেড হয়ে যায়, এই ব্যক্তির কোনো ক্রমেই আর ফিরে আসা সম্ভব নয়, তবে মেশিন দিয়ে তার হার্ট, ফুসফুস, কিডনিকে আরো দুই তিনদিন চালিয়ে রাখা হচ্ছে, তাহলে এই দুই তিনদিনের মধ্যে হার্ট, ফুসফুস, কিডনি অন্যের শরীরে স্থাপন করা যায়। ১৪ জন মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচানো যায়।
আইসিইউতে মারা যাওয়া কোনো রোগী হলে অঙ্গগুলো দান করতে পারে।