পুড়ে যেতে পারেন যেসব কারণে
পুড়ে যাওয়ার কথা ভাবলেই আমাদের শুধু মনে হয় আগুনে পোড়ার কথা। তবে এ ছাড়া বিভিন্ন কারণ থাকে পুড়ে যাওয়ার। আর সেগুলো থেকেও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০১৪তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. তানভীর আহমেদ। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : পোড়া রোগীরা যখন আপনাদের কাছে আসে, কী ধরনের সমস্যা নিয়ে আসে?
উত্তর : বার্ন মানে পুড়ে যাওয়া। অনেকের ধারণা, কেবল আগুনে পুড়ে যাওয়া। পোড়ার ধরন যদি দেখি যে কী কী ভাবে মানুষ পুড়ে যেতে পারে, সেভাবে আমরা রোগীকে চিকিৎসা দেবো।
যদি বড় পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণনা করি, এ মুহূর্তে যাঁরা পুড়ে আসছেন, সাধারণত অনেক কারণে পুড়ে আসছেন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিসংখ্যান যেটি রয়েছে, আমাদের বেশির ভাগ রোগী আসে আগুনে পুড়ে। ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য তারা আগুনের কাছে যাচ্ছেন। দুর্ঘটনাবশত সেখান থেকে কাপড়ে লেগে যাচ্ছে। অথবা আমাদের মা-বোন যাঁরা রান্নাঘরে কাজ করেন, দুর্ঘটনাবশত তাঁর কাপড়ে আগুন লেগে যাচ্ছে। শরীর পুড়ে যাচ্ছে। এ দুটো হলো আগুনে পোড়া। এরপর হলো স্ক্যাল। গরম কোনো পানি যদি শরীরে পড়ে, তখন পুড়ে যায়। সাধারণত এতেও নারীরাই বেশি আক্রান্ত হন। দেখা যাচ্ছে, রান্না করতে গেছে, গরম পানি নিয়ে সে পড়ে গেছে, পা পিছলে গেছে। অথবা তরকারি রান্না করা হয়েছে, শরীরে পড়ে গেল অথবা ছোট বাচ্চা হয়তো বুঝতে পারেনি, গরম হাঁড়িতে পড়ে গেছে—এটা মফস্বলে বেশি হয়। ঢাকা শহরে এ রকম স্ক্যাল কোথা থেকে আসে? গরম চা, গিজার, ওয়াটার হিটার থেকে। দুর্ভাগ্যবশত দেখা যায়, কিছু না মিশিয়ে গরমটা সে চালিয়ে দিয়েছেন। এটি হলো স্ক্যাল।
তৃতীয় যেটি, সেটি হলো ইলেকট্রিক বার্ন। ইলেকট্রিক বার্নের হার আমাদের দেশে খুব বেড়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে প্রথম এক মাসে দেখছি, আমাদের ইলেকট্রিক বার্নের সংখ্যা অনেক। হয়তো দেখা যাচ্ছে, আমাদের অন্য পোড়াগুলো সে পেছনে ফেলে সামনে চলে আসতে পারে। কারণ, আমাদের বৃদ্ধি হচ্ছে, কনস্ট্রাকশনের কাজ হচ্ছে। সেখানে আমাদের দেখা যায় যাঁরা ইলেকট্রিসিটি নিয়ে কাজ করেন, বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্টে যাঁরা কাজ করেন, তারা কিন্তু নিরাপত্তা যন্ত্র পরেন না। কোনো গ্লাভস পরা থাকে না, হেলমেট পরা থাকে না। তাঁরা অরক্ষিত অবস্থায় ইলেকট্রিক জিনিসগুলো ব্যবহার করেন। আমরা এ রকম প্রচুর পাচ্ছি, যাদের হাত-পা পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে। তাদের কিন্তু সে ক্ষেত্রে অঙ্গহানির একটি সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, এই ইলেকট্রিক বার্ন তৃতীয় আরেকটি জিনিস। চার নম্বর যে অংশটা ছিল, সেটি হলো এসিড বার্ন। এগুলো এখন অনেক কমে এসেছে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার যে একটি আন্দোলন ছিল ৭ থেকে ১০ বছর, এতে এ বিষয়টি অনেক কমে এসেছে।
আর এরপর কিছু কিছু বিশেষ পোড়া রয়েছে, যেমন—বিটুমিন, বিভিন্ন রকম রাসায়নিক কারখানায় যারা কাজ করে, অনেক সময় গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে হতে পারে। একিউট বার্নে রোগীগুলো চলে আসছে। এসব কারণে সাধারণত পোড়ার ঘটনাগুলো ঘটে। এসব কারণে যে কেউ পুড়ে যেতে পারে।