যক্ষ্মার চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা কী?
‘যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই’—কথাটি বেশ প্রচলিত ছিল একসময়। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে যক্ষ্মার ভালো চিকিৎসা করা হয়। তবে অসচেতনভাবে ওষুধ সেবনের কারণে যক্ষ্মা রোগের ওষুধগুলো ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে উঠছে।
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০১৮তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : যক্ষ্মার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা কতটা এগিয়ে গেলাম?
উত্তর : একসময় ছিল বলা হতো, ‘যার যক্ষ্মা হয়েছে, তার রক্ষা নেই’। আগে দেখা যেত যক্ষ্মা রোগে মৃত্যু হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত যক্ষ্মা রোগের রক্ষা রয়েছে। তবে এখন দিন যত এগোচ্ছে, দেখা যাচ্ছে যক্ষ্মার জীবাণুগুলো সনাতনী বা ভালো ভালো ওষুধের ক্ষেত্রে রেসিসট্যান্স হয়ে যাচ্ছে। কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলছে ওষুধগুলো। বিভিন্ন ধরনের রেসিসট্যান্স তৈরি হচ্ছে। একে আমরা মাল্টি ড্রাগ রেসিসট্যান্স বলছি। প্রধান যে ওষুধগুলো রয়েছে এর প্রতি যখন কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে, তখন আমরা বলি এমডিআর টিউবার কলোসিস। এখন আরেকটি শব্দ বের হয়েছে এক্সডিআর টিউবার কলোসিস। এক্সট্রিম ড্রাগ রেসিসট্যান্স। সব ওষুধেই তার যক্ষ্মার জীবাণু মরছে না। এ রকম হলে সবচেয়ে শক্তিশালী ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভয়ংকর। এই জীবাণুগুলো যার ভেতরে যাবে, তারও কিন্তু একই অবস্থা। সে এমডিআর যক্ষ্মা নিয়ে যাবে।
প্রশ্ন : এ ধরনের রোগীর সংখ্যা কেমন?
উত্তর : আমাদের একটি সৌভাগ্য হলো আমাদের দেশে এইচআইভি এইডসের সংখ্যা খুব কম। যেসব দেশে এইচআইভি এইডস খুব বেশি, সেসব দেশে এমবিআর, এক্সবিআর টিউবার কলোসিস খুব বেশি। তারপরও রোগীর মধ্যে অনেক সময় সচেতনতা বাড়াতে পারছি না। অনেক চিকিৎসক কেবল প্রেসক্রিপশন করে তার কাজ শেষ করে দিচ্ছে। রোগীকে বারবার করে বোঝাতে হবে, ‘ওষুধ আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে। আমি যখন মনে করব, আপনি রোগমুক্ত হয়েছেন, ছোঁয়াচেমুক্ত হয়েছেন, সম্পূর্ণ রোগটা সেরে গেছে, তখনই আপনার ওষুধ বন্ধ করব।’ এর আগপর্যন্ত আাপনার মুক্তি নেই। যত ভালো ভালো খাবারই আপনি তাকে দিন হবে না, ওষুধ তাকে নিয়মিত খেতে হবে। যত দিন সে জীবাণুমুক্ত না হচ্ছে, যত দিন তার ফুসফুসে ক্ষত না শুকাচ্ছে, ওষুধ খেতে হবে। ওষুধ যদি খেয়ে যায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, পর্যাপ্ত পরিমাণে, পর্যাপ্ত ডোজে যদি খায়, তাহলে কিন্তু আজকের যক্ষ্মারও রক্ষা রয়েছে। তবে যদি অসচেতনভাবে ওষুধ খায়, বিরতি দিয়ে দিয়ে অথবা ভালো হয়েছি মনে করে বন্ধ করে দেয়, তাহলে সমস্যা।
আরেকটি কথা হলো, শুধু ওষুধ লেখার মধ্যে চিকিৎসক সীমাবদ্ধ থাকবেন না। রোগীকে বারবার উদ্বুদ্ধ করতে হবে ওষুধ সেবনে।