অটিজমের চিকিৎসায় করণীয়
অটিজম মস্তিষ্কের বিকাশগত একটি সমস্যা। এতে শিশুর মনোবিকাশগত জটিলতা হয়। অটিস্টিক শিশুদের প্রতিবন্ধী বলা যাবে না। শুধু তার বিকাশটা অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত হয় না। তবে অটিস্টিক শিশুরা কখনো কখনো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অত্যন্ত পারদর্শী হয়।
অটিজমের কারণ
এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা,মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ, জিন অথবা ক্রোমোজোমগত অস্বাভাবিকতা, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক গঠন, বংশগত সমস্যা ও গর্ভকালীন কোনো জটিলতা, ভাইরাল ইনফেকশন, বেশি বয়সে বাচ্চা নেওয়া অটিজমের আশঙ্কা বাড়াতে পারে।
প্রথম বাচ্চা অটিস্টিক হলে দ্বিতীয় বাচ্চার অটিস্টিক হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে যায়। আর যমজ বাচ্চার ক্ষেত্রে অটিস্টিক হওয়ার আশঙ্কা অনেক বাড়ে।
এর বাইরে পরিবেশদূষণ, রাসায়নিক মেশানো খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদিও অটিজমের আশঙ্কা বাড়াতে পারে। যেসব রাসায়নিক দ্রব্য অটিজমের জন্য দায়ী তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মার্কারি, লেড ইত্যাদি।
শিশু অটিজমে আক্রান্ত হলে যা করে
মেয়েশিশুর চেয়ে ছেলেশিশুরা তিন থেকে চার গুণ বেশি অটিজমে ভোগে।
অটিজমে আক্রান্তরা সামাজিক আচরণে দুর্বল হয়,পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কম সক্ষম হয়। এ ধরনের শিশু আপন মনে থাকতে ভালোবাসে এবং নিজের ইচ্ছেমতো কাজকর্ম করে। এরা কারো সঙ্গে নিজের ব্যবহারের জিনিসপত্র শেয়ার করতে চায় না। কারো দিকে তাকিয়ে হাসে না কিংবা আদর করলেও ততটা সাড়া দেয় না।
অটিস্টিক শিশুরা একই কথা বারবার বলে এবং নিজের নাম শুনলে ততটা সাড়া দেয় না। অটিস্টিক শিশুদের প্রায়ই হজমের অসুবিধা, পেটব্যথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের গ্যাস, বমি ইত্যাদি সমস্যা হতে দেখা যায়।
অটিজম সমস্যা সাধারণ রোগের মতো রক্ত পরীক্ষা,ব্রেন স্ক্যানের সাহায্যে এই অবস্থাগুলো নির্ণয় করা যায় না। প্রাথমিক অবস্থায় অটিজম নির্ণয় করতে পারলে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অটিজমের ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়াগুলো অনেক সফলভাবে মোকাবিলা করা যায়।
অটিস্টিক শিশুর প্রধান চিকিৎসা নিওরোবিহেভিওরাল থেরাপি (Neurobehavioral Therapy)। শিশুর সঙ্গে এমন আচরণ করা যাতে ব্রেনের উন্নতি হয় এবং শিশুর অটিস্টিক উপসর্গগুলো লোপ পায়।
অটিজমের যেহেতু কোনো নিরাময় নেই,তাই সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অটিজম ঝুঁকি বাড়ায় এমন রিস্ক ফ্যাক্টর থেকে দূরে থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরে পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা।