খাদ্যে কীটনাশক ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি
খাদ্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে অনেক সময় কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। তবে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে হতে পারে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি।
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৪৮তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. নীলাঞ্জন সেন। বর্তমানে তিনি ব্যাংকক হসপিটাল বাংলাদেশ অফিসের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : সাধারণত আমাদের দেশে খাদ্য উৎপাদনের জন্য কী কী কীটনাশক ব্যবহার হয়ে থাকে? তার স্বাস্থ্যঝুঁকি কতখানি?
উত্তর : আমাদের কৃষক ভাইরা খাদ্য উৎপাদনে ও সংরক্ষণে কীটনাশক ও প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করছেন। কীটনাশক যেগুলো ব্যবহার করছেন, এগুলোকে তিনটি বা চারটি ভাগে ভাগ করতে পারি। অরোনো ক্লোরাইটস, অরোনো ফসফেট, পাইরিথ্রয়েটস, কার্বামেটস। চারটি দলে তাঁরা বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করছেন। সারা পৃথিবীতেই এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে অরগেনো ক্লোরাইটসের ব্যবহার নেই বললেই চলে। কিন্তু বাকি তিনটি সারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহৃত হয়। তবে কথা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে। সেখানে আসল সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে।
কেন মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে? আমরা বলব তিনটি কারণ। একটি হলো জ্ঞানের অভাব। আরেকটি হলো তদারকির অভাব, তিন নম্বর হলো সীমাহীন লোভ। সেখানে খাদ্যদ্রব্য কার কী ক্ষতি করল না করল, তাতে কিছু যায়-আসে না। আমি বেশি বেশি উৎপাদন করব, যেটা তিন দিন টিকবে, একে বাজারে এক মাস টিকিয়ে রাখব, বাজারে বিক্রি করব এবং আমার মুনাফা হবে। এই সীমাহীন মুনাফার যে প্রবণতা, সেটিও একটি বড় কারণ।
প্রশ্ন : এ সমস্যা দূর না করলে কী কী স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে?
উত্তর : মানুষ এখন কী ভাবছে? ফরমালিন হলো খুব ক্ষতিকর। তবে কীটনাশকগুলো বা প্রিজারভেটিভগুলো যে তার চেয়ে কম ক্ষতিকর নয়, এটা কিন্তু অনেকের জানা নেই। এই যে কার্বামেটস ব্যবহার হচ্ছে, এগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহারে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাহলে ক্যানসারের প্রবণতা কি আমাদের দেশে বেড়ে যাচ্ছে না? সেটিও তো একটি কারণ হতে পারে ক্যানসারের।
পুরুষের ক্ষেত্রে কম বয়সে ইনফারটিলিটি দেখা যাচ্ছে। নারীদের ক্ষেত্রে আর্লি অ্যাবোরশন, রক্তস্বলপতা এগুলো হচ্ছে। কারো কারো অ্যালার্জি হচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, অ্যাজমা হচ্ছে। যদি ফরমালিনের কথা বলেন, কারো ক্ষেত্রে পানিস্বল্পতা হচ্ছে। এর থেকে কিডনি ফেইলিউর হচ্ছে। তাহলে সমস্যার কিন্তু শেষ নেই, সীমা নেই।
এখন যে অটিস্টিক শিশু, আমরা কিন্তু আমাদের ছেলেবেলায় এত অটিস্টিক শিশু দেখিনি। আমাদের সামাজিক অনেক কারণে হয়তো এখন অটিস্টিক শিশু আসছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে বলছেন, অটিস্টিক শিশু জন্মের ক্ষেত্রে, মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যেগুলো আসছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে এগুলো দায়ী। তাহলে কোনো মা যদি আসলে জানেন যে এগুলোর তার আগত সন্তানের জন্য ক্ষতি করতে পারে, কোনো পিতা যদি জানে এসব ছাড়াও আমি বিভিন্ন অসুখে ভুগতে পারি বা আমার সন্তানরা ভুগতে পারে, তাহলে নিশ্চয়ই তিনি বুঝবেন, এসব থেকে মুক্তির উপায় আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।