শিশুদের ক্যানসারের লক্ষণ কী?
বড়দের মতো শিশুদেরও ক্যানসার হয়। তবে ঠিকমতো চিকিৎসা নিলে তাদের সুস্থ হওয়ার হার বড়দের তুলনায় বেশি থাকে। আজ ২৮ আগস্ট, এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১৩৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম আকাশ।
urgentPhoto
প্রশ্ন : ক্যানসার মানেই অত্যন্ত ভীতিকর এবং মারাত্মক একটি রোগ। শিশুদের ক্যানসার হওয়ার পেছনে প্রধান ঝুঁকির কারণগুলো কী?
উত্তর : বড়দের যেমন ক্যানসার হয়, বাচ্চাদেরও একই ধরনের ক্যানসার হয়। এর লক্ষণগুলো প্রায় একই রকম। একটা সুস্থ-স্বাভাবিক বাচ্চা হঠাৎ করে যদি অস্বাভাবিক আচরণ করে, যেমন—বারবার জ্বর, ঠান্ডা, কাশি লেগে যায়, ওজন কমে যাচ্ছে, খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে না, কখনো কখনো দেখা যায় পেটের ভেতরে একটা চাকা—এ ধরনের সমস্যা নিয়েই অভিভাবকরা সাধারণত আমাদের কাছে আসেন।
আপনি যেটা জানতে চেয়েছেন, ক্যানসারের কারণ কী? আসলে ক্যানসারের কোনো একক কারণ নেই। এখানে অনেক কারণ কাজ করে। একটা হচ্ছে জেনেটিক ফ্যাক্টর। কিছু কিছু ক্যানসার আছে, যার জন্য জিন দায়ী থাকে। এর সঙ্গে দেখা যায়, পরিবেশগত বিষয় একটি বড় কারণ। সঙ্গে অভ্যাসগত কিছু বিষয়ও আছে। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অভ্যাসগত বিষয়ে আমরা আসতে পারি না, তার আগেই ক্যানসার হিসেবে আমাদের কাছে ধরা পড়ে। আমরা রোগ নির্ণয় করতে পারি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জিন দায়ী। এ ছাড়া বাচ্চার মা-বাবার যদি কোনো প্রি-ডিসপোজিং ফ্যাক্টর থাকে, তার কারণেও ক্যানসার হতে পারে।
প্রশ্ন : সাধারণত বাচ্চাদের ক্যানসার বলতে আসলে কী বোঝানো হয়? কোন ধরনের ক্যানসারে বাচ্চারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে?
উত্তর : বড়দের যেমন বিভিন্ন অঙ্গের ক্যানসার আছে, তেমনি বাচ্চাদেরও বিভিন্ন অঙ্গের ক্যানসার আছে। ক্যানসারকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করতে পারি। সাধারণত যদি অঙ্গ হিসেবে ভাগ করি, তাহলে মস্তিষ্কের ক্যানসার রয়েছে। কিডনির ক্যানসার আছে। পেশি বা হাড়ের ক্যানসার আছে। লিভারের ক্যানসার আছে। অর্থাৎ বড়দের যে ক্যানসার হয়, সেগুলো বাচ্চাদেরও দেখা যায়। তবে কিডনির ক্যানসার, নার্ভ, টিস্যুর এক ধরনের ক্যানসার, হেপাটোব্লাসটোমা, রেবডোমায়েসার্কোমা—এই ক্যানসারগুলো সাধারণত আমাদের কাছে বেশি আসে।
প্রশ্ন : কী কী লক্ষণ প্রকাশ পেলে শিশুর অভিভাবকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?
উত্তর : আমরা তো ক্যানসারে সার্জারি করি। বাচ্চাদের ক্যানসারের চিকিৎসার ফলাফল অনেক ভালো হয় বড়দের তুলনায়। কিডনির ক্যানসার হলে দেখা যায়, পেটের ভেতরে টিউমার হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় যে, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাচ্ছে। অথবা দেখা গেল, বাচ্চা খাওয়া-দাওয়া করে না। বমি বমি লাগে। হঠাৎ করে ওজন কমে যাচ্ছে। তখন তারা আলট্রাসনো যদি করে, তখন ক্যানসারটা একটা টিউমার হিসেবে ধরা পড়ে। আবার লিম্ফোমা ক্যানসারে সব সময় সার্জিক্যাল চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। আবার কখনো কখনো সার্জিক্যাল চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক দিন ধরে ভালো হয় না। দেখা যায়, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট গুটির মতো থাকে, যেগুলোকে আমরা লিম্ফনোট বলি। এগুলো ফোলা থাকতে পারে, শরীরের ওজন কমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা টিবি আছে বুঝি। এর সঙ্গে লিম্ফোমা হতে পারে। সেটাকে আমরা আলাদাভাবে শনাক্ত করি। আবার মস্তিষ্কে ক্যানসার হলে সে বাচ্চার খিঁচুনি হয়। মাথা ফুলে যাচ্ছে, এভাবে লক্ষণ প্রকাশ পায়।
প্রশ্ন : ক্যানসার তো কেবল সার্জারি দিয়ে চিকিৎসা করা যায় না। এ ক্ষেত্রে রেডিওলজি, কেমোথেরাপি প্রয়োজন পড়ে। আপনি কি মনে করেন, আমাদের দেশের লোকেরা পুরো সুবিধাটা পাচ্ছে?
উত্তর : আসলে ক্যানসার একটা জটিল সমস্যা। এর চিকিৎসার জন্য একটা কোলাবরেশন দরকার। একটি দলগত কাজ দরকার। এখানে সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট থাকবে, প্যাথলজিস্ট থাকবে এবং রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট থাকবে। এর সঙ্গে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের থাকা উচিত। এটা যদি পরিপূর্ণভাবে করা যেতে পারে, তবে আমরা সর্বোচ্চ ভালো চিকিৎসা দিতে পারি। আর যারা আমাদের কাছে সেবা নিতে আসে, তারাও তৃপ্ত হয়। সে ক্ষেত্রে সার্জারি একমাত্র চিকিৎসা নয়।
আমাদের দেশে যারা সুশিক্ষিত, তাদের ভেতরও একটা ধারণা থাকে টিউমার নিয়ে। এটা ফেলে দিলেই হয়তো ভালো হয়ে গেল—কথাটা সব সময় সঠিক নয়, আংশিক সত্য। এখানে কৌশলগত কিছু বিষয় আছে। যে দলের কথা বললাম, সবাই মিলে যদি একটা চিকিৎসার পরিকল্পনা করি, তখনই সফল চিকিৎসা হবে। কারণ শুধু সার্জারি করলে বা শুধু কেমো বা শুধু রেডিওথেরাপি দিলে চিকিৎসা পরিপূর্ণ হবে না।