আক্কেল দাঁতের সমস্যা : চিকিৎসা কী?
আক্কেল দাঁতে অনেক সময় পেরিকোরোনাইটিস নামে এক ধরনের সমস্যা হয়। এতে মাড়ি ফুলে ওঠে, ব্যথা হয়, সংক্রমণ হয়। এর চিকিৎসায় করণীয় বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১০৬তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মো. সাইফুল আজম রনজু।
বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরাল ও ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : পেরিকোরোনাইটিসের সমস্যা নিয়ে এলে তখন আপনারা কীভাবে একে ব্যবস্থাপনা করেন?
উত্তর : প্রাথমিক অবস্থায় আমরা একটা এক্স-রে করি। যদি দেখি, তার আক্কেল দাঁত ওঠার সময়, মানে ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে দাঁতের অবস্থান ভালো রয়েছে, অবস্থান সঠিক জায়গায় রয়েছে, সেক্ষেত্রে আমরা কিছু অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যথার ওষুধ দেই। ওটা থেকে ওঠে গেলে, ব্যথাটা চলে যায়। আবার যদি দেখি দাঁতের অবস্থান ঠিক নেই, এটা আগের দাঁতকে নষ্ট করে দিতে পারে অথবা অনেক সময় তার অবস্থানটা গালের দিকে, গালের মাংস দুই দাঁতের মধ্যে চলে আসে, তখন গালে একটা ঘা হয় বা আলসার হয়। এ থেকে অনেক সময় খারাপ কিছু হয়ে থাকে। এসব বিচার করে আমরা আক্কেল দাঁতের চিকিৎসা করি।
প্রশ্ন : তখন কী পরামর্শ দেন? কীভাবে চিকিৎসা করে থাকেন?
উত্তর : যদি অবস্থান ভালো থাকে, আমরা যদি দেখতে পাই, অবস্থানটা ভালো, ওপরে অনেক সময় মাড়িটা ছেড়ে দিলে, দাঁতটা সঠিকভাবে ওঠে আসবে, সেই ক্ষেত্রে আমরা ছোট একটা সার্জারি করি। একে বলে অপারকুলেক্টোমি। এটা করে দিলে দাঁতটা সঠিকমতো চলে আসে। আর যদি সঠিক অবস্থান অনুযায়ী না আসে, যদি দেখি সে আর আসবে না, সেক্ষেত্রে আমরা দাঁতটা তুলে ফেলার জন্য পরামর্শ দেই।
আবার আমরা অনেক সময় দেখি দাঁতের অবস্থানটা এমন যে আগের দাঁতের মধ্যে খাবার ঢুকে ঢুকে দাঁতকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তখনো আমরা দাঁতকে ফেলে দেই। আবার অনেক সময় আগের দাঁতের শিকড়টা ওই দাঁতের চাপের জন্য অনেক ব্যথাযুক্ত হয়। তখন আমরা ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দেই।
প্রশ্ন : আক্কেল দাঁতের অবস্থানগত সমস্যা হওয়ার কি কোনো নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে?
উত্তর : অনেক সময় আক্কেল দাঁতের অবস্থানটা ম্যাল পজিশন থাকে। কারণ থাকে, অনেক সময় চোয়ালের জায়গা নেই। আগে তো চোয়ালের অনেক পরিবর্তন হতো, তবে এখন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। অনেক সময় ওপরের হাড়টা যদি খুব স্বাস্থ্যকর বা মোটা থাকে, সেক্ষেত্রে দাঁতের ম্যাল পজিশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : দাঁত ফেলার পরে কি আপনাদের কোনো উপদেশ বা পরামর্শ থাকে?
উত্তর : এটি একটি সার্জিক্যাল পদ্ধতি। যেহেতু আক্কেল দাঁত সবসময় সঠিক অবস্থানে থাকে না, তাই করতে হয়।
প্রশ্ন : ছোট এই সার্জারিটা আপনারা কীভাবে করেন?
উত্তর : মাইনর বা ছোট সার্জারিটা আমরা বেশিরভাগ সময় লোকাল এনেসথেসিয়া (স্থানীয়ভাবে অজ্ঞান) দিয়ে করি। যদি কোনো সমস্যা থাকে, সেই ক্ষেত্রে আমরা রোগীদের জেনারেল এনেসথেসিয়া দিয়ে ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দেই। অনেকের এক্স-রে করে দেখলাম, চারটা আক্কেল দাঁতের অবস্থানই ভালো নয়। সেই ক্ষেত্রে আমরা তাদের পরামর্শ দেই বারবার এনেসথেসিয়া না দিয়ে একদিনে জেনারেল এনেসথেসিয়া দিয়ে চারটি দাঁতই ফেলে দিন। সেটি সফলভাবে করা সম্ভব।
প্রশ্ন : আক্কেল দাঁত ফেলার পর কি প্রতিস্থাপন করতে বলেন?
উত্তর : প্রতিস্থাপন করার কোনো প্রয়োজনই হয় না। কারণ, সে তো প্রথম থেকেই চোয়ালের বাইরে, সেই ক্ষেত্রে যেহেতু সেখানে কোনো জায়গা নেই, প্রথম থেকেই আমরা প্রতিস্থাপন করার পরামর্শ দেই না। আর যদি দেখি ওটার কারণে আশপাশের দাঁতের কোনো সমস্যা হয়, সেই ক্ষেত্রে আশপাশের দাঁতকে রক্ষা করার জন্য অন্যভাবে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেই।