চোখের রেটিনায় কী ধরনের সমস্যা হয়?
চোখের রেটিনায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। কোনো কোনো সমস্যা থেকে চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ারও ঝুঁকি তৈরি হয়। আজ ৫ অক্টোবর এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১৬৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও পরামর্শক অধ্যাপক ডা. মো. সালেহ আহমেদ।
urgentPhoto
প্রশ্ন : চোখের রেটিনা কী এবং এর কাজ কী?
উত্তর : চোখের তিনটি লেয়ার থাকে। এন্টিরিয়র ফাইব্রাস্কোড, মিডল ভাসকুলার কোড ও নিউরাল কোড। চোখের সামনে এন্টিরিয়র ফাইব্রাস্কোডে কর্নিয়া এবং স্ক্লেরা থাকে। মধ্যম লেয়ার হলো ভাসকুলার কোড। এটি থেকে চোখে রক্ত সঞ্চালন করে, চোখের অন্যান্য অংশে পুষ্টি সরবরাহ করে। তারপর রয়েছে নিউরাল কোড। এখান থাকে রেটিনা। এই তিনটি লেয়ার মিলে চোখ হয়। কোনো একটি বস্তু থেকে আলো এসে চোখের কর্নিয়া থেকে গিয়ে রেটিনার ওপর ফোকাস হয়। তখন সেখানে একটা দৃশ্যের তৈরি হয়। ওই দৃশ্যটা অপটিক অবস্থায় প্রেরিত হয়ে মস্তিষ্কে নিয়ে যায়। মস্তিষ্কে যাওয়ার পর কম্পিউটারের মতো কাজ করে তখন আমরা দেখতে পাই। দেখার জন্য যে নিউরাল লেয়ার সেটা হলো রেটিনা। সরাসরি যা সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন : সাধারণত রেটিনায় কোন কোন সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসেন?
উত্তর : বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসেন। বাচ্চা বয়সে ম্যাকুলার ডিসট্রফি রোগ নিয়ে আসে। এটি একটি জিনগত রোগ। এই রোগে বাচ্চারা কম দেখতে পায়। অনেক সময় বাবা-মায়ের থেকে রোগটা আসে।
প্রশ্ন : কীভাবে প্রকাশ পাবে এই সমস্যাটি?
উত্তর : এতে শিশুরা চোখে কম দেখে। পাঁচ থেকে সাত বছরে বাচ্চারা যখন স্কুলে যায়, তখন বোর্ড দেখতে থাকে তখনই শিক্ষকরা লক্ষ করে সে ভালোভাবে দেখতে পায় না। তখন শিক্ষকরা অভিযোগ করেন যে শিশু দেখতে পাচ্ছে না। চোখের চিকিৎসক দেখান। অপটিক নার্ভের পাশে ম্যাকুলা থাকে। এই সমস্যায় বাচ্চারা ভালো দেখতে পারে না। এটা জন্মগত রোগ।
প্রশ্ন : এর কি সমাধান আছে?
উত্তর : বাচ্চারা যাতে পড়াশোনা করতে পারে, এ রকম কিছু ডিভাইস আছে লো ভিজুয়াল এইড, যা দিয়ে সমস্যার সমাধান করা হয়। এই সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন : ম্যাকুলার ডিসট্রফি যদি সময়মতো নির্ণয় না করে চিকিৎসা করা না হয় সে ক্ষেত্রে কী হতে পারে?
উত্তর : এই রোগে ধীরে ধীরে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাচ্চাদের স্কুলের পড়াশোনা ব্যাহত হবে। তাদের মানসিক বৃদ্ধি ভালোভাবে হবে না।
প্রশ্ন : বড়দের রেটিনার কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ডায়াবেটিক রেটিনো প্যাথি হয়। যদি ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকে। এই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে চোখের রেটিনাতে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। যাদের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, সেটা থেকে চোখের ভেতর সমস্যা হতে পারে। যাদের কোলেস্টেরল বেশি থাকে, উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাদের রেটিনার রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়ে চোখের ভেতর রক্তক্ষরণ হতে পারে। তারা অন্ধ হয়ে যেতে পারে। টিউবারকুলোসিস, সিফিলিস, কিছু অটোইমিউন রোগ রয়েছে, এগুলো থেকে সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কখন হয়? হওয়ার সময় উপসর্গগুলো কী থাকে?
উত্তর : যখন অনেক দিন ধরে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে, তখন মেটাবলিক সমস্যা হয়। তখন রক্তনালির মধ্যে ভাসকুলার অকার্যকর হয়ে যায়। সাধারণত রক্তনালির মধ্যে একটি পুরো মেমব্রেন পড়ে। এটি হলে রক্ত চলাচলের স্বাভাবিক গতি বন্ধ হয়ে যায়। এটি হলে চোখের পুষ্টিও ব্যাহত হয়। রক্ত চলাচল কমে গেলে হাইপোক্সিয়া হবে। রোগী তখন ঝাপসা দেখবে। এই সমস্যায় অনেক সময় চোখ ডলা দিলে রক্তক্ষরণ হবে। রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী অন্ধ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : এই রোগে যখন রোগী ঝাপসা দেখবে, ওই অবস্থায় কী করবে?
উত্তর : যখন চোখে ঝাপসা দেখবে, আজকাল অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে, চোখের যে লিকেজ আছে, লেজার দিয়ে সেই অংশটাকে আমরা ধ্বংস করে দিতে পারি।
প্রশ্ন : এই চিকিৎসায় রোগী কি আবার আগের অবস্থায় চলে যায়?
উত্তর : জি, রোগী আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। লেজারের পাশাপাশি আজকাল নতুন কিছু ইনজেকশন বেরিয়েছে যাকে বলে অ্যান্টিভিজিএফ। এটা দিয়েও ভালো করা যায়।