কর্মজীবী পুরুষের ডায়েট কেমন হবে?

Looks like you've blocked notifications!
সুস্থ থাকতে নারী বা পুরুষ উভয়েরই ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েট জরুরি। ছবি : সংগৃহীত

পুরুষের আবার ডায়েট কি? এরকম ভাবেন অনেকে।  কথাটি কিন্তু একদম ঠিক নয়। একজন পুরুষের দৈনিক সঠিক ক্যালরি চাহিদার পাশাপাশি অন্য সব পুষ্টি চাহিদা যথাযথ পূরণ করার প্রয়োজন হয়। একজন পুরুষকে কর্মঠ হতে হয়, তাকে মাথা খাটিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

নারীর তুলনায় পুরুষের শারীরিক কাঠামো ভিন্ন হওয়ায়,  তাদের সব পুষ্টি চাহিদা একটু বেশি হয়ে থাকে। সঠিক মাংসপেশি,  হাড়ের সঠিক সুস্থতা বজায় রাখা, ত্বক সুন্দর রাখা এমনকি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সঠিক খাবারের যথাযথ চাহিদা পূরণ করার প্রয়োজন হয়।

একজন কর্মজীবী পুরুষের ডায়েট কেমন হবে?

ক্যালরি

পুরুষের খাবারের ক্যালরি নির্ভর করবে কি পেশায় সে রয়েছে তার ওপর। সাধারণত পুরুষের ক্যালরি ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ২০০ হয়ে থাকে। তবে,  পরিশ্রম,  শারীরিক কাঠামো,  ওজন, উচ্চতা,  বয়সভেদে এই চাহিদা ভিন্ন হয়। কর্মঠ একজন পুরুষকে তার প্রতি কেজি ওজনের জন্য অন্তত ২৫ থেকে ৩০ কিলো ক্যালরি গ্রহণ করতে হয়।

প্রোটিন

প্রতি কেজি ওজনের জন্য একজন পুরুষকে কমপক্ষে এক থেকে এক দশমিক দুই গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। মাছ,  মুরগির মাংস,  ডাল,  বাদাম,  দুধ থেকেই এই প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। অনেক সময় কাজের চাপে অনেক পুরুষের দৈনিক দুধের মতো পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হতে দেখা যায়। তাই সব পুরুষেরই রাতে একগ্লাস দুধ খাওয়া উচিত। এতে শারীরিক ও মানসিক দুটো স্বাস্থ্যই ভালো থাকবে এবং ভবিষতে হাড়ের সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

চর্বি

কাজের কারণে বিভিন্ন সময় পুরুষদের বাইরে থাকতে হয়। দেখা যায়, বাইরের ভাজাপোড়া খাবার,  ফাস্টফুড খেতে হয়। তাই কর্মঠ পুরুষদের দুপুরের খাবারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বাইরের কেনা খাবার এড়িয়ে একটু কষ্ট করে বাসা থেকে যদি অল্প খাবারও সঙ্গে নেন,  তাও আপনার শরীরের জন্য ভালো। পুরুষদের স্ট্রোক হওয়া,  রক্তের কোলেস্টেরল ও ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়া এবং এসিডিটির অন্যতম কারণ বাইরের ফ্যাটি খাবার। তাই পুরুষদের সুস্থ থাকতে ভালো চর্বি, যেমন তৈলাক্ত মাছ,  বাদাম,  দুধ,  ডিম খেতে হবে।

ভিটামিন ও মিনারেল

এটি পুরুষের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম,  ফসফরাস,   পটাশিয়াম,  ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি যথাযথভাবে পূরণ করতে দৈনিক সবজি ও ফল গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যেমন, ভিটামিন সি  খুব গুরুত্বপূর্ণ। অথচ কাজের কারণে বাইরে থাকায় অনেক সময় অনেক পুরুষই ফল খাওয়ার সময় পায় না। ভিটামিন সির অভাবে ত্বক, দাঁত ও প্রজনন স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হয়। তাই একটা হলেও মৌসুমি ফল মধ্যসকালে খেতে হবে। আলাদা লবণ খাওয়া বর্জন করতে হবে,  যাতে ব্লাড প্রেশার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ হয়। যেসব পুরুষ বসে কাজ করে তাদের দিনের বেলা অল্প সময়ের জন্য হলেও ভিটামিন ডির জন্য রোদে যেতে হবে।

পানি ও তরল

অনেক পুরুষদের প্রধান তরল হলো, দুধ চা ও কফি। এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অনেকেই পানি খাওয়ার কথা ভুলেই যায়। এ ছাড়া বাইরে বাইরে থাকায় ঘাম হওয়ার কারণে অনেককেই ডিহাইড্রেশনে ভুগতে দেখা যায়। অনেকের আবার ঘাড় বা মাথায় ঘন ঘন ব্যথা হতে দেখা যায়। তাই অতিরিক্ত চা কফি না খেয়ে বিশুদ্ধ পানি,  ডাবের পানি,  গ্রিন টি,   লেবু পানি,  লেবু বা দারুচিনি চা,  ফলের জুস,  দুধ খেলে ভালো।

সতর্কতা

সিগারেট,  পান,  জর্দা,  সীসা ছাড়াও যেকোনো ক্ষতিকারক উপাদান থেকে পুরুষদের দূরে থাকতে হবে। বসে বসে যারা কাজ করেন,  তাদের অবশ্যই একটু সময় করে হলেও রোজ হাঁটতে হবে, কমপক্ষে ৩০ মিনিট।  পুরুষের ভুড়ি বাড়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে পেটের ব্যায়াম করতে হবে। সুস্থতা সবার জন্য প্রয়োজন, তা নারী বা পুরুষ যেই হোক। সচেতনতা সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : পুষ্টিবিদ, থাইরোকেয়ার বাংলাদেশ।