চোখে আঘাত পেলে কী করবেন?
বিভিন্নভাবে মানুষের চোখে আঘাতজনিত সমস্যা হতে পারে। তবে দ্রুত এর চিকিৎসা করা হলে চোখ ভালো রাখা সম্ভব। চিকিৎসা দেরি হলে চোখ অন্ধও হয়ে যেতে পারে। আজ ২৬ অক্টোবর, এনটিভির ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২১৮৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বসুন্ধরা আই হাসপাতাল ও রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও পরামর্শক অধ্যাপক ডা. সালেহ আহমেদ।
প্রশ্ন : চোখের আঘাতজনিত কী কী সমস্যা সাধারণত আপনারা পেয়ে থাকেন?
উত্তর : প্রথমেই বলি, আঘাতের অনেক রকম আছে। যেমন কেমিক্যাল ইনজুরি। এসিড বার্ন, অ্যালকালি বার্ন—এ দুটো পোড়া আজকাল খুব ঘটছে। এটি ট্রমাজনিত অন্ধত্বের বড় কারণ বাংলাদেশে।
প্রশ্ন : শিশুরাও বিভিন্নভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
উত্তর : শিশুদের পেনিট্রেটিং ইনজুরি হয়। শার্পেন ইনস্ট্রুমেন্ট বা ব্লান্ট ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে এ সমস্যা হতে পারে। এ সমস্যা চোখের কর্নিয়াকে ভেদ করতে পারে। আরো ভেতরে গিয়ে চোখের ভেতর রেটিনাকে আঘাত করতে পারে। লেন্সকে আঘাত করতে পারে। করোয়েড ভাসকুলার মেমব্রেনকেও আঘাত করতে পারে। এর সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে অন্ধত্ব হতে পারে।
প্রশ্ন : যখন কেউ এ জাতীয় আঘাত চোখে পাবে তখন তাৎক্ষণিকভাবে কিছু করার আছে কি?
উত্তর : কেমিক্যাল ইনজুরি হলে প্রথম কাজ হলো পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা। এর পর দ্রুত চক্ষু চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
প্রশ্ন : আর যেসব আঘাত রয়েছে, সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা কী?
উত্তর : পেনিট্রেটিং ইনজুরির ক্ষেত্রে অনেক গ্রাম্য চিকিৎসক পাতার রস ব্যবহার করেন। গোলাপজল ব্যবহার করেন। এগুলো খুব ক্ষতিকর। এ থেকে যে ছত্রাক সংক্রমণ হয়, সেটি একেবারে নিরাময়যোগ্য হয় না। এই চিকিৎসা দিয়ে বরং অন্ধত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রশ্ন : তাহলে আদর্শ চিকিৎসা কী হবে?
উত্তর : তাৎক্ষণিকভাবে যদি সম্ভব হয় তাকে একটি সিস্টেমিক (পদ্ধতিগত) অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত। এটি পেনিট্রেটিং ইনজুরির ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে চোখে কোনো পানি না দিয়ে, কোনো ড্রপ না দিয়ে, চোখকে পরীক্ষা করার চেষ্টা না করে কাছের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া উচিত। সাধারণত নিয়ম হলো, এ ধরনের আঘাতগুলোর ছয় ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা করা। যেখানে আঘাত পায়, একে ঠিক না করলে চোখের ইনফেকশন হবে। এমনকি চোখ নষ্টও হয়ে যেতে পারে।urgentPhoto
প্রশ্ন : একে কীভাবে ঠিক (রিপেয়ার) করেন?
উত্তর : এটি একটি মাইক্রোসার্জারি। চোখের অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে লেয়ার থেকে লেয়ার খুব সূক্ষ্মভাবে এই অস্ত্রোপচার করতে হয়।
প্রশ্ন : এই অস্ত্রোপচারগুলো আমাদের দেশে আপনারা কতটুকু সফলতার সঙ্গে করছেন? কোথায় গেলে এই সুবিধাটুকু জনসাধারণ পাবেন?
উত্তর : জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ঢাকায় আছে। ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল আছে। এর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ রয়েছে এবং বসুন্ধরা আই হাসপাতাল আছে, যেটা আমরা নতুন করেছি। এসব জায়গায় এই চিকিৎসা করা হয়।
বসুন্ধরা আই হাসপাতাল অত্যন্ত আধুনিক একটি চক্ষু হাসপাতাল। বিশ্বের সব ধরনের উন্নত চিকিৎসাসেবা এখানে রয়েছে। এখানে এলেও আমরা সূক্ষ্মভাবে এটি ঠিক করতে পারব। তবে ছয় ঘণ্টার মধ্যে আসতে পারলে এর চিকিৎসা খুব নিখুঁতভাবে করা সম্ভব।
প্রশ্ন : আর যদি এর চেয়ে বেশি দেরি হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে কি একেবারেই কিছু করার নেই?
উত্তর : যখন পারবে তখনই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব। তবে আগে এলে ভালো।
প্রশ্ন : এই অস্ত্রোপচারগুলোর পরবর্তী সময়ে রোগীদের প্রতি আপনাদের পরামর্শ কী থাকে?
উত্তর : এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর ফলোআপে থাকতে হয়। যদি অ্যান্টিরিয়র লেয়ার আঘাতপ্রাপ্ত হয়, প্রথমে এই লেয়ার ঠিক করতে হবে। তার পর যদি রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে দুই সপ্তাহের মধ্যে অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে ভিট্রেওরেটিনাল সার্জারি করে। নয়তো এমন সমস্যা হবে, যেটা ঠিক করা সম্ভব হবে না।
প্রশ্ন : একটি বিষয় আমরা দেখি, যারা ক্ষেতখামারে কাজ করে, সেখানে চোখে আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধানের গুঁড়া লেগে এই জাতীয় সমস্যা আমাদের কৃষক ভাইদের হয়ে থাকে। তাঁদের এ সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : এমন হলে তাঁদের উচিত হবে একটি অ্যান্টিবায়োটিক আইড্রপ দিয়ে দেওয়া। তবে যেসব ড্রপে স্টেরয়েড নেই, সেগুলো দিতে হবে। স্টেরয়েড ক্ষতি করবে। এটি ইনফেকশনকে বাড়িয়ে দেবে। সে ক্ষেত্রে একটি অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ দিয়ে চোখের চিকিৎসকের কাছে পাঠাতে হবে। এ ছাড়া বিশেষ ধরনের চশমা চোখে দিয়ে এই কাজগুলো করতে পারলে ভালো। যেকোনো আঘাতে চোখে তাকাতে কষ্ট হয়, ফটোফোবিয়া হয়, সে ক্ষেত্রে একটি সানগ্লাস তারা পরে নিতে পারে।