কীভাবে চিনবেন ডেঙ্গু মশা?
চারদিকে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। মশা একটু কামড়ালেই অনেকে ভাবছেন, এই বুঝি ডেঙ্গু মশা কামড়ালো। তবে সব মশাই কিন্তু ডেঙ্গু নয়। ডেঙ্গু মশা দেখতে অন্যান্য মশার চেয়ে একটু আলাদা।
আসলে ফিমেল এডিস ইজিপ্টাই মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে। আফ্রিকা থেকে উৎপন্ন এ মশা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডেঙ্গু জ্বর ছড়াচ্ছে। ডেঙ্গু মশা দেখতে একটু ছোট আকৃতির হয়। এডিস ইজিপ্টাইর পিঠে বীণার মতো চিহ্ন থাকে। ডেঙ্গু মশার শরীরে কালো-সাদা ডোরাকাটা দাগ থাকে। বাঘের শরীরের ডোরাকাটা দাগের সঙ্গে মিল আছে বলে টাইগার মশাও বলা হয়। ডেঙ্গু মশা সাধারণত সকাল ও বিকেলে কামড়ায়।
ডেঙ্গু মশার কামড়ে সাধারণত ব্যথা বা চুলকানি থাকে না। অন্য মশা যখন কোথাও বসে, তখন ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে বসে; কিন্তু ডেঙ্গু মশা বসলে সমান্তরালভাবে বসে।
ফিমেল এডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির মশা সাধারণত স্বচ্ছ-পরিষ্কার পানিতে থাকে। ফেলে দেওয়া টায়ার, পাত্র, নির্মীয়মাণ বাড়ির চৌবাচ্চার মতো জায়গায়, যেখানে বৃষ্টির পানি জমে বা অন্য কোনো কারণে পানি জমে, এমন জায়গায় এ মশা ঘর বাঁধতে পারে। এরা সেখানেই ডিম পাড়ে।
এ মশাগুলোর সমুদ্রপৃষ্ঠে যেমন থাকতে পারে, তেমনই ৪০০ থেকে ৬০০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায়ও নিমেষে উড়ে বেড়াতে পারে। প্রায় তিন মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে ডেঙ্গুর মশারা। প্লেন, ট্রেন বা যেকোনো গণপরিবহনে করে এক জায়গা থেকে অন্যত্র চলেও যেতে পারে।
গবেষণা থেকে জানা যায়, ৫০ মিটার দূর থেকেই মানুষের নিশ্বাসের সঙ্গে বের হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের গন্ধ চিনতে পারে মশা। এদিকে মানুষের কাছাকাছি চলে এলেই ২০ সেন্টিমিটার দূর থেকে মশা ঘামের গন্ধ পায়। ঘামের মধ্যে মিশে থাকা ল্যাকটিক এসিড শনাক্ত করেই কামড়াতে আসে। এর মধ্যে রয়েছে রঙেরও প্রভাব। অন্তত ১০ মিটার দূর থেকেই মশা গাঢ় লাল, গাঢ় নীল, কালো ও অতি গাঢ় রংগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারে। এসব রঙের দিকে ছুটে আসে মশা। তাই হালকা রঙের পোশাক মশা এড়াতে অনেকটাই সাহায্য করে।
মানুষের গায়ের গন্ধ মশার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঘামের গন্ধ এমনিই টেনে আনে মশাকে। তার ওপর সেই ঘামে যদি ইথাইল অ্যালকোহলের গন্ধ মিশে থাকে, তাহলে সেই গন্ধ মশাকে আরো প্রলুব্ধ করে। তাড়াতাড়ি ঘাম মুছে নিলে, পচা দুর্গন্ধযুক্ত এলাকা এড়িয়ে চললে, আশপাশের পরিবেশ সুন্দর রাখলে কিছুটা রেহাই মিলবে ডেঙ্গু মশা থেকে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা।