গরম পানি দিয়ে গোসল, ভালো না খারাপ?
শীতে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। আবার কিছু ত্বকের সমস্যা রয়েছে, যেগুলো শীতকালে বেড়ে যায়। আজ ২ ডিসেম্বর এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৫৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. রোকন উদ্দিন। তিনি এনাম মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
urgentPhoto
প্রশ্ন : শীত বাড়লে ত্বকের কিছু সমস্যা হয় আমরা জানি। আবার কিছু সমস্যা নতুন করেই হয়। শীতে সাধারণত ত্বকে কী কী সমস্যা হয়?
উত্তর : আমরা জানি শুষ্কতা শুধু প্রকৃতির ওপর প্রভাব ফেলে না। সেটি আমাদের শরীরের ওপরও প্রভাব ফেলে। এই সময়ে ত্বকের শুষ্কতা হলো এক নম্বর সমস্যা। আর দ্বিতীয় হলো, অনেক অসুখ রয়েছে যেখানে শুষ্কতা আগে থেকে থাকতে পারে। আবার অনেক অসুখে রোগীরা ভুগে থাকে। যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ। এগুলোতেও ত্বকে সমস্যা হতে পারে। ৫০ বছরের পর তেল তৈরি করার গ্রন্থিগুলোর কার্যক্রম কমে যায়। তখন সাধারণত বছরজুড়ে শুষ্কতার বিষয়টি থাকে। আবার ১২ বছরের নিচের বাচ্চাদের, যাদের তেল তৈরি করার গ্রন্থির কার্যক্রম নেই, তাদের শুষ্কতা পুরো বছরেই থাকে। তবে শীতে এটি বেড়ে যায়।
প্রশ্ন : শীতে ত্বকের শুষ্কতা বেড়ে গেলে সমস্যা কী?
উত্তর : শুষ্কতা হলে রোগী প্রথম ইচিং বা চুলকানির সমস্যা অনুভব করে। এর পেছনে পেছনে অনেকগুলো সমস্যা চলে আসতে পারে। যখনই আমরা চুলকাই ওই জায়গাগুলো উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি যে আমাদের চারপাশে ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, ভাইরাস রয়েছে, অনেক জীবাণু আছে। এবং এগুলো খুব সহজে আমাদের শরীরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তখন শরীরে সংক্রমণ তৈরি করে। পরবর্তীকালে এ থেকে জটিলতা হতে পারে। এটা যে শুধু শারীরিক সমস্যা করে বিষয়টি সেটি নয়। যেমন বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চুলকানি হলে তারা সাধারণত ঘুমাতে পারে না। ঘুমের অসুবিধার জন্য তার স্কুলে সমস্যা হয়, খাবার কম খায়। শিশুগুলো বিরক্ত থাকে। এই না ঘুমাতে পারার জন্য শিশুর মানসিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আসলে চুলকানি জিনিসটিকে হয়তো খুব সাধারণ সমস্যা মনে হয়। এটি হয়তো ঠিক হয়ে যায়। তবে এর ধারাবাহিকতায় দেখা যায় বচ্চাগুলো নিস্তেজ হয়ে যায়। তার ঘুমের সমস্যা, আচরণগত পরিবর্তন, ওজন কম, বিরক্তি, স্কুলের ফলাফল খারাপ করা ইত্যাদি সমস্যা হয়।
প্রশ্ন : ত্বকের কি কিছু রোগ রয়েছে যেটি সাধারণত সারা বছর হতে পারে। তবে শীত এলে কি রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়?
উত্তর : এ রকম অসুখ অনেকগুলোই রয়েছে। যেমন : শীতকালে সোরিয়াসিস বেড়ে যায়। সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বেড়ে যায়। জন্মগত ত্রুটি যেমন ইকথায়োসিস রয়েছে, সেগুলো শীতকালে অনেক প্রকট আকার ধারণ করে। আবার কিডনি অসুখের ক্ষেত্রে অনেকগুলো সমস্যা হয় ত্বকে। সেগুলো শীতের সময় বেশি আসে।
শরীরের খোলা ত্বকগুলোতে এই শুষ্কতা বেশি হয়। বাচ্চার বিভিন্ন জায়গায় চুলকানোর জন্য চামড়া উঠে যায়, কালো হয়ে যায়। একে আমরা এক্সিমাটাইজেশন বলি। সে সমস্যাগুলো নিয়েও আমাদের কাছে রোগীরা আসে। এ ছাড়া বাচ্চাদেরও সোরিয়াসিস হতে পারে। বড়দেরও সোরিয়াসিস হতে পারে। সোরিয়াসিসে চামড়াগুলো মোটা হয়ে যাবে, খোসার মতো উঠবে। আর নিম্নবিত্তদের ক্ষেত্রে অনেক লোক একসঙ্গে থাকার জন্য সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।
শীতকালে আমরা রোদে বেশি যাচ্ছি। তাপের কারণে গরমের সময় আমরা সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকি। তবে শীতের সময় আমরা এই সুরক্ষা নিই না। এতে ফ্রিক্যালস, মেছতা, ম্যালাসমা- অনেকগুলো চামড়ার কালো হওয়াজনিত সমস্যা বেড়ে যায়।
আপনি খেয়াল করে দেখবেন ছেলে হোক বা মেয়ে, যারা ঢাকনাওয়ালা জুতা পরে, তাদের পা তুলনামূলকভাবে ভালো থাকে। তবে যারা স্যান্ডেল পরছে, তাদের পা এমনিই শুষ্ক থাকে। শীতের সময় এটা বেড়ে যায়। পা ফাটা নিয়ে রোগীদের অভিযোগ থাকে। শীতের সময় এই রোগগুলো বেড়ে যায়।
প্রশ্ন : শীতে কি চুলে খুশকি বাড়ে?
উত্তর : হ্যাঁ, শীতে চুলের খুশকি বাড়ে। গরমের সময় এটি সূর্যের আলো এবং ধুলাবালির কারণে বাড়বে। গরমের সময়েও এই সমস্যা বাড়ে। শীতের সময়ও এই সমস্যা বাড়ে।
প্রশ্ন : একজন মানুষ যদি এসব সমস্যায় আক্রান্ত হোন, তার করণীয় কী? বিশেষ করে, শুষ্ক ত্বক যাদের, তারা কি ময়েশ্চারাইজার বা বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করবেন? এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : আসলে সমস্যাগুলো সাধারণত হচ্ছে যে অংশগুলো খোলা থাকছে সেখানে। ঢাকা অংশগুলোতে সাধারণত সমস্যাগুলো বেশি হচ্ছে না। তাহলে ফুলহাতা জামা বা প্যান্ট পরে আমরা যদি ওই অংশগুলো ঢেকে রাখি এই সমস্যাগুলো থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকতে পারি।
রোদে বের হলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে এবং সানস্ক্রিন জাতীয় ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। শীতের সময় আমরা রোদে বেশি যাই, মিষ্টি রোদ, আরাম লাগে। রোদের খরতাপ আমাদের কোনো ক্ষতি করে না। তবে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শরীরের জন্য খারাপ।
শীতের সময় চামড়া খারাপ হওয়ার বড় কারণ হচ্ছে গরম পানি। গরম পানি দিলে শরীরের প্রাকৃতিক যে তেল আছে সেটি ধুয়ে যায়। প্রোটিনগুলোও চলে যায়।
প্রশ্ন : গরম পানি দিয়ে গোসল করা কি খারাপ?
উত্তর : অবশ্যই খারাপ। তবে কথা হচ্ছে, যার অ্যাজমা আছে, যে বয়স্ক রোগী, তাকে তো এই পরামর্শ দিলে হবে না। সে কী করবে? সে গোসলের আগে, পরে তেল ময়েশ্চারাইজার দেবে।