সহজেই চিকিৎসকের অ্যাপয়েনমেন্ট দেবে ডক্টরোলা
২০১৩ সাল। আড্ডার ফাঁকে চার বন্ধুর মাথায় ভাবনা এলো, সবার জন্য কিছু একটা করতে হবে। এমন একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করতে হবে, যেটি কেবল বাণিজ্যিকই হবে না, সঙ্গে মানুষের উপকারও করবে। ভাবনাকে বাস্তবে পরিণত করতে লেগে গেলেন তাঁরা। এমন এক প্রতিষ্ঠান চালু করলেন তাঁরা, যেটি জনগণকে সহজেই চিকিৎসকের অ্যাপয়েনমেন্ট দেবে এবং আপনার উপযুক্ত চিকিৎসকের খোঁজ জানাবে। নাম ‘ডক্টরোলা’।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রথম থেকে শুরু হয় এই অ্যাপয়েনমেন্ট সার্ভিস। এরপর ২০১৫ সালে পুরোদমে শুরু হয়ে যায় ডক্টরোলার কাজ। মূলত সারা দেশের মানুষকে সঠিক ডাক্তার খুঁজতে কাজ করা, অ্যাপয়েনমেন্ট নিশ্চিত করা এবং ফলোআপের জন্য সাহায্য করা—এ তিনটি বিষয়ে কাজ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে, সুদূরপ্রসারী কাজ এবং মানুষের প্রকৃত উপকার করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন ডক্টোরোলার কর্মীরা।
ডিরেক্টর অপারেশন সানজিদুল বারী প্রতিষ্ঠানটির জনবল সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় ৪০০ অধ্যাপক যুক্ত রয়েছেন। এ ছাড়া চিকিৎসক যুক্ত রয়েছেন প্রায় ছয় হাজারের ওপরে। তিনশর ওপর হাসপাতাল এবং ডায়াগনসিস সেন্টার সঙ্গে যুক্ত আছে। আমরা রোগীদের এসব জায়গায় অ্যাপয়েনমেন্ট করে দিতে সাহায্য করে থাকি।’
কীভাবে হয় এই অ্যাপয়েনমেন্ট কার্যক্রম
সাধারণত তিনভাবে এই অ্যাপয়েনমেন্ট নেওয়ার কার্যক্রম করা হয়—অনলাইনের মাধ্যমে, টেলিফোনের মাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।
অনলাইন
www.doctorola.com এ সার্চ করে পাওয়া যায় অ্যাপয়েনমেন্টের ফরম। এই ওয়েবসাইটিতে ঢুকলে জানতে চাইবে আপনার কী ধরনের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রয়োজন, কোন শহরে ও কোন এলাকায় দেখালে সুবিধা হয়, কোন তারিখে দেখাতে চান—এসব বিষয়ে। পাশাপাশি চিকিৎসকের তালিকা দেওয়া হয়।
রোগী সেখান থেকে চিকিৎসক বাছাই করে। তখন সেখানে চিকিৎসককে দেখানোর সম্ভাব্য সময়গুলো শো করে। তারপর রোগী তার প্রয়োজন অনুযায়ী সময় নির্বাচন করে। এ সময় তাকে মোবাইল নম্বর দিতে হয়, অনুরোধ নিশ্চিত করার জন্য।
এরপর রোগীকে কলসেন্টার থেকে ফোন করা হয়। এরপর যদি সব ঠিকঠাক থাকে, তাহলে অ্যাপয়েনমেন্ট-সংক্রান্ত তথ্য মোবাইলের মেসেজের মাধ্যমে চলে যায়। সেখানে ডাক্তারের নাম, চেম্বারের ঠিকানা, তারিখ ও সময় চলে যায়। এ রকম একটি মেসেজও চিকিৎসকের কাছে চলে যায়।
এর পর নির্দিষ্ট তারিখের একদিন আগে ফোনকলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় অ্যাপয়েনমেন্টের বিষয়ে। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর রোগীর কাছ থেকে ফোনের মাধ্যমে জানা হয় সে গিয়েছিল কি না, ফলোআপ করতে বলা হয়েছে কি না, কেমন লেগেছে চিকিৎসকের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে।
ফোনকল
এ ছাড়া অনলাইনে না পারলে সরাসরি ফোনকল করেও ফোনের মাধ্যমেও অ্যাপয়েনমেন্ট নেওয়া যাবে। ফোন নম্বর হলো : ০৯ ৬০৬ ৭০৭ ৮০৮, মোবাইল : ০১৭৯০ ৮৮৮ ৭৭৭।
ফেসবুক
এ ছাড়া ফেসবুকের (Facebook.com/doctorolafans) মাধ্যমেও অ্যাপয়েনমেন্টের কাজটি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুল মতিন ইমন বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ রোগ জটিল না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত চিকিৎসকের কাছে যায় না। তাদের সচেতনতা জরুরি। অ্যাপয়েনমেন্ট দেওয়ার পাশাপাশি আমরা স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্নভাবে কাজ করছি। এ জন্য আমরা ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে, কুইজের মাধ্যমে, মানুষকে সচেতনতার কাজ করে থাকি। প্রায় ৪২ থেকে ৪৫ হাজার লোক আমাদের ফেসবুক পেজ দেখে।’
‘এ ছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ফিজিক্যাল মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়। ডাক্তার নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মেডিকেল ক্যাম্প করি’, বলেন ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
আবদুল মতিন ইমন বলেন, “এ ছাড়া করপোরেট লোকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ‘বিজি লাইফ হেলথ কানেক্ট’ নামে একটি অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। এখানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়। তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করি। এ ছাড়া ফেসবুক বেইজ মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়। এখানে ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষের সমস্যা জানতে চাওয়া হয় এবং এর সমাধানের জন্য সাধারণ উত্তরগুলো দেওয়া হয়।’
আসলে রোগকে অবহেলা করা ঠিক নয় এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি—এ বিষয়টি মানুষকে বোঝানো দরকার জানিয়ে আবদুল মতিন ইমন বলেন, ‘মূলত জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে আমাদের এসব সচেতনতামূলক কার্যক্রম। আমাদের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী কাজ করা। আমরা চিকিৎসক এবং চিকিৎসার মিথগুলো দূর করতে চাই।’
প্রতিষ্ঠানটির ডিরেক্টর অপারেশন সানজিদুল বারি বলেন, ‘সাধারণত দেখা যায়, লোকেরা পরিচিত চিকিৎসক বা নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসকের কাছে ঘুরে ঘুরে যায়। তবে আরো ভালো ভালো চিকিৎসকও কিন্তু রয়েছে। এসব বড় বড় চিকিৎসকের অ্যাপয়েনমেন্ট পেতে কয়েক মাস চলে যায়। এতে রোগ জটিল হতে থাক। এ ছাড়া আরো অনেক চিকিৎসক রয়েছেন এবং তাঁরা অভিজ্ঞ—এসব তথ্য মানুষ ভালোভাবে জানে না। তাই সেখানে যায় না।’
প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে সাড়া পেতে শুরু করেছে জানিয়ে ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুল মতিন ইমন এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা ১৫০ থেকে ২০০টি ফোনকল পাই। এর মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ রোগী বিষয়টি নিয়ে আবার যোগাযোগ করে।’