বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ
গ্লুকোমা প্রতিরোধে কী করবেন
৬ থেকে ১২ মার্চ বিশ্ব গ্লুকোমা সচেতনতা সপ্তাহ। গ্লুকোমা নিয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. ছায়েদুল হক। তিনি পিরোজপুর সদর হাসপাতালে সিনিয়র পরার্শক হিসেবে কর্মরত আছেন। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৩১৯তম পর্বে অংশ নেন তিনি।
প্রশ্ন : ৬ থেকে ১২ মার্চ ‘বিশ্ব গ্লুকোমা সচেতনতা সপ্তাহ’। এই যে সপ্তাহটি পালিত হচ্ছে, এর উদ্দেশ্য কী?
উত্তর : এই সপ্তাহ পালনের উদ্দেশ্য গ্লুকোমার ওপর সাধারণভাবে একটি সচেতনতা তৈরি করা। সারা পৃথিবীতেই গ্লুকোমার সমস্যা চলছে। যেহেতু আমরা জানি গ্লুকোমা হলো এমন একটি চোখের রোগ, যার শেষ পরিণতি হলো অন্ধত্ব। কঠিন একটি বাস্তবতা হলো রোগী বুঝতে পারে না তার গ্লুকোমা হয়েছে। বাইরে থেকে চক্ষু চিকিৎসকও বলতে পারবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না গ্লুকোমা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। যদি একটি সচেতনতা থাকে কাদের গ্লুকোমা হতে পারে বা কোন বয়সে গ্লুকোমা হতে পারে, সে রকম একটি অবস্থানে সে যদি যায় এবং সে যদি তার পরীক্ষাটি নিজে থেকে করায়, তাহলে একজন চক্ষু চিকিৎসক বলে দিতে পারবেন তার গ্লুকোমা আছে অথবা নেই। কাজেই এই সচেতনতা সৃষ্টি করা খুব জরুরি একটি বিষয়। যেটা অন্ধত্বকে নিবারণ করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ।
প্রশ্ন : গ্লুকোমা সপ্তাহ কি বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে?
উত্তর : গ্লুকোমা সপ্তাহ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে। এটি পৃথিবীর সব দেশেই পালিত হচ্ছে। এটি একটি খোলা অনুষ্ঠান। বিভিন্ন দেশে চক্ষু বিশেষজ্ঞদের একটি ফোরাম থাকে। যেমন : আমাদের দেশে ফোরাম রয়েছে। আমাদেরও রয়েছে। বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতি। আরেকটি ফোরাম রয়েছে বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটি। এভাবে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওই আয়োজনটি করে। নিজেদের মতো করে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সামাজিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে তারা এই অনুষ্ঠান করে। কারণ যেন দেশে সচেতনতা তৈরি করতে পারে।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে এই সপ্তাহটা পালনের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
উত্তর : আমাদের দেশে অনুষ্ঠানটি বেশি পুরোনো নয়। প্রায় সাত বছর ধরে চলছে এই অনুষ্ঠান। আমরাও কয়েক বছর ধরে এর সঙ্গে জড়িত। চক্ষু চিকিৎসক যারা রয়েছি তারা সাধারণত সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগটা নেই। উদ্যোগটা কিন্তু শুধু একতরফা নয়। মিডিয়া একটি মাধ্যম হতে পারে সচেতনতা বৃদ্ধির। এখন ফেসবুক আছে, সেটি একটি মাধ্যম হতে পারে। হয়তো অনুষ্ঠান সম্বন্ধে পোস্ট দিল। সেটিও একটি সচেতনতামূলক কার্যক্রম হতে পারে। সার্বিকভাবে বিষয়টা হলো যে কতজন লোক গ্লুকোমা সম্বন্ধে জানল। দুটো জিনিস জানতে হবে। একটি হলো তার গ্লুকোমা আছে কি নেই, আরেকটি হলো গ্লুকোমা যে অন্ধ করে দেয় এই জ্ঞানটা তার থাকতে হবে। এই দুটো জিনিস আমরা যদি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে এই আয়োজনের সার্থকতা থাকবে।
প্রশ্ন : গ্লুকোমা সম্বন্ধে বিস্তারিত বলুন।
উত্তর : আমাদের শরীরে যেমন রক্তচাপ আছে, যার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। চোখেরও কিন্তু একটি চাপ আছে। যেকোনো একটি বদ্ধ জিনিসের মধ্যে যদি তরল থাকে, তাহলে এই তরল একটি চাপ তৈরি করে। চোখের যে তরল থাকে, সেটি চাপ প্রয়োগ করে। একে আমরা বলি ইনট্রা অকুলার প্রেসার। এর একটি ভিত্তি হলো ২১ মিলিমিটার অব মার্কারি। এর বেশি যদি হয় বা চাপ যদি বেশি থাকে, তা স্নায়ুকে নষ্ট করে দেয়। এটিই গ্লুকোমা। চোখের চাপ বেশি হবে। অপটিক নার্ভ নষ্ট হয়ে যাবে এবং দেখার বিষয়টি ব্যাহত হবে। সাধারণভাবে একেই গ্লুকোমা বলি।
প্রশ্ন : গ্লুকোমা কাদের হতে পারে?
উত্তর : ৪০ বছর বয়সকে আমরা একটি মূল সময় ধরি। ৪০ পার হলেই এই গ্লুকোমা শুরু হয়। যত বয়স বাড়তে থাকে, তত এর ঝুঁকি বাড়ে। এখন ৪০ বছরে যদি আমরা একটি পরিসংখ্যান করে দেখি, দেখব যে এটি হতে পারে ১ শতাংশ বা ০.৯ শতাংশ। আর যখন ৭৫ বছরের ওপর বয়স হবে, তখন দেখবেন যে এর ঝুঁকি চার থেকে পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। তার মানে যত বয়স বাড়তে থাকবে, গ্লুকোমার ঝুঁকিও বাড়তে থাকবে। এটা সারা পৃথিবীতে একই রকম।
ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমার বিষয়ে আমরা কথা বলি। অন্য ধরনের গ্লুকোমা আছে যেগুলো নীরব ঘাতক নয়। তবে এটি নীরব ঘাতক। সেই জন্য আলোচনার ক্ষেত্রে ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমার কথাটাই বলি। পারিবারিক প্রভাব এখানে খুব মারাত্মক। যদি বাবা-মায়ের থাকে, তবে সন্তানসন্ততি বা তার বংশধরদের দিকে এই রোগটি যাবে। জিনগতভাবে এর একটি প্রভাব থেকে যাচ্ছে। এরপরও আরো কিছু কারণ রয়েছে। যাদের মায়োপিয়া থাকে, তাদের গ্লুকোমা বেশি হতে পারে। ডায়াবেটিস যাদের, তাদের এই সমস্যা হয়। উচ্চ রক্তচাপ যাদের থাকে, তাদের এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আরেকটি হলো চোখের চাপ, যেটি স্বাভাবিক আবার বেশিও। যেমন : একজনের ১৪ হতে পারে, আরেকজনের ২০। দুটোই স্বাভাবিক। তবে যার শুরুতে ২০ তার ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে গ্লুকোমার আশঙ্কা বেড়ে যাবে।
প্রশ্ন : তাহলে চোখের স্ক্রিনিং তো নিয়মিত করা জরুরি?
উত্তর : নিয়মিত করতে হবে। আমরা তো আগেই বলেছি যে, রোগটি উপসর্গ দিচ্ছে না। তাই স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে একে শনাক্ত করতে পারি। আসলে তিনটি কাজ করতে হয়। চোখের চাপ কত। আরেকটি হলো অপটিক নার্ভের যে কথা বললাম, যেটির শেষ কিন্তু চোখের ভেতরে। এটি দেখলে বুঝতে পারি। আরেকটি হলো নার্ভের ফাংশন দেখার জন্য একটি পরীক্ষা আছে। ফিল্ড এনালাইসিস। এই তিনটি জিনিস দেখলেই আমরা বুঝব। অন্য সমস্যা নিয়ে এলেই তার এই জিনিসটি দেখে দিতে হবে। গ্লুকোমা প্রতিরোধে তাই স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন।