বিশ্ব ডাউন সিন্ড্রোম দিবস : প্রতিরোধই একমাত্র চিকিৎসা
ডাউন সিন্ড্রোম এমন একটি জেনেটিক রোগ যার এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নেই। আমাদের শরীরে ৪৬টি ক্রোমোসোম থাকে,২৩টি আসে মায়ের কাছ থেকে এবং ২৩টি বাবার কাছ থেকে। কিন্তু দুর্ভাগা ডাউন শিশুদের ক্রোমোসোম ৪৬টির পরিবর্তে থাকে ৪৭টি। এতেই ঘটে সব বিপত্তি। ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক জন লগডন ডাউন সর্বপ্রথম এ রোগটি বর্ণনা করেন। ১৯৫৯ সালে ডা. জেরমি লিচিউন জানান যে, এটি ৪৭টি ক্রোমোসোমের ফল। ২০০৬ সাল থেকে ২১ মার্চকে বিশ্ব ডাউন সিন্ড্রোম দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
আমেরিকায় আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও প্রতিবছর ৬ হাজার শিশু ডাউন হিসেবে জন্ম নেয়। আমাদের দেশে এর সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও চলতে ফিরতে এমন শিশুর হরহামেশাই দেখা পাওয়া যায়। ডাউন শিশুদের দেখেই চেনা যায়। এদের চিবুক ছোট, ঘাড় খাটো, জিহ্বা বড়, চ্যাপ্টা মুখ, চোখ ক্ষুদ্র, পায়ের বুড়ো আঙ্গুল ও এর পরের আঙ্গুলের মধ্যে বেশ ফাঁকা, পুরো হাতের একটা দাগ, আকারে বেশ ছোট ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। ডাউন শিশুরা জন্মের সময় তার সমসাময়িকদের মতোই থাকে। এ শিশুদের মাংসপেশী থাকে দুর্বল, তাই অন্য শিশুদের চেয়ে এরা দেরিতে বসে, হামাগুড়ি দেয় ও হাঁটে। এরা বুকের দুধ ভালো মতো টেনে খেতে পারে না। কথা বলে দেরিতে। এদের বুদ্ধিও থাকে কম।
এ শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ দেখা যায়। কানে শোনে না, তাই কথাও বলতে পারে না। লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। চোখে কম দেখে, ছানি পড়া, গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়। বুদ্ধি কম থাকে বলে এরা স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। এরা অন্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়। অন্যের দয়ায় চলতে হয়। এমন শিশুদের ছোটবেলায় শিশু কার্ডিওলজিস্ট, নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হয়।
হেয়ারিং এইড ব্যবহার করে কানে শোনার ব্যবস্থা করলে এরা কথা বলতে পারে এবং অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এদের জন্য প্রয়োজন হয় স্পিচ থেরাপির। বিশেষায়িত স্কুলে লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থা করা যায়। এদের দৈনন্দিনের কাজগুলো শেখাতে হবে ধৈর্য ধরে।
এমন শিশু না চাইলে বাচ্চা নিতে হবে আগেই। দেখা গেছে ৩০ বছর বয়সী মায়েদের মধ্যে এমন শিশু জন্মের হার প্রতি এক হাজারে একজন, ৩৫ বছরে প্রতি ৪০০ জনে একজন ও ৪০ বছরে প্রতি ১০০ জনে একজন। গর্ভাবস্থায়ও নির্ণয় করা যায় ডাউন শিশু। গর্ভ ধারণের ১০-১৪ সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাম করে বোঝা যায় গর্ভস্থ শিশুটি ডাউন কি না। তবে শতকরা ৫ ভাগ ক্ষেত্রে ভুল হতে পারে। এজন্য রক্তের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায়। এ টেস্টগুলো হলো বিটা-এইচসিজি,আলফা ফিটোপ্রোটিন, ইনহেবিন-এ। যদি আরোও নিশ্চিত হওয়ার দরকার হয় তাহলে অ্যামনিওসেনটেসিস ও করিওনিক ভিলাস স্যাম্পলিং করতে হয়। এগুলো করতে হয় প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই। তাই সচেতন হতে হবে এখনই। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে এমন শিশুর হার কমানো সম্ভব।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।