হঠাৎ গরম থেকে এসেই ঠাণ্ডা পানি খাবেন না
নাক-কান-গলার বিভিন্ন সমস্যায় আমরা প্রায়ই ভুগে থাকি। নাক-কান-গলার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু।
বর্তমানে সলিমুল্লাহ কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৩৩৭তম পর্বে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
প্রশ্ন : নাক-গান-গলার অনেক রোগ হয়। সাধারণ রোগ হয়, অনেক জটিল রোগ হয়। এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হয়। সাধারণ রোগ বলতে আপনারা কোন রোগকে বুঝিয়ে থাকেন?
urgentPhoto
উত্তর : সাধারণ রোগ বলতে আমরা নাকে রাইনাইটিস, নাকের প্রদাহ, টনসিলাইটিস, ওরাল ক্যানডিডিয়াসিস, কানের ফাঙ্গাস, ওয়াক্স, কান পাকা এগুলো বুঝি। এ ছাড়া আরেকটি প্রচলিত রোগ আছে, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। এই রোগে সারা বিশ্বেই অনেক লোক ভুগে থাকে।
প্রশ্ন : অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, নাক দিয়ে সর্দি পড়া—এটি হয় কেন? কারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়?
উত্তর : অ্যালার্জিক রাইনাইটিস জেনেটিক রোগ। এ ছাড়া কিছু কিছু সাবসটেন্স অ্যালার্জি থাকতে পারে। তবে যেটা অ্যালার্জিক রাইনাইটিসটি জেনেটিক, একে পুরোপুরি দূর করা যাবে না। এটি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো একটি অসুখ। একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। অনেক কিছু পরিহার করলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যেমন : ধুলাবালি, ঠাণ্ডা, তাপমাত্রার তারতম্য। আবার হঠাৎ করে গরম থেকে এসে ঠাণ্ডা পানি খেলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। এটি করা যাবে না। সেখান থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। ঠাণ্ডা-গরমের তারতম্য হঠাৎ করে বেড়ে বা কমে যাওয়া পরিহার করা উচিত। যেমন ধরেন, সাইবেরিয়াতে মানুষ থাকে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। সৌদি আরবে আবার তাপমাত্রা প্লাস ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু দেখা যায়, গরমের মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টি হলো, তখন ঠাণ্ডা লেগে যায়। এসব পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন : গলার প্রচলিত সমস্যাগুলো কী কী?
উত্তর : গলার প্রচলিত সমস্যা হলো টনসিলাইটিস। তবে টনসিলাইটিস যদি ভাইরাসজনিত কারণে হয়, ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হয়, টনসিলাইটিস হলেই যে অস্ত্রোপচার করতে হবে, সেটা ঠিক নয়। ঠাণ্ডা এড়িয়ে যেতে হবে। টনসিলাইটিস হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
প্রশ্ন : অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় একটু আইসক্রিম খেলে গলাব্যথা শুরু হয়ে যায় অনেকের। সেটি কেন?
উত্তর : টনসিলাইটিস থেকে ভোকাল কর্ডে ইনফেকশন ছড়িয়ে যায়। তখন তার কণ্ঠ বসে যায়। ফেরিনজাইটিস, নেজাল ফেরিন জাইটিস, রাইনাইটিস, সাইনোসাইটিস, কানের ইনফেকশন ইত্যাদি হতে পারে।
প্রশ্ন : এটি থেকে মুক্তির জন্য আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : এটি থেকে মুক্তির জন্য পরামর্শ হলো, ঠাণ্ডা পানি পান করা যাবে না। কুসুম গরম পানি পান করা উত্তম। আপনি জানেন, বিশ্বের অনেক দেশ আছে, যারা গরম পানি খায়। যেমন চীন। তাদের মধ্যে টনসিলাইটিস হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম। তাই তাকে এই ঠাণ্ডা এড়িয়ে যেতে হবে। ঠাণ্ডা কোনো খাবার খাওয়া যাবে না। আইসক্রিমজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। বিশেষ করে যাদের ঠাণ্ডায় অ্যালার্জি আছে, তাদের অ্যালার্জিক টনসিলাইটিস হয়। অ্যালার্জিক ভোকাল কর্ড প্রদাহ হয়। সেই জায়গা থেকে তাকে দূরে থাকতে হবে।
প্রশ্ন : কানের প্রচলিত সমস্যাগুলো কী?
উত্তর : কানের প্রচলিত সমস্যাগুলো হলো, ৫ থেকে ১০ ভাগ লোক সিএসওএম। কান পাকা রোগে ভুগে থাকেন। এটিও আসলে আসে প্রধানত গলা থেকে। ন্যাজোফেনিরজাইটিস, ফেরিনজাইটিস, এডিনয়েড থাকলে বাচ্চাদের সেখান থেকে এটি আসে। অপুষ্টি, জন্মের সময় কম ওজন এগুলো বেশির ভাগ রোগের কারণ।
প্রশ্ন : কান পাকা রোগ শিশুদের বেশি হয়, এর কারণ কী?
উত্তর : শিশুদের যে ইউসটেশিয়ান টিউব, সেটি থাকে অনুভূমিক। কাজেই তাদের গলার মধ্যে যে সমস্যা হয়, বিশেষ করে এডিনোঢয়েড, টনসিলাইটিস—সেটি থেকে সংক্রমণ কানে চলে যায়।