পারকিনসন্স একটি স্নায়ু রোগ
পারকিনসন্স একটি পুরনো স্নায়ু রোগ। ১৮১৭ সালে জেমস পারকিনসন এ রোগের বিষয়ে বর্ণনা দেন। ব্রিটেনের প্রতি ৫০০ জনে একজন এ রোগে আক্রান্ত হয়।
কারণ
এ রোগের কারণ কী তা আজো জানা যায়নি। মস্তিষ্কের সাবসটেনশিয়া নিগ্রা নামক স্থানে ডোপামিনযুক্ত স্নায়ু ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে এ রোগ দেখা দেয়। তবে মনে করা হয় জেনেটিক মিউটেশন বা রূপান্তরের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের টক্সিন ও ভাইরাসের সংক্রমণে এ রোগের লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণত বেশি বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা বাড়ে। বংশে কারো এ রোগ থাকলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা চার-ছয় গুণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া যারা আগাছা ও পোকামাকড় দমনের ওষুধ ছিটানোর কাজে জড়িত তাদের মধ্যে এ রোগের হার বেশি বলে গবেষণায় জানা গেছে।
লক্ষণ
এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় অনেক পরে। শুরুতে লক্ষণ এতটা বোঝা যায় না। সাধারণত হাতের কাঁপুনির মাধ্যমে এ রোগ লক্ষণ প্রকাশ করে থাকে। ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। কোনো কাজের সময় কাঁপুনি বেশি হয়। তবে বিশ্রাম নেওয়ার সময়ও কাঁপুনি দেখা যায়, এটি এ রোগের অন্যতম লক্ষণ। এ সময় হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হয়। হাঁটা শুরু করতে দেরি হয়। সামনের দিকে ঝুঁকে ছোট ছোট পায়ে হাটতে থাকে। হঠাৎ করে ঘুরতে গেলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কোনো কাজ শুরু করতে দেরি হয়। মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়, যেমন বাহু বাঁকাতে গেলে বেশ বেগ পেতে হয়। এ রোগে আক্রান্তদের চেহারা দেখে মনে হবে তাদের কোনো আবেগ নেই। গলার স্বর ভারী হয়। কথায় জড়তা ভর করে। হাঁটার সময় হাত শরীরের সাথে লেগে থাকে। বিষণ্ণতায় বেশি ভোগে।
রোগ নির্ণয়
এ রোগ নির্ণয় করা যায় এমন কোনো পরীক্ষা নেই। চিকিৎসকরা রোগের ইতিহাস শুনে এবং শারীরিক পরীক্ষা করে এ রোগ সম্বন্ধে নিশ্চিত হন।
চিকিৎসা
এ রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই। রোগের লক্ষণ কমানোর জন্য কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। লেভোডোপা ও কার্বিডোপা এ ধরনের ওষুধগুলো চিকিৎসকরা সেবন করার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া ব্রোমোক্রিপটিন, সেলেজিলিন, এমানটিডিন, এন্টিকলিনার্জিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া সার্জারি করা যায়। তবে আমাদের দেশে তা হয় না বললেই চলে।
এ রোগ পুরোপুরি ভালো হয় না। তাই এ রোগে আক্রান্তদের ওষুধ সেবনের পাশাপাশি জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করা জরুরি। এ রোগে আক্রান্তদের পুষ্টিকর সুষম খাবার খেতে হবে। প্রতিদিনের খাবারে শাকসবজি, ফলমূল থাকতে হবে। আক্রান্তদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়। এ জন্য ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়ার পাশপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আক্রান্তরা হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে আহত হন। আবার বয়স বেশি বলে পড়া থেকে ভেঙে যায় হাড়। এটি প্রতিরোধ করতে হলে সচেতন হতে হবে। হাঁটার সময় তাড়াহুড়া করবেন না। কেউ ডাকলে হঠাৎ করে না ঘুরে, আস্তে আস্তে ইউ-টার্ন নিন। হাঁটার সময় কোনো কিছু বহন করবেন না। এমন পোশাক পরুন যেটিতে বোতাম কম বা চেইন আছে।
এ রোগ কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়নি। তবে গবেষকরা বলেছেন কফি জাতীয় তরল পানে এর ঝুঁকি কমে।
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু, মেডিকেল অফিসার, সিভিল সার্জন অফিস, গোপালগঞ্জ