হাঁটু প্রতিস্থাপন সার্জারি বাংলাদেশেই সম্ভব
হিপ অ্যান্ড নি রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি বা পৃষ্ঠদেশ বা হাঁটু প্রতিস্থাপন সার্জারি অনেকেরই দরকার পড়ে। বাংলাদেশে এখন খুব চমৎকারভাবে এই সার্জারি করা হচ্ছে।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪১৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. পারভেজ। বর্তমানে তিনি ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : হিপ অ্যান্ড নি রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি বলতে আমরা কী বুঝি।
উত্তর : যখন হিপ এবং নি (পৃষ্ঠদেশ ও হাঁটু) ক্ষয় হয়ে যায় এবং যখন জটিলভাবে ক্ষয় হয়, তখন এই গাঁটকে প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। এই প্রতিস্থাপন করার যে সার্জারি একেই বলা হয় হিপ অ্যান্ড নি সার্জারি।
প্রশ্ন: এই দুই ধরনের সার্জারি কাদের ক্ষেত্রে আপনারা প্রযোজ্য মনে করেন?
উত্তর : আসলে সার্জারির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেকোনো লোকের সার্জারি আমরা করতে পারি না। যখন এভাসকুলার নেক্রোসিস অব দ্য ফিমোরাল হেড বা হেডটা নষ্ট হয়ে যায়, তখন আমরা সার্জারি করে থাকি। তা ছাড়া রিওমাটয়েড আরথ্রাইটিস, অস্টিও আরথ্রাইটিস, এনকোলজি স্পনডিলাইটিস হলেও সাধারণত পৃষ্ঠদেশ, গাঁট নষ্ট হয়ে যায়। আর হাঁটুর বেলায় সবচেয়ে বেশি নষ্ট হয় হলো অস্টিওআরথ্রাইটিসে। বয়স হলে, মানুষের পঞ্চাশোর্ধ্ব বা ষাটোর্ধ্ব হলে ক্ষয়জনিত রোগ অস্টিওআরথ্রাইটিস হয়। যার কারণে ব্যথা হয়। কিন্তু প্রাথমিকভাবে অস্টিওআরথ্রাইটিস হলেই যে আমরা অস্ত্রোপচার করব সেটি নয়। এটা সাধারণত জটিল অবস্থার অস্টিওআরথ্রাইটিসে করা হয়।
প্রশ্ন: এটার পেছনে কারণ কী।
উত্তর : আসলে যখন কিছুই করতে পারছে না, যখন হাঁটু ভাঁজ করতে পারছে না তখন করা হয়। যেহেতু একটা মানুষ তার একটি অঙ্গকে প্রতিস্থাপন করবে সেটা প্রাথমিক পর্যায়ে কখনো করা যায় না। গাঁটের স্থায়িত্ব যখন শেষ হয়ে যায়, তখনই আমরা একে প্রতিস্থাপন করি।
প্রশ্ন : রোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনারা কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখেন?
উত্তর: রোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেকোনো রোগের শেষ পর্যায়ে চলে গেলে সেটা করা হয়। সেটা এক নম্বর। দুই নম্বর হলো বয়স। খুব কম বয়সে আমরা প্রতিস্থাপন সার্জারি করি না। হিপের ক্ষেত্রে পঁচিশের নিচে করতাম। কিন্তু হাঁটুর ক্ষেত্রে চল্লিশের নিচে আমরা করি না। সুতরাং বয়স একটা বড় কারণ।
প্রশ্ন: যখন সার্জারি করছেন আপনারা তার পরে পরামর্শ কী থাকে?
উত্তর: যে প্রথম জিনিসটি তাকে উপদেশ দিই, যে তার জীবনযাপনটা কীভাবে হবে। সে কীভাবে বসবে, কীভাবে চলবে, খেলাধুলা সে করবে কি না। পাশাপাশি তাকে কিছু ব্যায়াম করতে হবে। পৃষ্ঠদেশের বেলাও যে পেশি শক্ত করার যে ব্যায়াম সেটা করতে হবে।
প্রশ্ন : প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে একটু বলুন।
উত্তর : প্রতিস্থাপনের সার্জারিতে কেস নির্বাচন করে আমরা অস্ত্রোপচার কক্ষকে জীবাণুমুক্ত করে নিই। এরপর রোগীকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে আমরা ওটিতে নিই। ওটিতে নেওয়ার পর অবস্থানে নেই। এরপর আমরা যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে সেই যন্ত্রকে প্রতিস্থাপন করি।
পৃষ্ঠদেশের বেলাতেও দুটো পর্যায় আছে। হাঁটুর বেলাতেও দুটো পর্যায় আছে। চারটা পর্যায়ে এই অস্ত্রোপচার করি।
প্রশ্ন : পুরো অস্ত্রোপচার করতে সাধারণত কত সময় লাগে?
উত্তর : সাধারণত আমাদের এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। অনেক অস্ত্রোপচার করার কারণে আমরা এখন অনেক পরিপক্ব ও তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার করতে পারি।
প্রশ্ন: আমি অনেক ক্ষেত্রেই দেখি আমাদের দেশে পৃষ্ঠদেশ এবং হাঁটুর সার্জারির জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার একটি প্রবণতা থাকে। একজন সার্জন হিসেবে রোগীদের প্রতি এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, একসময় দেশের বাইরে গিয়ে মানুষ অস্ত্রোপচার করত। কিন্তু এখন বাংলাদেশে অনেক প্রতিস্থাপক সার্জন রয়েছে। তারা খুব ভালোভাবেই অস্ত্রোপচার করছে। আমার মনে হয় বিদেশ যাওয়ার আগে বাংলাদেশের বর্তমানের সার্জারি অবস্থাটা যাচাই করে দেখেন। তা ছাড়া এখন বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রতিস্থাপন হয়।
প্রশ্ন: কোন কোন জায়গায় এই সুবিধাটা পাওয়া যাচ্ছে?
উত্তর : সেটা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পাওয়া যায়। গরীবদের জন্য যেমন নিটোরে (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) বা ঢাকা মেডিকেল কলেজেও আজকাল প্রতিস্থাপন সার্জারি হচ্ছে। বেসরকারি অনেক জায়গায় এখন প্রতিস্থাপন সার্জারি হচ্ছে। সবচেয়ে জরুরি হলো এখানে ব্যয় অনেক কম। বাংলাদেশে এই সার্জারিটা সম্পন্ন করলে ব্যয় অনেক কম।
সবচেয়ে সুবিধা হলো প্রতিস্থাপনের যেই যন্ত্র বিদেশে ব্যবহার করছে সেই একই যন্ত্র আমরা এখানে ব্যবহার করছি। আমরা যেই প্রতিস্থাপকটি ব্যবহার করি এটা যুক্তরাষ্টের।
প্রশ্ন : সার্জারির পর ফলোআপের জন্য কতদিন পর আসতে বলেন এবং কতদিন ধরে ফলোআপ চলে?
উত্তর: প্রথমত আমরা যে ক্ষতর যত্নটা করি, নিরাময় হওয়ার পর তার পেশির শক্তিকে বাড়ানোর জন্য বলি। তার হাঁটা বসা, শেষ পর্যন্ত তার জীবনযাপনকে পরিবর্তনের জন্য বলি।
প্রশ্ন : অস্ত্রোপচারের পর রোগীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে কতদিন সময় লাগে?
উত্তর : প্রতিস্থাপন সার্জারির আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে তার বেশি দেন সময় লাগে না। দুই সপ্তাহ সেলাই কাটার পরে আরো দুই সপ্তাহ যদি সে সঠিক পুনর্বাসন করে, এক মাস পরেই সে ঠিক হয়ে যায়।
প্রশ্ন: এই পুনর্বাসনের মধ্যে কোন কোন বিষয়গুলো পড়ে?
উত্তর: মাসল রিবিল্ডিং এক্সারসাইজ, হাঁটাচলা। কিছুটা ব্যথা তো থাকে, সেটা ঠিক হয়ে যায়।
প্রশ্ন: কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
উত্তর : সারা পাচ্ছি মোটামুটি। এই জন্য আজকে সবার কাছে অনুরোধ এই সার্জারির জন্য দেশেই কাজটি করুন। এর জন্য বিদেশে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হয়নি। আমাদের দেশে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে পৃষ্ঠদেশ ও হাঁটুর প্রতিস্থাপন সার্জারি সম্পন্ন হচ্ছে।
শুধু অর্থনৈতিক বিষয়বস্তু এখানে জড়িত নয়। যাওয়া-আসার ঝামেলা বা ভিসা পাওয়ার যে সমস্যাগুলো, এগুলোর প্রয়োজন পড়ে না।