মূত্রথলির টিউমারের চিকিৎসা কী
মূত্রথলির টিউমার একটি জটিল রোগ হলেও দেশেই এর ভালো চিকিৎসা রয়েছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৪২২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন মল্লিক। বর্তমানে তিনি গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের ইউরোলজি বিভাগে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন: আপনি বললেন টিউমারের ক্ষেত্রে ম্যালিগনেন্ট বা ক্যানসারের টিউমারটি বেশি হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসার সুযোগ কী কী আছে।
উত্তর : চিকিৎসার ভালো সুযোগই আছে। আমরা কেটে মূত্রথলির টিউমারকে ফেলে দিই। তবে এখন এটা তেমন হয় না। একটি যন্ত্রের মাধ্যমে যাকে বলে রিসেটোস্কোপ।
প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে যন্ত্র দিয়ে টিভির মধ্যে ভেতরের ছবি দেখে একে রিসেকশন করে দিই। রিসেকশন করে দিয়ে সম্পূর্ণ চেঁছে উঠিয়ে বের করে ফেলি। এরপর বের করে নিয়ে আসি। এরপর পরীক্ষা করতে দিই যে কোন পর্যায়ে এটি রয়েছে। পর্যায় অনুসারে চিকিৎসার ভিন্নতা হয়। তারপরও চিকিৎসার একটি বিষয় থেকে যায়। ফেলে দেওয়ার পরও ১০০ ভাগ এটি আবারও হবে। এই দেখা দেওয়াটা তিন মাস না হয়ে যদি এক বছর হয়, এই এক বছর সে রোগ ফ্রি থাকবে। এই জন্য আমরা মূত্রথলির ভেতরে ওষুধ দিই। যেমন আছে পিটোমাইসিন সি একটি রাসায়নিক। আরেকটি দেওয়া হয় বিসিজি। টিউবার কুলোসিসের জন্য যে বিসিজি দেওয়া হয়, এটি আমরা মূত্রথলির ভেতরে ঢুকিয়ে দিই। দেওয়ার পদ্ধতি আছে। সাধারণ স্যালাইনের মধ্যে বিসিজিটা দিয়ে মূত্রথলির মধ্যে ঢুকিয়ে দিই। এক ঘণ্টা রেখে দিই। এরপর সে প্রস্রাব করে ফেলে দেবে। এভাবে প্রতি সপ্তাহে একবার দিতে হবে। এতে দেখা গেছে পুনরায় হওয়ার বিষয়টা একটু ধীরগতির হয়। কিন্তু আমরা বন্ধ করতে পারি না। আবার হবেই।
আর যদি দেখা যায় পরীক্ষার পর, হিস্টোপ্যাথলজির পর টিউমারটি দেয়ালের ভেতরে ঢুকে গেছে, পেশির দেয়ালের ভেতরে ঢুকে গেছে। অবশ্যই তাকে অন্যভাবে চিকিৎসা দিতে হবে। হয় সম্পূর্ণ মূত্রথলি ফেলে দিতে হবে। ইনটেসটাইন থেকে মূত্রথলি বানাতে হবে। অথবা ইউরেথ্রা ত্বক থেকে বের করে দিতে হবে। সম্পূর্ণ টিউমার ফেলে দিলেও রক্তে থেকে যায়। এরপর তাকে ক্যামোথেরাপি দিতে হবে।
আরেকটি হলো রেডিয়েশন দিয়েও আমরা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। বিভিন্ন পদ্ধতিতে আগাতে হয় এটা চিকিৎসার জন্য।
প্রশ্ন: এই চিকিৎসার উন্নতি কি কম?
উত্তর: আধুনিক চিকিৎসায় আমি বলব না উন্নতি কম। চিকিৎসা আছে অবশ্যই। তবে একটি জিনিস আমাদের মনে রাখতে হবে। চিকিৎসার পর ফলোআপে অবশ্যই থাকতে হবে।
প্রশ্ন: চিকিৎসার পরে তাহলে কী কী করণীয়?
উত্তর: তাকে তিন মাস, ছয় মাস, এক বছর পরপর এসে চেকআপ করতে হবে। আল্ট্রাসনোগ্রাম হোক বা সিটি স্ক্যান হোক বা অন্য পদ্ধতিতে হোক পুনরায় যদি দেখা দেয়, আবার একে চেঁছে ফেলে দিতে হবে। এভাবে সারা জীবন চলতে হবে।
প্রশ্ন: তার জীবনযাত্রায় কি কোনো পরিবর্তন আসবে?
উত্তর: তামাক-সিগারেট এসব জিনিস এড়িয়ে যেতে হবে। যেসব কলকারখানায় কাজ করলে ক্ষতি হয়, এসব জায়গায় কাজ করা বাদ দিতে হবে। তার জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতেই হবে।
প্রশ্ন : ক্যানসারের বিষয় যেহেতু এসেছে কেমোথেরাপির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একটু বলুন।
উত্তর : কেমোথেরাপিতে যে ওষুধগুলো দেওয়া হয়, সেগুলো মূলত ক্যানসার কোষকে মেরে ফেলার জন্য। এই ক্ষেত্রে মূত্রথলির ভেতরে কেমোথেরাপি বা ইমিউনো থেরাপি। বিসিজি যেটা দেওয়া হয় সেটা হলো ইমিউনো থেরাপি। আর এড্রিয়ামাইসিন যেগুলো দেওয়া হয়, এগুলো হলো কেমোথেরাপি। এগুলো মূত্রথলির বেতরে দিয়ে প্রস্রাব করে ফেলে দেবে। সাধারণত অনকোলজিস্টরা কেমোথেরাপি দেন। কতটুকু দিতে হবে এটা অনকোলজিস্টরাই বোঝেন।
সে ক্ষেত্রে প্রথম চিকিৎসা আমাদের কাছে হচ্ছে। পরে অনকোলজিস্টের কাছে পাঠানো হচ্ছে। তবে ফলোআপের জন্য আমাদের কাছে আবার আসতে হবে।
প্রশ্ন: এই টিউমার থেকে মুক্ত থাকার উপায় কী আছে।
উত্তর : কঠিন। তারপরও রাবার কারখানায় কাজ করে যারা, ধূমপায়ী, এরপর ব্যাটারি কারখানায় কাজ করে। এদের পেশাটা পরিবর্তন করে নেওয়া। এটি কঠিন। সে তো রাবারের কারখানাতেই কাজ করবে। এই রাসায়নিক পদার্থই যেহেতু কারণ। তাই এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
প্রশ্ন: বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চিকিৎসার কোনো তারতম্য আছে কি না?
উত্তর : আছে। বহির্বিশ্বে যে নতুন নতুন চিকিৎসা আসছে, সেগুলো কিছুটা আমাদের দেশে আছে। আবার কিছুটা নেই। যেমন রিসেকশন করা, এটা আগে ছিল না। এখন অহরহ সব জায়গায় হচ্ছে। সব ইউরোলজিস্টরা এটা করেন। কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে অহরহ। এটা অনকোলজিস্টরা করেন। অনকোলজিস্টরা সবাই এখন কেমোথেরাপি দেন। মূত্রথলির ভেতরে কেমোথেরাপি দেওয়া বাংলাদেশে এখন সম্ভব।
প্রশ্ন: বহির্বিশ্বে গিয়ে চিকিৎসা করালেও কি আবার হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, আবার হবে। তবে একে ধীরগতির করানো যায়। এক বছর বা তিন বছর ধীর হলো।
প্রশ্ন: এই চিকিৎসার খরচের বিষয়টি একটু বলুন।
উত্তর: হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল বিষয়টি নির্ভর করে। একেক হাসপাতালে একেক ধরনের চার্জ করা হয়। আমি তো গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজে আছি। এখানে রিসেকশন করলে ১০ থেকে ১৫ হাজারে হয়ে যায়। অন্য জায়গায় এটি হয়তো ৫০ হাজারে করা হয়। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল নির্ভর করে। এরপরও সাধ্যের মতো চিকিৎসা আছে। অহরহ চিকিৎসা হচ্ছে।