রোজায় স্বাস্থ্য
রোজায় ইফতার, সেহরিতে অবশ্যই জুস খান!
প্রবাদে বলা হয়—‘যখন আপনি ক্ষুধার্থ, জুস বা রস খান। যখন তৃষ্ণার্ত তখনো রস খান।’ এই একটি বাক্য থেকেই আমরা জুস বা রসের উপকারিতা বুঝতে পারি। সাধারণত যে ফল বা সবজি আমরা কাঁচা খাই, তার রসকেই আমরা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকি।
সবজির রসের মধ্যে গাজর, শসা, টমেটো, বিট, বাঁধাকপির রস অন্যতম। অন্যদিকে ফলের মধ্যে কাঁচা আপেল, আঙুর, তরমুজ, কমলা, আনারস, লেবুর রস আমাদের কাছে জনপ্রিয়। ফলের থেকে সবজির রস স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী। কারণ, ফলের রসে ক্যালরি ও চিনি দুটোর পরিমাণ সবজির থেকে বেশি থাকে। এটি কখনো কখনো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ভূমিকা পালন করে। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য আট আউন্স গ্লাসে দৈনিক তিন বা চার গ্লাস তাজা রস গ্রহণ উপকারী।
ফল ও সবজির রস গ্রহণের উপযুক্ত সময় হলো আহারের ঠিক আগে অথবা দুই আহারের মধ্যবর্তী সময়ে এবং রস গ্রহণের স্বাভাবিক নিয়ম হলো রসের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশ্রিত করে খাওয়া। অনেকে এই পানি মিশ্রিত রসের স্বাদ পছন্দ করেন না। সে ক্ষেত্রে রস খাওয়ার ঠিক আগে সমপরিমাণ পানি গ্রহণ করলে একই রকম উপকারিতা পাওয়া যায়। তাজা রস বিভিন্ন রকম অ্যানজাইম ও ভিটামিনের ধারক। তবে এই রস তৈরি করামাত্র খাওয়া না হলে এর পুষ্টিমান কমে যায়। যেকোনো রস যখন কার্টন, ক্যান অথবা বোতলে সংরক্ষণ করা হয় অথবা উষ্ণ ও শীতল বায়ু দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তখন আর একে তাজা রস হিসেবে গণ্য করা যায় না। তাই রস থেকে সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে বাসায় জুসার ব্যবহার করা উচিত।
রমজানে যেকোনো প্রকার ফল বা সবজির রস গ্রহণ খুবই উপকারী। ইফতারে জুস বা রস গ্রহণ আমাদের দেহকে দ্রুত সতেজ করে। রস থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও অ্যানজাইম আমাদের দেহে দ্রুত কাজ করে। কারণ, এই উপাদানগুলো দেহের অভ্যন্তরে আরো ক্ষুদ্র অংশে বিশ্লিষ্ট হওয়ার প্রয়োজন হয় না। রস গ্রহণের ২০ মিনিটের মধ্যে এর কার্যকারিতা শুরু হয়ে যায়। রস থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন সি ও কে আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে শর্করাজাতীয় খাদ্য খাওয়ার সার্বিক মাত্রা কমে যায় বলে ওজন কমায়ও রসজাতীয় খাবারের বিশেষ ভূমিকা আছে। তবে এ ক্ষেত্রে সবজির রসের উপকারিতা ফলের রসের চেয়ে বেশি।
ফল ও সবজির তাজা রস দ্রুত ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে দেহে শক্তি বাড়ায়। তাই রমজানে যেকোনো প্রকার রস গ্রহণ আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
এবার আমরা সচরাচর যে ফলের রসগুলো খাই, সেগুলোর উপকারিতা সম্পর্কে খানিকটা আলোচনা করছি :
তরমুজের রস : দেহে পানির ঘাটতি পূরণ করার মাত্রা ৯২ ভাগ। এর মূল উপাদান পানি ও চিনি। এ ছাড়া আরো রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম। এরা একযোগে দেহে পানিশূন্যতা রোধে কাজ করে।
কমলার রস : দেহে পানির ঘাটতি পূরণের মাত্রা ৮৭ ভাগ। এটি স্বাদে মিষ্টি এবং দৈনিক ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণের ক্ষমতা শতভাগের চেয়েও বেশি।
জামের রস : এটি ভিটামিন সি-তে পূর্ণ। জামের রস আমাদের ধমনীগাত্রকে পরিষ্কার রাখে এবং রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক করে।
ডুমুরের রস : রক্তচাপ নিম্ন রাখে। পরিপাক ক্রিয়া উন্নত করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে।
আঙুরের রস : এতে বিদ্যমান উচ্চ মাত্রার রিজভেরাট্রল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা বজায় রাখে।
জাম্বুরার রস : ৯০ ভাগ পানিশূন্যতা রোধ করে। এর লিমোনোইড্স নামক উপাদান দেহের বিষাক্ত উপাদানগুলো দূর করে ক্যানসারের টিউমারকে প্রতিরোধ করে।
ডাবের পানি : পানিশূন্যতা রোধের মাত্রা ৯৫ ভাগ। এতে নিম্ন মাত্রায় সোডিয়াম ও কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। এই রস আমাদের দেহে সতেজ অনুভূতির সৃষ্টি করে।
আমের রস : এই রস ভিটামিন এ, বি৬ ও সি-এর উৎকৃষ্ট উৎস। এ ছাড়া এই রস থেকে খাদ্য আঁশও পাওয়া যায়।
রমজানে আমাদের দেহে পানিশূন্যতা সৃষ্টির যে আশঙ্কা থাকে, তা প্রতিরোধে ফল ও সবজির রসের জুড়ি নেই। তাই সুস্থ শরীরে রোজা পালনের জন্য প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারের খাদ্যতালিকায় কমপক্ষে একটি ফলের রস খাওয়া উচিত।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ।