দুর্ঘটনায় লিগামেন্ট ছেঁড়ার চিকিৎসা কী?
বিভিন্ন দুর্ঘটনায় লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেল আর্থোস্কোপি সার্জারি করা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৩৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. পারভেজ। তিনি ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : আর্থোস্কোপি বিষয়টি আসলে কী?
উত্তর : আর্থোস্কোপি স্পোর্টস মেডিসিনের একটি বিভাগ। এই পদ্ধতিতে হাঁটু বা কাঁধের ফুটো করে ভেতরে চিকিৎসা করা হয়। ক্যামেরার সাহায্যে ভেতরে যদি কোনো লিগামেন্ট বা অন্যান্য মেনিস্কাস, ল্যাবরামে যদি সমস্যা হয় সেগুলোকে চিকিৎসা করা হয়।
প্রশ্ন : আপনি বললেন যে খেলাধুলা যারা করে তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি করা হয়। এ ছাড়া কি আর কারো ক্ষেত্রে বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে?
উত্তর : বাংলাদেশে এখন দেখা যাচ্ছে প্রচুর তরুণ ছেলেরা মোটরসাইকেল চলায়। দেখা যাচ্ছে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণে এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রচুর পরিমাণ তরুণ ছাত্র বা লোকের হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। তাদের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসাটি করা হয়।
প্রশ্ন : আপনারা কীভাবে চিকিৎসা করেন, যারা এই জাতীয় সমস্যা নিয়ে আসে?
উত্তর : সব লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলেই যে আমরা অস্ত্রোপচার করি, তা কিন্তু নয়। প্রথমে পুরোপুরি বুঝি যে লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে তার ভবিষ্যৎ জীবনে কোনো অসুবিধা হবে কি না। তা ছাড়া পঞ্চাশের বেশি বয়সী লোকেদের আমরা কখনো লিগামেন্ট পুনর্গঠন করি না। আর্থোপ্লাস্টি যেমন বয়স্ক লোকদের করি। আর্থোস্কোপি তেমনি তরুণদের ক্ষেত্রে করি। যাদের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় এবং যাদের একটি স্বাস্থ্যকর হাঁটু প্রয়োজন, তাদেরই আমরা লিগামেন্ট পুনর্গঠন করি।
প্রশ্ন : এটি কীভাবে করেন?
উত্তর : আমাদের এখানে যেটা পাওয়া যায় অ্যান্টিরিয়ার কুসার লিগামেন্ট বা এসিঅ্যাল ইনজুরি হয়। আমরা সাধারণত আগের মতো খুলে এই সার্জারি করি না। একে আমরা আর্থোস্কোপিক পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা করি। হাঁটুতে দুটো ফুটো করে একটাতে ছোটো ক্যামেরা ঢুকিয়ে, আরেকটিতে পোর্টাল দিয়ে, লিগামেন্ট পুনর্গঠন করি।
প্রশ্ন : পুরো বিষয়টি করতে কতটুকু সময় লাগে?
উত্তর : পুরো বিষয়টির জন্য দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মতো লাগে।
প্রশ্ন : কত দিন পর্যন্ত হাসপাতালে থাকার দরকার হয়? স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে কত দিন সময় লাগে?
উত্তর : এই সার্জারির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো এখানে হাসপাতালে থাকার বিষয়টি খু্বই কম। দুই থেকে তিনদিন হাসপাতালে থাকলেই এই সার্জারিটা করা যায়। বিদেশেও এই সার্জারি জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হাসপাতালে কম দিন থাকতে হয় বলে।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে অনেকেই আর্থোস্কোপির চিকিৎসা বাইরে চলে যাচ্ছে। সেটি আপনারা কীভাবে দেখেন?
উত্তর : এখন বাংলাদেশে সেই আগের দুর্দিন নেই। এখন বাংলাদেশে অনেক আর্থোস্কোপিক সার্জন তৈরি হচ্ছে। তারা বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিশেষত কোরিয়া, ভারত, এমনকি অনেকে ফ্রান্স থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে আর্থোস্কোপিক সার্জারি করছে। খুব কৃতিত্বের সাথে এই সার্জারিটা করা হচ্ছে। সফলভাবে হচ্ছে।
প্রশ্ন : কোথায় গেলে এই সুবিধাটা পাওয়া যাবে?
উত্তর : অর্থোপেডিক সার্জনরা প্রথমে নির্ণয় করে যে লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে কি না। এটা নিশ্চিত করে অনেক সময় এমআরআই দিয়ে। ছিঁড়ে যাওয়ার পর যখন রোগী একটু অসুবিধা বোধ করে, তখন তারা আবার স্পোর্টস ইনজুরি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখন যদি বুঝেশুনে সে প্রয়োজন মনে করে যে তার সার্জারিটা প্রয়োজন, তখনই সে অস্ত্রোপচারটা করে।
প্রশ্ন : অস্ত্রোপচারের পরপর আপনাদের পরামর্শ কী থাকে রোগীদের প্রতি?
উত্তর : যেকোনো জয়েন্টের অস্ত্রোপচারের পরে একটি পুনর্বাসন ব্যবস্থা থাকে। প্রথম দিন কী করবে, দ্বিতীয় দিনে কী করবে—এগুলো বলা থাকে।
প্রশ্ন : এই পুনর্বাসনের ব্যবস্থাটি কখন থেকে শুরু হয়?
উত্তর : অস্ত্রোপচারের পরের দিন থেকে পুনর্বাসনের কার্যপ্রণালি শুরু হচ্ছে। প্রথমে আস্তে আস্তে ব্যায়াম। এর পর যত দিন যাবে ব্যায়ামের মাত্রাও বাড়তে থাকবে।
প্রশ্ন : কতদিন পর্যন্ত এই ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে?
উত্তর : প্রায় দেড় মাস থেকে তিন মাস ব্যায়াম করতে হয়। দেখা যায় সার্জারির সাফল্য আসে যখন রোগী পুরোপুরি ব্যায়াম করে।
প্রশ্ন : ফলোআপ কতদিন পরপর করেন এবং ফলোআপে আপনারা কী করেন?
উত্তর : ফলোআপে সাধারণত আমাদের যদি হাঁটুতে আর্থোস্কোপি করি, হাঁটুর আশপাশে বা পেশিগুলোতে আগের মতো শক্তি ফিরে আসছে কি না সেটি খতিয়ে দেখি। যদি শক্তি ফিরে না আসে, তাহলে কিছুটা হাঁটুর যন্ত্রণা থেকে যায়। আর অনেক সময় কিছু রোগীর কিছু সংক্রমণ হতে পারে। সেটা দেখার জন্য আমরা সিবিসি বা সিআরপি এগুলো দেখি।
প্রশ্ন : কোনো পরামর্শ কী থাকে রোগীদের জন্য?
উত্তর : রোগীর জন্য পরামর্শ থাকে সে যেন তার জীবনযাপনে ফিরে আসার জন্য পুনর্বাসনটা করে। এরপর তিন মাস খেলাধুলা না করে পরে যেন আস্তে আস্তে খেলায় ফিরে আসে।
প্রশ্ন : ব্যায়ামের বাইরে অন্য কোনো ওষুধের দরকার আছে কি?
উত্তর : ছোটো হলেও একটা ক্ষত তো হয়ই, তাকে খুব কম সময়ের জন্য আমরা অ্যান্টিবায়োটিক দেই।
প্রশ্ন : আর্থোস্কোপি করার প্রয়োজন যাতে না হয় সেজন্য কী জাতীয় প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?
উত্তর : অনেকেই খেলাধুলাতে অংশগ্রহণ করে, ওয়ার্মআপ বা পুরোপুরি শারীরিক প্রস্তুতি ছাড়া। এমন অনেক রোগী আছে যারা একদিন খেলতে যায়। হঠাৎ একদিন ব্যায়াম ছাড়াই খেলতে গিয়ে তারা এ ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। তাই খেলার আগে তাদের শারীরিক প্রস্তুতিটা যদি ঠিকমতো হয়, তাহলে লিগামেন্টের ইনজুরি কম হয়।
প্রশ্ন : খাবার-দাবারের কি এই ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রয়েছে?
উত্তর : তেমন নেই। এটি তো এক ধরনের দুর্ঘটনা। এর সাথে খাবার-দাবারের খুব একটা ভূমিকা নেই।