তারুণ্য ধরে রাখতে চান?
চিরতরুণ থাকতে চান অনেকেই। তবে তারুণ্য ধরে রাখা এত সহজ নয়। এর জন্য জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন তো আনতেই হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৪৪৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. সরকার মাহবুব আহম্মেদ শামীম। বর্তমানে তিনি লেজার ট্রিটের প্রধান পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : অ্যান্টিএইজিং মানে কী? বয়সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ?
উত্তর : ঠিকই বলেছেন আপনি, বয়সের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ। যুগ যুগ ধরে হয়ে এসেছে। শত বছর ধরে, হাজার হাজার বয়স ধরে মানুষ তরুণ থাকতে চায়। এটিই মানুষের চিরন্তন চাহিদা। আমরা মনে এবং শরীরে কখনো বৃদ্ধ হতে চাই না। তাই সে ধারণা থেকে মনে ও শরীরে যেন তরুণ থাকতে পারি, অন্তত আধুনিক বিশ্বে যেটি বলা হয়, অন্তত এখন থেকে ১০ বছরের তরুণ দেখানো, সেটি চাই। আমার যদি ৫০ থাকে, আমি যেন ৪০-এর মতো থাকতে পারি। মনে হয়তো তরুণ থাকি, তবে শারীরিক দিক থেকে যেন আমরা তরুণ থাকতে পারি না সবকিছু মিলিয়ে। কারণ, আপনি জানেন যে বয়স হতে থাকলে প্রথম ছাপটা পড়ে চেহারার ওপরে, এর পরে অন্যান্য অঙ্গে।
প্রশ্ন : সাধারণত কী ধরনের ছাপ পড়ে তার মুখে?
উত্তর : এটা আসলে নির্ভর করে তার জীবনযাপনের ওপরেও। কারণ, এ ক্ষেত্রে বয়সটা যত ক্ষতি না করে, এর চেয়ে বেশি ক্ষতি করে সূর্যের আলো, আলট্রাভায়োলেট রশ্মি। যে আলট্রাভায়োলেট রশ্মির সংস্পর্শে বেশি আসে, সে বুড়ো হবে তাড়াতাড়ি। এর মধ্যে আমাদের কিছু বলিরেখা পড়ে। ২০/২১ বছরে যেমন মসৃণ পেলব বিষয় থাকে, সেটা আস্তে আস্তে করে দেখা যায়, চামড়ার ওপরে লেয়ার যেটি এর মধ্যে সূক্ষ্ম কিছু ভাঁজ পড়ে। আস্তে আস্তে মুখের যে বিভিন্ন ভাঁজ আছে। চোখের কোণে ভাঁজ পড়তে থাকে। কাকের পায়ের মতো হতে থাকে। কপালে ভাঁজ পড়তে থাকে। বয়স যখন ৪০ পার হতে থাকে, আমরা পুরুত্ব হারাতে থাকি। চোখের নিচ দেবে যাচ্ছে, গাল দেবে যাচ্ছে। এই জিনিসগুলো হয়, চুল পাতলা হতে থাকে; সাদা হতে থাকে। ত্বকের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হারও ক্ষয় হতে থাকে। আস্তে আস্তে মুখের আকারও অন্য রকম হতে থাকে। ত্বক অনেক সময় ঝুলে পড়ে। থুতনির নিচে চর্বি জমে আছে। এই জিনিসগুলোর সঙ্গে প্রতিরোধের জন্য যে বিশাল একটি বিষয় তৈরি হয়েছে, একে বলে অ্যান্টিএইজিং মেডিসিন।
প্রশ্ন : এসব সমস্যা নিয়ে কেউ এলে যদি আগের চেহারা ফিরে পেতে চান, তাহলে কী করণীয়?
উত্তর : আসলে আগের চেহারা কখনোই ফিরে পাওয়া যায় না। কাছাকাছি ফিরে পাওয়া যায়। প্রতিরোধ অনেক জরুরি। যারা আগে থেকে চিকিৎসা শুরু করে, সেটা হয়তো আসবেই না। ধীরে ধীরে আসবে।
প্রথম থেকে যদি আমরা ধরি, ত্বককে যদি আমরা যত্ন নিতে পারি তাহলে ভালো হয়। বলিরেখা ঠিক করতে হলে কিছু বিষয় করতে হয়। সাপের যেমন চামড়া পরিবর্তন হয়, আমাদের চামড়াও পরিবর্তন হয়। আমরা বাইরের যে অংশটা দেখতে পাই, এটা আসলে মরা চামড়ার স্তর। একে নিয়মিত যত্ন নেওয়া জরুরি। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য, যে অঞ্চলে বাস করি, সেখানে দূষণ বেশি। আর বাইরে যদি আমরা কাজ করি, রান্না করি, সেখান থেকে ধুলাবালি এসে ত্বক খারাপ হয়ে যায়। আমরা তাই যে পরামর্শ দিই, মাসে এক বা দুবার হলেও পিল অফ করা প্রয়োজন। এর জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে সহজ হলো মাইক্রোডার্মাএব্রেশন। আমরা ডায়মন্ড মাইক্রোডার্মাএব্রেশন করি। এ ছাড়া কিছু পিলিং উপাদান আছে। যেমন ফ্রুট এক্সট্রাক্ট আছে, আরো কিছু বিষয় আছে। এগুলো বলিরেখা কমাতে পারবে। এতে ত্বকের বাইরের অংশের একটি যত্ন নিলাম। এখন যে আধুনিক হাইড্রাফেশিয়াল এসেছে, এটিও আমরা মাসে একবার করতে পারি।
এর পরে কোর্স রিংকেলস। এর জন্য সবচেয়ে বেশি চালু হলো বোটক্স। বোটক্স হলো এক ধরনের টক্সিন, এটি আমরা পেশির মধ্যে ইনজেক্ট করে দিই। দিলে ত্বকটা টানটান থাকে। পেশি যখন শিথিল থাকে, এর ওপরের চামড়াও শিথিল থাকে। তাই সেদিক থেকে বোটক্সটা বিশ্বে অনেক জনপ্রিয়। এটা করলে আমাদের যাদের বাদামি ত্বক, তাদের ছয় মাস পর্যন্ত টিকতে পারে বিষয়টি। যদি গাল দেবে যায়, কানের পাশ দেবে যায়, চোখের নিচ দেবে যায়, তখন এসব জায়গায় ফিলিং ম্যাটেরিয়াল দিয়ে পূর্ণ করি। সেগুলো চামড়ার মধ্যে যে গঠন আছে, সেগুলো দিয়ে তৈরি। এখন সবচেয়ে বেশি চালু হলো হেলোরিক এসিড ফিলার। এটা দিলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। ফিলারের ব্যবহার অ্যান্টিএইজিংয়ের ক্ষেত্রে মুড়ি-মুড়কির মতো। সবাই চায় এটা। আমরা খুব উন্নত ব্র্যান্ডের জিনিস ব্যবহার করি।
এর পরেও যদি মনে হয় কিছু কিছু জায়গায় ঝুলে আসে, তাহলে থ্রেড লিফটিং করি। অনেক বেশি জনপ্রিয় এটি।
এর বাইরেও আমরা অনেক কিছু কাজ করি। যেমন পিআরপি বলে একটি বিষয় রয়েছে, সেটি করি। চুল ও মুখের ক্ষেত্রে এটি খুব জনপ্রিয়। আপনার শরীরের রক্ত নিয়ে আমরা একে প্রক্রিয়াজাত করব, এ সময় আমরা লোহিত কণিকা আলাদা করে ফেলব, প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা আলাদা করে ফেলব, ডব্লিউবিসি আলাদা করে ফেলব। একটা প্লাটিলেট পুওর প্লাজমা ফেলে দিয়ে প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা যদি আমরা আবার ত্বকের মধ্যে ইনজেক্ট করে দিই, তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : বোটক্স, পিআরপি, ফিলার এই চিকিৎসাগুলো তো ইনজেকশন আকারে দিতে হচ্ছে। এটা ব্যথাদায়ক কি না?
উত্তর : ব্যথাযুক্ত একটু ছিল। তবে আমাদের কিছু সারফেস অ্যানেসথেশিয়া রয়েছে ইউলা বলে, এটা যদি আধা ঘণ্টা আগে দিয়ে দিই, তাহলে খুব বেশি ব্যথা পাওয়া যায় না। তা ছাড়া কিছু ফ্রিজিং পদ্ধতি আছে আমাদের, সেটি করে চিকিৎসা করি। এর পর যদি কারো খুব বেশি ব্যথা লাগে, তাহলে লোকাল অ্যানেসথেশিয়া ইনজেকশন দিই। তবে অনেক সময় এগুলো লাগে না।
আমি যেটা নিয়ে কথা বলছিলাম পিআরপি, এটা খুবই কার্যকর জিনিস।