কীভাবে বুঝবেন উচ্চ রক্তচাপের জন্য কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?

উচ্চ রক্তচাপের জন্য কখনো কখনো কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৪৮ তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক শামীম আহম্মেদ। তিনি জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউটের কিডনি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন।
প্রশ্ন: উচ্চ রক্তচাপের সাথে কিডনি রোগের সম্পর্ক কী?
উত্তর: প্রথমে আমি বলতে চাই, যে তিনটি রোগের জন্য আমাদের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এর একটি কারণ হলো ডায়াবেটিস, দ্বিতীয় কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ এবং তৃতীয় হলো নেফ্রাইটিস। কাজেই উচ্চ রক্তচাপে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিডনি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার কিডনি যখন ৮০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে, উচ্চ রক্তচাপ হবেই। কিডনি যখন রেনাল ফেইলিউর হয় তখন ৮০ থেকে ৯০ ভাগ রোগীর উচ্চ রক্তচাপ তৈরি হয়। একটি কারণ, আরেকটি প্রভাব।
এখন দেখা যাক কী অবস্থা আমাদের দেশের। এখানে ১০০ জনের মধ্যে ২০ বা ১৮ জন উচ্চ রক্তচাপের রোগী। এর কী অবস্থা? আসলে ৭০ ভাগ লোক জানেই না যে তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। খুব সহজ জিনিস। উচ্চ রক্তচাপ মাপতে দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগে, আর পয়সাও লাগে না। আমরা জানলাম উচ্চ রক্তচাপ আছে, আমি যে ওষুধ দিলাম সেটাও ৫০ থেকে ৬০ ভাগ লোক খায় না। এর মধ্যে আবার রক্তচাপ কতটুকু রাখা উচিত সেটাও সকলে জানে না। জানলেও দেখা যায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ লোকের সেটা নিয়ন্ত্রণে নেই। তাহলে আপনি দেখেন কয়টি স্তর। এইভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেই।
প্রশ্ন: উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোন কোন লক্ষণ দেখে সেটা বোঝা যায়?
উত্তর: উচ্চ রক্তচাপ কেবল কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না। অন্যতম যে অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো রয়েছে যেমন হার্ট বড় হয়ে যায়, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়, স্ট্রোকের মতো হয়, এরপর কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেয়। উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সামান্য প্রোটিন লিক করতে পারে। তবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ রক্তচাপের জন্য কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না সেটি বুঝতে হলে কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষা করতে হবে। আমার এখানে বলা উচিত, কিডনি দুটো ৮০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। এটি নিরব ঘাতক। উচ্চ রক্তচাপের এক ধরনের উপসর্গ। আর যখন কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় তখন আরেক ধরনের উপসর্গ। উপসর্গ নাও থাকতে পারে।
আর উপসর্গ থাকলে প্রথম হলো দুর্বলতা, ক্লান্তি ও রক্তশূন্যতা। এরপর হলো একটু বমি বমি লাগে, খাওয়াদাওয়ার রুচি আসে না। কোনো কাজই আগ্রহ পায় না। শুধু তাই নয়, কোনো কাজেই ভালোভাবে মনোযোগ দিতে পারেনা। এরপর যেটি হয় বমি। এগুলো থেকে সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপ থেকে হার্টের ওপর প্রভাব ফেলে। তখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং অজ্ঞান হয়ে যায়।
তিনটি কারণে শ্বাসকষ্ট হয়। একটি হলো হাঁপানি, উচ্চ রক্তচাপ থেকে এলবিএল বৃদ্ধি পায়, আরেকটি হলো কিডনি জনিত কারণে যে মেটাবলিক এসিডোসিস হয়, এর জন্য শ্বাসকষ্ট হয়। এই তিনটি কারণে শ্বাসকষ্ট হয়। আসলে যাদের হাঁপানি আছে, তারা জানে যে তাদের হাঁপানি আছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার জন্য শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এটিও জানে। কিন্তু এই যে তৃতীয় শ্বাসকষ্টটি হয়, এটি কিন্তু তারা ধরতে পারে না। তার কিডনি যে ৮০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে সে নিজেই জানে না। এটা শুধু কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষার পরেই ধরা যায়। শ্বাসকষ্ট হওয়া, বমি হওয়া এগুলো জটিলতার বড় লক্ষণ। এই সময় হয়তো তার ডায়ালাইসিস লাগতে পারে। সিকিডির আবার পাঁচটি পর্যায় আছে। যখন ৯০ ভাগ কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, তখন তার প্রতিস্থাপন থেরাপি প্রয়োজন ডায়ালাইসিসের মধ্য দিয়ে। রক্তের ডায়ালাইসিস বা পেটের ডায়ালাইসিস করে তাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে। আমরা ওই পর্যায়ে যেতে চাই না। সেখানে রোগীকে ডায়ালাইসিস করে হয়তো বাঁচাতে পারবো। কিন্তু চিকিৎসাটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল, তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ হবে। ট্রান্সপ্ল্যান্টেও তাই। খরচটা একটু বেশি থাকবে। তবে আমরা সে পর্যন্ত যেতে চাই না।