হাঁটুর অস্টিওআরথ্রাইটিসের চিকিৎসায় কী করবেন?
হাঁটুর অস্টিওআরথ্রাইটিস একটি জটিল সমস্যা। এর বিভিন্ন চিকিৎসা এখন দেশে বেশ ভালোভাবে করা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৫২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মো. জাভেদ রশীদ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : হাঁটুর অস্টিওআরথ্রাইটিসের কী কী চিকিৎসা প্রচলিত আছে?
উত্তর : অস্টিওআরথ্রাইটিসের চিকিৎসাটাও ধাপে ধাপে করা হয়। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা হলো কনজারভেটিভ। মানে অস্ত্রোপচারবিহীন চিকিৎসা। এর মধ্যে যার স্থূলতা আছে তাকে আমরা বলি ওজনটা একটু নিয়ন্ত্রণ করেন। এই জন্য কখনো কখনো ডায়েটেশিয়ানের কাছে যেতে হয়। পাশাপাশি একটু ফিজিওথেরাপি করতে হয়। হাঁটুর মাংসপেশির সামনের যে মাংস আছে একে বলি কডরিসেপ্ট। হাঁটুর ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য ব্যয়াম করতে বলি। হাঁটুর ব্যথা তীব্র হলে ফিজিওথেরাপির আরো কিছু চিকিৎসা দিলে ব্যথার উপশম হয়। প্রথমত, রোগী স্থুলতা নিয়ন্ত্রণ করবেন। নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। আর রোগীকে হাঁটুর প্রতি যত্নশীল হতে হবে। আগে যাই করে থাকুন এই সমস্যাটি ধরার পর হাঁটুর বিষয়ে যত্নশীল হতে হবে। যে কাজ করলে হাঁটুর ওপর মাত্রাতিরিক্ত অনভিপ্রেত চাপ পড়ে, সেগুলো পরিহার করবেন। এই তিনের সমন্বয়ে সাধারণত বেশির ভাগ মানুষ ভালো থাকেন। তবে এটা বাড়তে পারে। একটি পর্যায়ে যদি উনি যত্ন না নেন বা চিকিৎসা কার্যকরী না হয়, তাহলে অনেক বছর পর উনি যখন বার্ধক্যের শেষে তখন উনার হয়তো কখনো কখনো কিছু ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হতে পারে।
প্রশ্ন : সেক্ষেত্রে সার্জিক্যাল ব্যস্থাপনার ক্ষেত্রে আপনারা কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করেন?
উত্তর : সার্জিক্যাল ব্যবস্থাপনা সাধারণত শেষ পর্যায়ে করা হয়। প্রাথমিকভাবে অনেককে আর্থোস্কোপিক ওয়াশআউট করা হয়। আর্থোস্কোপিক্যালই হাঁটুর মধ্যে ছোট ফুঁটো করে ভিতর পর্যবেক্ষণ করে, তার ভেতর অনভিপ্রেত যেসব জিনিস আছে সেগুলো পরিষ্কার করে হাঁটুর প্রদাহ কমানোর একটা ব্যবস্থা করা হয়। এটা কিছুদিনের জন্য রোগীকে ব্যথা থেকে পরিত্রাণ দেয়। আর্থস্কোপিক ওয়াশ আউট করা হয়। এরপর আরো কিছু বিষয় রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে করা হয়। অস্টিওআরথ্রাইটিসে অস্থিসন্ধির যে তরুণাস্থি রয়েছে, সেটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তরুণাস্থির নিচে যে হাড় আছে সেখানে ক্ষয় প্রাপ্তি হয়। সেজন্য কনড্রোসাইট ইমপ্লানটেশন নামে একটি সার্জারির পদ্ধতি আছে, এটা দিয়ে অনেক জায়গায় চিকিৎসা করা হয়। কনড্রোসাইট ট্রান্সপ্লান্ট বলি। নিজের ভালো তরুণাস্থিকে কালচার করে সেটা দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ অংশটি ঠিক করা হয়।
প্রশ্ন : এই চিকিৎসাটি কী আমাদের দেশে হচ্ছে?
উত্তর : কনড্রোসাইট ট্রান্সপ্লানটেশন এখনো আমাদের দেশে হচ্ছে না। আরেকটি ধাপ হলো হাঁটুতে অস্থিসন্ধি প্রতিস্থাপন করা যায়। যে অংশে অস্টিওআরথ্রাইটিসের প্রকোপ সেই অংশ বা পুরো হাঁটুকে প্রতিস্থাপন করা যায়। এটি যারা করতে পারেন না, তাদের জন্য আরেকটি সার্জারি রয়েছে। একে আমরা বলি রিএলাইনমেন্ট অস্টিওটোমি। এগুলো খুব বেশি প্রচলিত হয় না।
প্রশ্ন : এই ব্যথা থেকে দূরে থাকতে করণীয় কী কী?
উত্তর : সাধারণভাবে ওষুধ খেয়ে ভালো হয়ে যাব, এটি তেমন কোনো অসুখ নয়। ওষুধ খেলে ভালো হওয়া সম্ভব নয়। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। যেমন : ওজন নিয়ন্ত্রণ করা। নিয়মিত ব্যায়াম করা। আর হাঁটু যদি আক্রান্ত হয়েই যায়, ব্যথা হয়, তখন হাঁটুর ওপর চাপ কমানো। হয়তো আমার ডান হাঁটুতে ব্যথা, বাম দিকে হাঁটার সময় একটি লাঠি ব্যবহার করতে পারি। যাতে ডান হাঁটুর ওপর চাপ কম পড়ে। হাঁটুতে ব্রেইস ব্যবহার করতে পারি ব্যথার তীব্রতার সময়। তারপর জীবনকে সহনীয় করার জন্য আরো কিছু চিকিৎসা রয়েছে। সেটা হলো হাঁটুতে ইনজেকটেবল চিকিৎসা দিতে পারি। ইনজেকশন সাধারণত ডোজ আকারে দেওয়া যায়। তার সাথে স্টেরয়েড দিতে পারি। তার সাথে লোকাল এনেসথেটিকের মিশ্রণ করে। আবার এর থেকে ভালো হলো হায়লোরোনিক এসিড। এই ইনজেকশন দেওয়া যায়। স্টেরয়েডটা আমি ব্যক্তিগতভাবে দিতে চাই না। কারণ, এটা কেবল অল্প সময়ের জন্য উপকার দেয়। দীর্ঘমেয়াদি হাঁটুর অস্থিসন্ধির ক্ষয়ও করে। এই জন্য আমি কখনো এটা দেই না। তবে রোগীকে যদি হেলোরোনিক ইনজেকশন দেওয়া যায়, তবে উনি দীর্ঘদিন ব্যথা মুক্ত থাকতে পারেন। জীবন যাত্রার মান ভালো হতে পারে।
প্রশ্ন : আপনি অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি বললেন, এগুলোর কতগুলো আমাদের সাধ্যের মধ্যে আছে, একটু বলুন?
উত্তর : প্রায় সবই আমাদের এই দেশে আছে। তবে কনড্রোসাইট ট্রান্সপ্লানটেশনটা এখনো আমাদের দেশে হচ্ছে না। হাঁটুতে হেলোরোনিক ইনজেকশন দেওয়া, হাঁটুতে প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা ইনজেকশন দেওয়া যায়। এটাও আমাদের দেশে চলে এসেছে। অস্থিসন্ধির প্রতিস্থাপন আমাদের দেশে হচ্ছে। আর্থোস্কোপিক ওয়াশ আউট এটাও আমাদের দেশে হচ্ছে। আর অন্যান্য যে কনজারভেটিভ ব্যবস্থাপনার কথা বললাম সবই আমাদের দেশে হচ্ছে।
প্রশ্ন : প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা ইমপ্লানটেশন সম্বন্ধে কী করে থাকেন?
উত্তর : এর মধ্যে স্ট্যামসাল থাকে। অস্থি সন্ধির যে ক্ষয় হচ্ছে, সেখানে গিয়ে ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে অ্যান্টিইনফ্লামেটোরি উপাদান আছে।
প্রশ্ন : কম বয়সে কী এই সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : হ্যাঁ, হতে পারে। হাঁটুতে কোনো আঘাত পেলে অল্প বয়সে অনেক সময় অস্টিওআরথ্রাইটিস হতে পারে।