কিডনির পাথরের চিকিৎসা, প্রতিরোধ
কিডনির পাথর একটি প্রচলিত সমস্যা। এর বেশ ভালো চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৫৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া। বর্তমানে তিনি গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কিডনিতে পাথর কোন অবস্থায় হলে কী কী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন?
উত্তর : ধরুন, আপনার কিডনিতে পাথর আছে। কিডনিতে পাথর আমরা অনেকভাবে চিকিৎসা করি। প্রথম হলো ছোট্ট একটি পাথর আছে নিচের দিকে, এটা কোনো ক্ষতি করছে না। তখন কিন্তু আমরা রোগীকে বলি, এটা এ রকমই থাকুক। কোনো ক্ষতি হবে না। আমরা হয়তো ওষুধ দিয়ে দিই। আবার যদি রেনাল প্যালভিসে হয়, আমরা ওষুধ দিয়ে দিই। এক সেন্টিমিটার ও ১০ মিলিমিটারের যদি কম হয়, দেখা যায় ৫০ ভাগ ক্ষেত্রেই পাথর বেরিয়ে যায়। বেরিয়ে গেলে বিষয়টি এমন নয় যে আপনি অনন্তকাল বসে থাকতে পারবেন। আমরা যদি আপনাকে পানি খেতে বলি, বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে দিই, তাহলেও আপনাকে এক সপ্তাহ পর আসতে হবে। ফলোআপে থাকতে হবে। পরীক্ষা করে আবার দেখতে হবে যে এর অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে কি না।
আর যদি বড় পাথর হয়, আজকাল আমরা ফুটো করে নিয়ে আসি। কাটতেও হয় না। শরীরের পেছন দিক থেকে একটি ফুটো করে বড় বড় পাথর গুঁড়া করে নিয়ে আসতে পারি।
প্রশ্ন : পাথর ভাঙার বিষয়টি কী?
উত্তর : যদি ছোট পাথর হয়, একে আমরা বলি ইএসডব্লিউআর। শকের মাধ্যমে এটা ভেঙে বের করা হয়। আর যদি বড় পাথর হয়, সে ক্ষেত্রে আমরা পাথর ভাঙি। তবে ভাঙার ধরনটা অন্য রকম। এখানে আমরা ছিদ্র করে লেজার আছে বা অন্য পদ্ধতি আছে, সেটা দিয়ে পাথরকে গুঁড়া করি। পাথরের সরাসরি সংস্পর্শে মেশিন যায় এবং পাথর গুঁড়া করে নিয়ে আসে পাথরের আয়তন ছোট করার জন্য। আর ছোট হলে আমরা ফরসেপস দিয়ে ধরে সরাসরি নিয়ে আসতে পারি। ভাঙার উদ্দেশ্য হলো ছোট করা।
তবে যদি ছোট পাথর হয় এক সেন্টিমিটার বা দুই সেন্টিমিটারের নিচে, সে ক্ষেত্রে আমরা শক দিয়ে ভেঙে ফেলি। সে ক্ষেত্রে এটি প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। দর্শকের সুবিধার জন্য বলব, ভাঙা মানে বিভিন্ন রকম ভাঙা রয়েছে। আমরা এখন কিডনির পাথরের পাঁচ রকম চিকিৎসা করি এবং বিভিন্নভাবে ভাঙা হয়। কাজেই যদি পাথর হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই কাজটি করতে হবে।
প্রশ্ন : এই যে পাথর ভেঙে বের করার বিষয়টি, এটা যদি মেশিন দিয়ে বের করার বিষয় না থাকে, প্রস্রাবের সঙ্গে বের করা হয়; এ ক্ষেত্রে একজনের এমন হতে পারে যে তার আবারও ওই সমস্যা হচ্ছে। এটা কেন হয়?
উত্তর : রোগীরা প্রায়ই বলেন, আমি ভাঙব না। কারণ, এতে পাথরটি আবার হয়। আমি একটি কথাই বলব দর্শকের উদ্দেশে, আপনার চিকিৎসা আমি কীভাবে করলাম, এর ওপরে পাথর হবে কি হবে না, সেটা নির্ভর করে না।
আমরা একে বলি সিস্টেমিক রোগ। যদি কারো পাথর হয়, তার আবার পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটা আমি কেটে করলাম, নাকি লেজারের করলাম, নাকি ফুটো করলাম, এর ওপর নির্ভর করে না। জার্নালে দেখা গেছে, ৫০ ভাগ লোকের ক্ষেত্রে আবার পাথর হয়েছে।
সে ক্ষেত্রে আমরা প্রতিরোধের জন্য কিছু নিয়মকানুন বলে দিই। একটা মাত্রা বলে দিই যে আপনি ও রকম পানি খাবেন, কিছু কিছু খাদ্যাভ্যাস আছে, যেমন—লাল মাংস, গরু, খাসি, মগজ, কলিজা, ডাঁটা শাক, পালং শাক, ছোট মাছ, যেগুলো আমরা কাঁটাসহ খাই। এ ধরনের খাবারগুলো আমরা এড়িয়ে যেতে বলি।