বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস
হেপাটাইটিস ছড়ায় কীভাবে?

আজ বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। দিবসটি উপলক্ষে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৫৫তম পর্বে ভাইরাল হেপাটাইটিস বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ফাওয়াজ হোসাইন শুভ। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও হেপাটলজি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : এ বছর এই দিনকে কেন্দ্র করে মূল উপজীব্য বা প্রতিপাদ্য কী?
উত্তর : প্রথমেই আপনাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একজন লিভার বিশেষজ্ঞ হিসেবে আজকে এই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসে আমার সবার কাছে, সব রোগীর কাছে এবং সচেতন মানুষের কাছে একটাই আবেদন, আপনার লিভারকে সুস্থ রাখুন।
আজ বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। আজকের দিনে আমাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, নো হেপ। হেপ মানে হেপাটাইটিস। হেপাটাইটিস কিংবা লিভারের যে প্রদাহ আমরা বলে থাকি, সেই লিভারে প্রদাহ থেকে মুক্তি। অর্থাৎ হেপাটাইটিসকে না বলুন। একে দূর করুন।
প্রশ্ন : একজন মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয় কেন? হেপাটাইটিস রোগটি কেন এত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে যে এটি একটি বিশ্ব দিবস বলে ঘোষিত হলো?
উত্তর : দেখুন, এখন বলা হচ্ছে লিভারের যে সমস্যা হেপাটাইটিস, এটি মৃত্যুর একটি বড় ঝুঁকি। এ কারণে এই হেপাটাইটিস নিয়ে আমাদের মধ্যে এত আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণভাবে লিভারের প্রদাহকে আমরা হেপাটাইটিস বলে থাকি। মূলত ভাইরাসগুলো এই হেপাটাইটিসের কারণ। এ ছাড়া অ্যালকোহল, মাদক ইত্যাদি অনেক কারণ হতে পারে। তবে আমরা মূলত আজকে আলোচনা করতে চাই ভাইরাল হেপাটাইটিস নিয়ে।
প্রশ্ন : ভাইরাল হেপাটাইটিস নামের মধ্যেই আছে ভাইরাস। সাধারণত কোন কোন ভাইরাস হেপাটাইটিসের জন্য দায়ী? এর মধ্যে কোন ভাইরাসগুলো বেশি ক্ষতিকর?
উত্তর : মূলত ছয়টি ভাইরাস ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’ ও ‘ই’। এগুলো মূলত আমাদের হেপাটাইটিসের জন্য দায়ী। এর মধ্যে হেপাটাইটিসকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করি। একটি হলো অ্যাকিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস, দ্বিতীয়টি হলো ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিস। ‘এ’ ও ‘ই’ এ দুটো ভাইরাস মূলত অ্যাকিউট ভাইরাল হেপাটাইটিসের জন্য দায়ী। ‘বি’ ও ‘সি’ এই দুটো হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি এবং ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিস দুটোর জন্য দায়ী। অনেক ক্ষেত্রে ‘ডি’ ভাইরাস, অর্থাৎ ডেল্টা ভাইরাসও অ্যাকিউট এবং ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিস দুটোর জন্য দায়ী।
আপনার কথার সূত্র ধরে আমি বলি, এই ভাইরাল হেপাটাইটিসের মধ্যে ‘এ’ ভাইরাস ও ‘ই’ ভাইরাস সাধারণত আমাদের হেপাটাইটিস করে এবং এ বিষয় থেকে মুক্তিও আছে। ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাসের ক্ষেত্রে আমাদের মূলত একটি জায়গায় গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে লিভার ফেইলিউর করে। এ ছাড়া মোটামুটি ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাসটি অনেকটা নিরাময়যোগ্য। আমাদের মূল দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আসলে ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস। ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস অ্যাকিউট ভাইরাল হেপাটাইটিসও করছে, ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিসও করছে। এরা মূলত দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু রোগ তৈরি করছে। যেমন ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস ফাইব্রোসিস করে। যেটার পরবর্তী ধাপকে সিরোসিস বলে থাকি। এই সিরোসিস থেকে লিভার ক্যানসারও হতে পারে। অবশ্য সিরোসিস ছাড়াও কিন্তু লিভার ক্যানসারও হতে পারে, ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস দিয়ে।
প্রশ্ন : একজন মানুষ এই ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হোন কীভাবে?
উত্তর : ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি মোটামুটি একই রকমের। যেমন আক্রান্ত রোগীর সুই-সিরিঞ্জ কেউ যদি ব্যবহার করে, মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা যে সুই শেয়ার করে থাকে; এর থেকে হতে পারে। অবাধে যৌনাচার একটি কারণ হতে পারে। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে এটা পরিবাহিত হতে পারে নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রে, শেভিং রেজার, ব্রাশ—এগুলোর মাধ্যমে ছড়াতে পারে। দাঁতের চিকিৎসা বা যেকোনো সার্জিক্যাল পদ্ধতিতে পরিশোধিত করা না হয় এমন জিনিস যদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তবে সেই ক্ষেত্রে ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসের আক্রান্ত খুব বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে।
প্রশ্ন : এইচআইভি বা এইডস ছড়ানোর বিষয়ের অনেকটা কাছাকাছি কি বিষয়গুলো?
উত্তর : অনেকটা সে রকমই। তবে এটা আপনি ঠিক বলেছেন, আজকের এই প্রচারমাধ্যমের কারণেই কিন্তু এই ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস সম্বন্ধে আমরা অনেকটা জেনে যাচ্ছি। একজন লিভার বিশেষজ্ঞ হিসেবে আজকে এটা আমার খুব ভালো লাগছে যে আমাদের দেশে বর্তমানে ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসের সবচেয়ে আধুনিকতম চিকিৎসা চলে এসছে।
আপনি শুনলে আশ্চর্য হবেন এই ‘সি’ ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য আমাদের হাসপাতালগুলোতে, এখন বিভিন্ন দেশ থেকেও রোগী আসছে। এর কারণ হচ্ছে ‘সি’ ভাইরাসের সবচেয়ে আধুনিকতম যে চিকিৎসা, সেটি আমরা দিচ্ছি। আমাদের স্থানীয়ভাবেই এই ওষুধগুলো তৈরি হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে খরচ কম। সে জন্য অন্য দেশের রোগীও আসছে। ‘সি’ ভাইরাসের ক্ষেত্রে চারটি জেনোটাইপ আছে। এই জেনোটাইপের ক্ষেত্রে আগে ছিল প্রেগ ইন্টারফেরন। এখন যেটা নতুন এসেছে, ‘সি’ ভাইরাসের ক্ষেত্রে নতুন কিছু ওষুধ এসেছে। পৃথিবীতে আধুনিক যে চিকিৎসা আছে, তার সবই বাংলাদেশে আছে।
প্রশ্ন : হেপাটাটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ছড়ায় কীভাবে?
উত্তর : হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ সাধারণত দূষিত পানির মাধ্যমে আমাদের কাছে ছড়াচ্ছে। কেউ যদি কোনো জায়গায় দূষিত পানি আমরা ব্যবহার করি, এর ফলে মূলত খাবার-দাবারের মাধ্যমে ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস ছড়াচ্ছে। ‘এ’ ভাইরাসটা সাধারণত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশি হচ্ছে। আর ‘ই’ ভাইরাসটা যেকোনো সময় হতে পারে। তবে কম বয়সে এই ভাইরাসগুলো বেশি হয়ে থাকে। এই ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস দিয়ে যদি লিভার আক্রান্ত হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে এটা সাধারণত অ্যাকিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস।