রোগীকে কখন আইসিইউতে নেওয়া প্রয়োজন?
সাধারণত রোগীর জটিল অবস্থা হলে তাঁকে আইসিইউতে রাখতে হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৫৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. মনিরুজ্জামান। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : আইসিইউ নিয়ে অনেক মানুষেরই ভীতি জড়িত যে আইসিইউ মানেই অত্যন্ত জটিল অবস্থা। সেখানে গেলে এই রোগীর সম্পর্কে অনেকেই চিন্তিত হয় যে সে ফিরে আসবে কি না। হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগ থেকে একে একটু ভিন্ন জগৎ মনে করা হয়। একজন মানুষের আইসিইউর সাহায্য কখন ও কেন প্রয়োজন হয়?
উত্তর : আইসিইউ হাসপাতালের একটি অংশ। যে অংশটা খুব জটিল রোগীদের নিয়ে কাজ করে। এখন জটিল রোগী বলতে আমরা কাদের বুঝি? জটিল রোগীর অনেক ভাগ রয়েছে। একিউট ইমার্জেন্সি হয় কিছু। কিছু ডিলে ইমার্জেন্সি হতে পারে। আবার কিছু আমরা জানি যে এই রোগ হয়েছে, এর জটিলতায় আরো কিছু রোগ হতে পারে। এ ধরনের রোগীকে সাধারণত আইসিইউতে নেওয়া হয়। আর রোগ যখন জটিল হয়, তখন আত্মীয়স্বজনের আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক। জটিল হলে রোগী হয়তো মারাও যেতে পারে। তাই আতঙ্কিত হওয়া খুব অযৌক্তিক কিছু নয়।
প্রশ্ন : আপনি যদি আরেকটু বলেন যে একজন মানুষের যে বিষয়, তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদযন্ত্র বা গুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয় কোন কোন পর্যায়ে বা কেমন হলে আপনারা মনে করেন যে রোগীর এখন আইসিইউর সাহায্য দরকার?
উত্তর : আমি তিনটি ভাগ বলেছি—একটি হলো একিউট ইমার্জেন্সি। একজন রোগীর ধরুন খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, সেটা অবশ্যই দ্রুত আইসিইউতে নিতে হবে। আইসিইউতে আমাদের সব রকম সুবিধা থাকতে হয়। শ্বাসকষ্টকে কীভাবে কমানো যায়? লাইফসাপোর্ট দিতে হবে কি না? না দিতে হলেও অন্যভাবে করা যায়। শ্বাসকষ্ট কেন হচ্ছে, একে জানতে হবে। আগে তাকে কী করতে হবে? শ্বাসকষ্টটাকে দূর করতে হবে তো? সেই দূর করার জন্য যা যা বন্দোবস্ত করা দরকার, সেগুলো আইসিওতে আছে। এটি হলো একিউট ইমার্জেন্সি। অথবা কোনো রকমের বুকে ব্যথা হচ্ছে, তার কারণে সে শ্বাস নিতে পারছে না। এগুলো একিউট ইমার্জেন্সি। এগুলো অবশ্যই দ্রুত আইসিউতে নিয়ে যেতে হবে।
আরো কিছু বিষয় আছে, যেগুলো একিউট নয়। সাব-একিউট ইমার্জেন্সি। এখন যেমন ধরেন, কোনো রোগী এলো পেটে ব্যথা নিয়ে, এখন এটা অবস্ট্রাকশন হতে পারে।
পেটে ব্যথা নিয়ে রোগী যখন জরুরি, সেটাও পরামর্শ দেবে চিকিৎসক। এ সময় সার্জন যা যা ব্যবস্থা করার ওখানে করবেন।
আরেকটি হয়তো রোগী এলো শুধু ফ্রাকচার ফিমার নিয়ে। একটি ফিমার ভেঙে গেলে একজন রোগীর সাধারণভাবে দুই থেকে আড়াই লিটার রক্ত বের হয়। তবে রোগী কিন্তু পুরোপুরি সচেতন। রক্তচাপ ঠিক আছে। তবে চিকিৎসক তো জানে, একটি ফ্রাকচার ফিমার হলে দুই থেকে আড়াই লিটার রক্তপাত হয়। এর থেকে বেশি রক্তপাত হয়। ওই রক্তপাত যখন হবে, রোগী শকে চলে যাবে। ওই শককে প্রতিরোধ করার জন্য আইসিইউতে যাওয়ার দরকার রয়েছে। হয়তো ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করার পর তাঁকে স্থানান্তর করা হবে। কখনো সার্জারির পরও যাতে রোগীর জটিলতা না হয়, সে জন্যও দিয়ে থাকেন।
প্রশ্ন : আইসিইউর বেলায় লাইফসাপোর্ট নিয়ে কিছু বলুন। একটি রোগীর লাইফসাপোর্ট লাগবে নাকি লাগবে না, এ বিষয়টি কী?
উত্তর : যদি দুর্ঘটনায় ফিমার ফ্রাকচার হয়, তাহলে লাইফসাপোর্টের প্রয়োজন হবে না। তাকে প্রতিরোধ করার জন্য যা যা ওষুধ দরকার, সেটি আইসিইউতে রাখতে হবে।
দরকার হলে যাতে দেওয়া যায়। রোগীর খুব জটিলতা এড়ানোর জন্য মূলত আইসিইউতে রোগীকে রাখা হচ্ছে। তবে প্রত্যেক রোগীকে যে লাইফসাপোর্ট দিতে হবে, সেটি জরুরি নয়।
লাইফসাপোর্ট মানে কিন্তু শেষ নয়। এটি ভুল ধারণা। লাইফসাপোর্ট হলো একটি চিকিৎসা। লাইফসাপোর্ট দিয়ে রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। অতক্ষণ পর্যন্ত লাইফসাপোর্ট দিয়ে তাঁর অন্য পেরামিটারগুলো, তাঁর অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড এগুলোকে ঠিক রাখার জন্য লাইফসাপোর্ট দেওয়া হয়। তবে কিছু কিছু রোগী আছে, লাইফসাপোর্টে দিলেও ফিরে আসে না।
আমার হাসপাতালে গত ছয় মাসে এক হাজারের মতো রোগী ছিল, এর মধ্যে ৩৫ ভাগ রোগী ছিল লাইফসাপোর্টে। ৩৫০ জন ধরেন। ৩৫০ জনের মধ্যে মাত্র ৫৭ ভাগ রোগী মারা গেছে। বাকিরা ভালো হয়ে চলে গেছে।
প্রশ্ন : অনেক সময় আমরা অভিযোগ শুনি, রোগীর হয়তো লাইফসাপোর্টের দরকার নেই। এর পরও হাসপাতালের আয় বাড়ানোর জন্য লাইফসাপোর্ট দেওয়া হয়। এ রকম অভিযোগ মাঝেমধ্যে আসে। এ বিষয়ে আপনার কোনো মতামত আছে কি?
উত্তর : যুক্তরাষ্ট্রের একটি জার্নালে কিছুদিন আগে একটি প্রতিবেদন এসেছিল, কোনো নিউমোনিয়া রোগীকে যদি আগে লাইফসাপোর্টে রেখে পরে কেবিনে দেওয়া হয়, তাহলে তার বেঁচে থাকার হার বেশি। তাই প্রথম কথা হলো চিকিৎসকের নীতিবান হওয়া উচিত। তাই চিকিৎসকের ওপর আস্থা থাকতে হবে। আমি যদি বলি, তাহলে সেই রোগীকে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণের জন্য রাখতে হবে। আইসিইউতে থাকতে গেলে আপনার খরচ তো একটু বেশি থাকবেই। আমরা মনে হয় না, শুধু খরচ বাড়ানোর জন্য কোনো চিকিৎসক এ রকম অনৈতিক কাজ করবেন। এটি করা উচিতও নয়। আস্থা রাখতে হবে।