গাঁটের চিকিৎসায় আর্থোস্কোপি
আর্থোস্কোপি গাঁটের অস্ত্রোপচারে একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৬০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. হাসান মাসুদ। বর্তমানে তিনি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : আর্থোস্কোপি বিষয়টি একটু বুঝিয়ে বলুন?
উত্তর : আর্থো মানে হচ্ছে জয়েন্ট বা সন্ধি। আর স্কোপি মানে কোনো একটি ক্যামেরা দিয়ে সেটি দেখা। আপনারা তো জানেন যে অনেকদিন আগে থেকে আমাদের দেশে ল্যাপারোস্কোপি পরিচিত। আগে যেমন পিত্তথলি কেটে অস্ত্রোপচার করার বিষয় হতো, এখন আর সেটা হয় না। ফুটো করে সেখানে ক্যামেরা ঢুকিয়ে আমরা দেখি, রোগটি নির্ণয় করি, পিত্তথলি কেটে ফেলি।
সেই রকমই গাঁটের ভেতর আমরা ফুটো করে, ক্যামেরা ঢুকিয়ে মেশিন ঢুকিয়ে যখন আমরা বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি করি, এগুলোকেই বলে আর্থোস্কোপি।
প্রশ্ন : এটা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দুটো কাজেই ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : হ্যাঁ। এটা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা, দুটো বিষয়েই ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন : গাঁটের কী কী রোগ বা কী সমস্যা হলে আর্থোস্কোপির প্রয়োজন হয়?
উত্তর : গাঁটের বিভিন্ন সমস্যার জন্য আমরা আর্থোস্কোপি করে থাকি। সাধারণভাবে বলা যায়, আপনারা প্রায়ই শোনেন খেলাধুলার সময় বিভিন্ন লিগামেন্ট আহত হয়, সেগুলো নির্ণয়ের জন্য আর্থোস্কোপি হলো সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। আমরা ক্যামেরা দিয়ে দেখতে পারি যে কোনো লিগামেন্ট কতটুকু ছিঁড়েছে? সেটার জন্য অস্ত্রোপচার দরকার, না কি কোনো ফিজিওথেরাপিতে সেরে যাবে। এগুলো যেমন আমরা দেখতে পারি, সে রকম বিভিন্ন ধরনের রোগ, যেমন সিস্ট বা অস্টিওআরথ্রাইটিস, যেমন জয়েন্ট ক্ষয় হওয়া, এগুলোর পরবর্তী চিকিৎসা—সবই আমরা আর্থোস্কোপি দিয়ে করতে পারি।
প্রশ্ন : সাধারণত কীভাবে করে থাকেন?
উত্তর : আসলে জয়েন্ট একটি ছোটো জায়গা। তবে আগে জয়েন্ট কেটে যে অস্ত্রোপচার করা হতো, জয়েন্ট শক্ত হয়ে যেত। নড়াচড়া আর আগের মতো করতে পারত না। এখন আর্থোস্কোপির কারণে জয়েন্টের আগের মতো নড়াচড়া করা যায়। এই জন্য যে যন্ত্রগুলো লাগে সেটি হলো লাইট সোর্স যেটা ক্যামেরার সাথে যুক্ত থাকে। এতে আমরা পোর্টাল দিয়ে টিউব ঢুকিয়ে ক্যামেরা ঢুকিয়ে দেই এবং দেখতে পারি যে ওখানে কী ধরনের সমস্যা আছে। সেই সঙ্গে আরেকটি যন্ত্র দিয়ে দেখি সমস্যাটা কতটুকু। সেভার নামে একটি জিনিস আছে, সেটা দিয়ে যদি কোনো মিনিস্কাল ইনজুরি হয় সেটি আমরা সেভ করে দেই। অনেক সময় দেখা যায় ঠিক করা যাচ্ছে, ঠিক করে দেই। প্রায় শুনে থাকেন বিভিন্ন খেলোয়াড়দের এসিএল ইনজুরি হয়। তখন আমরা পুনর্গঠন করি। অন্য জায়গা থেকে টেনডন এনে আমরা ওই জয়েন্টে এটাকে লাগিয়ে দেই, বিভিন্ন স্ক্রুর মাধ্যমে। এটি পরে খুলতে হয় না।
প্রশ্ন : এই যে বলছিলেন টিস্যু ফিট করছেন,স্ক্রু ফিট করছেন। এর কোনোটির জন্য কি খোলার দরকার পড়ছে না?
উত্তর : যখন আমরা টেনডন নিই সেটারও একটি যন্ত্র আছে, যাকে বলে টেনডন স্টুইপার। আগে যেমন আমরা কেটে টেনডন বের করতাম, এই ক্ষেত্রে এটি হয় না। ছোট্ট ফুটো করে সেদিক দিয়ে আমরা টেনডন স্টুইপারটা ঢুকিয়ে দেই। এরপর টেনডন নিয়ে আসি। কাজেই সেখানেও বড় কাটার প্রয়োজন পড়ছে না।
প্রশ্ন : ওখানে যে স্ক্রু ঢুকানো বা সেলাই করার প্রয়োজন হচ্ছে সেটি কী সবই এই যন্ত্র দিয়ে হচ্ছে?
উত্তর : আমরা আর্থোস্কোপি দিয়ে দেখে ওই যে আমরা পোর্টাল বললাম, অর্থাৎ যে ফুটোটা করলাম, এর মধ্যে আমরা সুতো ঢুকিয়ে দিচ্ছি, কিছু জিনিস রয়েছে যার মধ্যে সুঁচ থাকে সেগুলো আমরা সেভাবে দিতে পারি।
আর টেনডন বাইরে থেকে তৈরি করে ফুটোর মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে, স্ক্রুর মাধ্যমে যে ঠিক করেছি, স্ক্রুটাও মনিটরে দেখে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ঠিক করতে পারি।
প্রশ্ন : আর্থোস্কোপির এই পদ্ধতি শুরু হওয়ার আগে, এই জাতীয় সমস্যার চিকিৎসা আপনারা কীভাবে করতেন?
উত্তর : তখন আমরা বড়ভাবে কেটে করতাম। খুলতে হতো, খুললে একটা সমস্যা ছিল যে সংক্রমণের ভয় ছিল। আরেকটি হলো জয়েন্টটা শক্ত হয়ে যেত। দেখা যেত আমরা হয়তো অস্ত্রোপচার করে দিলাম। তবে এই হাঁটুর নড়াচড়া ঠিক না হওয়ার জন্য হয়তো তাকে এই খেলাই ত্যাগ করতে হচ্ছে।
এখন আগেই তার খেলাধুলা শুরু করা, আগেই নড়াচড়া করা-এগুলো আর্থোস্কোপির মাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে।
প্রশ্ন : এগুলো করলে ফাইব্রোসিসের একটি ভয় থাকে, যেটি আপনি বলছিলেন নড়াচড়া বিঘ্নিত হয়। এর ফলাফল কোনটায় কেমন?
উত্তর : যদি খুলে করা হয় সেই ক্ষেত্রে ফাইব্রোসিস অনেক বেশি হয়। আর যদি আর্থোস্কোপিক্যালই করি, না কেটে করি ফুটো দিয়ে আমরা যদি অস্ত্রোপচার করি, তাহলে দেখা যায় যে ফাইব্রোসিস খুব কম হয়। সেই জন্য পরে দেখা যায় যে তার নড়াচড়ায় কোনো সমস্যা হয় না বা তার ব্যথাও অনেক কম থাকে। কিন্তু খুললে সেটাতে ব্যথা অনেক বেশি থাকে।
প্রশ্ন : হাসপাতালে কি বেশি দিন থাকতে হয়?
উত্তর : আগেকার দিনে আমরা যখন খুলে করতাম, দেখা যেত অস্ত্রোপচারের পর দুই থেকে চার দিন থাকা লাগত। কিন্তু এখন দেখা যায় বহির্বিভাগে এসে ভর্তি না করে অস্ত্রোপচার করে চলে যাচ্ছে।