সিওপিডি হলে কী ধরনের সমস্যা হয়

সিওপিডি শ্বাসতন্ত্রের রোগ। ধূমপান এর অন্যতম কারণ। সিওপিডি হলে তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৬৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ইকবাল হাসান মাহমুদ। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিভাগে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : সিওপিডি হলে কী ধরনের সমস্যা হয়।
উত্তর : সিওপিডিতে প্রথম সমস্যা হলো কাশি থাকবে। শ্বাসকষ্টটা প্রচণ্ড আকার ধারণ করবে। কয়েকটি পর্যায় আছে—শূন্য থেকে শুরু করে পাঁচ পর্যন্ত। একটি পর্যায়ে এসে রোগী একেবারে শ্বাসতন্ত্রগতভাবে অসুস্থ হয়ে যায়। সারাক্ষণ বসে থাকে, এমনকি টয়লেটে পর্যন্ত সে যেতে পারে না। সারাক্ষণ সে কাশছে। রোগীকে দেখলে বোঝা যায়, পুষ্টির অভাব রয়েছে। শ্বাসকষ্টের জন্য সে খায় না। একদম শুকিয়ে যাচ্ছে। কাশির সময় কফ বেরিয়ে আসে।
প্রশ্ন: একই সঙ্গে অ্যাজমা ও সিওপিডি হতে পারে কি? একে আলাদা করার উপায় কী?
উত্তর : যার সিওপিডি হয়েছে তার অ্যাজমাও সঙ্গে সঙ্গে থাকতে পারে। এই জন্য একটি নতুন শব্দ বেরিয়েছে অ্যাকোজ। অ্যাকোজ হলো অ্যাজমা সিওপিডি ওভার ল্যাপ সিনড্রম। তার অ্যাজমা আছে, সিওপিডিও আছে। অ্যাজমার অনেকগুলো কারণ আছে । যেমন : অ্যালার্জি একটি বড় কারণ। অ্যালার্জি একটি বড় কারণ। মাইট দিয়ে হতে পারে। অনেকগুলো ঝুঁকি আছে। যেমন : মানসিক একটি বিষয় আছে। ফুলের পরাগরেণু আছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন আছে। বিভিন্ন ওষুধের কারণে অ্যাজমা হতে পারে। অ্যাজমার একটি দিক আছে। আবার সে হয়তো কৈশোর থেকে শুরু করেছে ধূমপান করা। সিওপিডি হয়তো দৃশ্যমান হচ্ছে ৪০ বছরের পরে গিয়ে। দুটো মিলে যখন একটি রোগে দাঁড়ায়, তখন আমরা বলি এই রোগীটির অ্যাকোজ হচ্ছে। একই সঙ্গে সে দুটো রোগ বহন করছে। দুটোতেই কিন্তু প্রধান সমস্যা থাকছে শ্বাসকষ্ট। আর আপনি যে বললেন কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা সন্দেহ করি, যে তার যক্ষ্মা হয়েছে। সিওপিডিতে অনেক সময় যদি কাশির সঙ্গে সংক্রমণ হয়, বেশির ভাগ সিওপিডি এক্সেসারবেশন হয়, অর্থাৎ একিউট চেস্ট বৃদ্ধি পায়। তখন কিন্তু কফগুলো পেকে যায় এবং কাশির সঙ্গে তখনো রক্ত যেতে পারে।
প্রশ্ন : আপনি একবার বলছিলেন সিওপিডিতে একবার ক্ষতি হয়ে গেলে সেটি আর আগের পর্যায়ে ফিরে আসে না। লক্ষণ প্রকাশের আগে এটি ধরাও পড়ে না। তাহলে করণীয় কী?
উত্তর : সে ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই কতগুলো কথা খেয়াল রাখতে হবে। সেটি হলো জিনগত, আচরণগত, পুষ্টিগত। পুষ্টিটা সব সময় একটি মানুষের ঠিক রাখতে হবে। যার যত পুষ্টির মান ভালো আছে, সিওপিডিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তার তত কম। ধূমপান একেবারেই করা যাবে না। ধূমপান যে করছে তাকে বুঝতে হবে একদিন না একদিন সে সিওপিডি অথবা ফুসফুসের ক্যানসারের আক্রান্ত হবে। এটা নির্ভর করছে কত বেশি বা কত দিন ধরে সে সিগারেট খাচ্ছে। এখন যদি সে সিগারেট না খায় প্রথমেই আমরা তাকে এই রোগ থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারব। আমরা চাই না একজন মানুষ সিওপিডিতে আক্রান্ত হোক। ধূমপান তাঁর যদি বন্ধ করি, পুষ্টিমান তার যদি ঠিক করে দিই ভালো হয়। আরেকটি বিষয় কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেমন—জেনেটিক। এক ধরনের এনজাইম আছে এটা কিছু কিছু লোকের ক্ষেত্রে দেখা যায় জন্মগতভাবে বা বংশগতভাবে ঘাটতি থাকছে। তাদের ক্ষেত্রেও দেখা যায় সিগারেট খেলো না, তবে সিওপিডিতে ভুগছে।
প্রশ্ন : ধূমপান করলে ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে। সিওপিডি হতে পারে। অনেকে বলেন ধূমপান করলে কিছু হয় না। এসব চিকিৎসকদের বানানো। এই বিষয়ে আপনার কী মত।
উত্তর : এটা একেবারেই ভুল ধারণা। যত বেশি ধূমপান করছে, যত বেশি দিন ধূমপান করছে, তার একটি না একটি সমস্যার মুখোমুখি হতেই হবে। আমার কাছে যে ফুসফুসের রোগী আসে, সিওপিডির রোগী আসে, হার্টের রোগী বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাই, তাদের যদি জিজ্ঞেস করি আপনি কি ধূমপান করতেন, প্রত্যেকটি লোক একটি উত্তর দেয় যে আমি ধূমপান করতাম। যদি বলি, কেউ কি না করেনি আপনাকে ধূমপান করতে? উত্তরে বলে, বলেছে তবে আমি শুনিনি। তখন বলি এখন তো আর কিছু করার নেই। যা হওয়ার হয়ে গেছে। কারণ, একবার যদি সিওপিডি হয়ে যায়; একে আমরা বলি প্রোগ্রেসিভ ডিজিজ (বৃদ্ধিপ্রাপ্ত রোগ)। কবরের দিকে আস্তে আস্তে যেতে হয়। তারপরও আমরা বলি এখনো সময় আছে ধূমপান ছেড়ে দ্নি। ধূমপান ছেড়ে দিলে এখনো হয়তো আপনি কিছুটা ভালো হতে পারবেন।
ধূমপান এই রোগগুলোকে তৈরিতে ভূমিকা পালন করছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, নিজে তো ধূমপান করবেনই না, ধূমপায়ীর পাশেও বসে থাকবেন না। পরোক্ষ ধূমপানে তার পাঁচ গুণ বেশি ক্ষতি হচ্ছে।