আর্থোস্কোপি কী?
কাঁধের গাঁটে জখমের আধুনিক চিকিৎসা হলো আর্থোস্কোপি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৬৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন। বর্তমানে তিনি বর্ডার গার্ড হাসপাতালের আর্থোস্কোপটিক বিভাগে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : আর্থোস্কোপি যন্ত্রটা কী? এটি দিয়ে কী কাজ করে থাকি।
উত্তর : আর্থাস্কোপি যন্ত্রটি একটি আধুনিক যন্ত্র। এটি হাড় জোড়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। শুধু যে চিকিৎসা সেটি নয়, এটি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়।
আর্থোস্কোপটি ছোট একটি স্কুপ। এটি ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে জোড়ার ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। এই যন্ত্রের সাহায্যে মনিটরের সংযোগ থাকে। সেই মনিটরে দেখে দেখে আমরা রোগ নির্ণয় করি এবং সঙ্গে সঙ্গে রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। এটি এমন একটি যন্ত্র যা দিয়ে না কেটে অস্ত্রোপচার করা হয়। এখানে দুই থেকে তিন মিলিমিটার রক্ত পড়তে পারে। রোগী হাসপাতাল থেকে দ্রুত বাড়ি চলে যেতে পারে। এই চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত রোগীকে হাতের নড়াচড়া করতে সাহায্য করতে পারি, যেন তাড়াতাড়ি সে তার কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারে।
প্রশ্ন : যাদের পেশি আহত হয়েছে বা লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে, আর্থোস্কোপি ব্যবহারের আগে ওই সার্জারিটি কীভাবে করা হতো।
উত্তর : যখন এই আর্থোস্কোপি যন্ত্রটা ছিল না, তখন জোড়াকে এক থেকে তিন বা দুই ইঞ্চি চামড়া কেটে ভেতরে ঢুকাতাম। খুলে ভেতরে গিয়ে আমরা একে সেলাই করতাম।
এতে অনেক রক্ত যেত। রক্ত দেওয়া হতো। অনেকদিনের জন্য হাতকে আটকে দেওয়া হতো। ফিজিওথেরাপি দিয়েও অনেক সময় আগের অবস্থায় নেওয়া সম্ভব হতো না।
এখন না কেটে শুধু ছিদ্রের মাধ্যমে এটি করা হয়।
প্রশ্ন : এতে কি ক্ষতিগ্রস্ত পেশি, লিগামেন্ট ঠিক করে আগের জায়গায় নিয়ে আসা সম্ভব?
উত্তর : আমরা বলি এঙ্কর সোসার। এটি আমরা হাড়ের ভেতর ঢুকিয়ে দিই। ওটার সঙ্গে সুতা লাগানো থাকে। যেখানে ছিঁড়ে গেছে সেখানে ওই সুতা দিয়ে আমরা সেলাই করি।
যেই এঙ্করটি হাড়ের ভেতর ঢোকানো হয়, আজকাল এমন অত্যাধুনিক জিনিস এসেছে যে হাড়ের সঙ্গে মিশে যায়। ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে হাড়ের সঙ্গে মিশে যায়।
প্রশ্ন : আমরা জানি জয়েন্ট ইনজুরির ক্ষেত্রে ফাইব্রোসিস বা নড়াচড়ায় সমস্যা হয় অনেক সময়। এ ক্ষেত্রে আর্থোস্কোপি বা এমনি সার্জারি কোনটার সুবিধা কী?
উত্তর : আমি যেহেতু একজন আর্থোস্কোপিক সার্জন, আমি তো অবশ্যই এই সম্বন্ধে বলব। আর্থোস্কোপিক সার্জারি খুব সহজ। এখানে রোগীকে অল্প সময়ের মধ্যে হাতের নড়াচড়া করতে দেওয়া যাবে। রোগী অল্প সময়ের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। সুতরাং আর্থোস্কোপি সার্জারি খুবই উপকারী সার্জারি। এটা রোগীর জন্য খুবই সুবিধার।
প্রশ্ন : আর্থোস্কোপি সার্জারির পর কতদিন পর রোগী নড়াচড়া শুরু করবে বা ব্যায়াম করবে?
উত্তর : আমরা পোস্ট আর্থোস্কোপিক রিহেবিলিটেশন বলি। আমরা যদি তার একটি লিগামেন্টকে ঠিক করি। লিগামেন্টটি হলো নরম টিস্যু। তাকে হাড়ের সঙ্গে লাগানো হয়।
এটা স্বাভাবিক সিমেন্ট নয় যে সিমেন্ট দিয়ে দেয়াল তোলা হয়। তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় দিতে হবে যাতে এর মধ্যে নরম টিস্যুটি হাড়ের সঙ্গে লেগে যায়।
প্রশ্ন : কারো কারো ক্ষেত্রে জয়েন্ট সার্জারির পরে হালকা ব্যথা বা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হয়। এই ক্ষেত্রে এমন থাকলে এটি দূর করার উপায় কী?
উত্তর : আমরা একজন সার্জন হিসেবে যতই বলি না কেন, যে খুব ভালো সার্জারি হয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে সব সার্জারিতে কিছু জটিলতা থাকে। সেই ক্ষেত্রে আর্থোস্কোপিক সার্জারিতে এক থেকে দুই ভাগ লোক অভিযোগ করে।
প্রশ্ন : তখন কী করণীয়?
উত্তর : সেই ক্ষেত্রে সুপারভাইস বা পুনর্বাসনটি আপনার ঠিকঠাক মতো হয়নি। আর্থোস্কোপিস্টদের তত্ত্বাবধানে আমরা ব্যায়াম করতে বলি।
প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে আবারও সার্জারি করার প্রয়োজন হয় কি?
উত্তর : এই এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেলাই করার যে যন্ত্র এঙ্কর সোসারের নাটে ঝামেলা করতে পারে। কারো ক্ষেত্রে যদি তার হাড়টা খুব নরম থাকে, সেই ক্ষেত্রে এঙ্কর সোসারটি উঠে চলে আসতে পারে। আমি হয়তো বললাম রোগীকে, হাত নাড়াবেন না। দেখা গেল সে দুই সপ্তাহ পর হাত নাড়ানো শুরু করল। তাই ডাক্তারের কথা শুনতে হবে।